নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানোর প্রধান একটি শর্ত হলো, সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। কারণ মাস্ক একদিকে যেমন নিজের সুরক্ষা দেয়, তেমনি একই সঙ্গে অন্যদের সুরক্ষাও নিশ্চিত করে। পৃথিবীর অনেক দেশে ইতোমধ্যেই ভ্যাকসিনের ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। ভ্যাকসিন বিতরণ পরিকল্পনা, সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, এর সংরক্ষণের চ্যালেঞ্জ এসব নিয়ে ইতোমধ্যেই আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন জমে আছে। তারমধ্যে আরেকটি বড় প্রশ্ন, টিকা দেওয়ার পরেও কি ফেস মাস্ক পরে যেতে হবে? এর উত্তরে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, করোনা টিকা না পাওয়া পর্যন্ত অবশ্যই এবং টিকা প্রাপ্তির পরও পরতে হবে মাস্ক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ডিরেক্টর রবার্ট রেডফিল্ড জানান, ভ্যাকসিনের চেয়েও সুরক্ষা বেশি দেয় ফেস মাস্ক। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ রয়েছে। ফেস মাস্কই আমাদের নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সেরা রক্ষণ। দাবি নিয়ে বলছি, মাস্ক আমাকে আপনাকে অনেক বেশি সুরক্ষা দেবে। ভ্যাকসিনের চেয়েও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের এলার্জি ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফাউচি নভেম্বরে সিএনএনকে বলেন, আমি জনগণকে পরামর্শ দেব, শুধু ভ্যাকসিন গ্রহণের কারণে হাত ধোয়া, মাস্ক পরার মতো অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি না মানলে চলবে না।
তার মানে, ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও আপনাকে মাস্ক পরা, ঘন ঘন হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো বিধিগুলো মেনে চলতে হবে। কিন্তু এর কারণ কী? কেন ভ্যাকসিন গ্রহণের পরেও ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে হবে আমাদের?
এর কারণ, অন্য ভ্যাকসিনের মতো কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনও শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারবে না। ফাইজার ও মডার্না থেকে প্রকাশিত একটি ডাটায় বলা হয়, ৯০ শতাংশ কার্যকরী ভ্যাকসিনগুলোও কোভিড-১৯ থেকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারবে না।
আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞ মিশাল টাল বলেন, বহু মানুষের ধারণা, একবার টিকা নিলে আর মাস্ক পরার দরকার হবে না। কিন্তু তাদের জানা দরকার, টিকা নেওয়ার পরেও মাস্ক পরা চালিয়ে যেতে হবে।
গবেষণা বলছে, প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ এই ভাইরাসে কোনো লক্ষণ ছাড়াই আক্রান্ত হচ্ছে। টিকা নেওয়া একজন ব্যক্তি হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়বেন না বা তার কোনো লক্ষণও চোখে পড়বে না; কিন্তু তিনি নিঃশব্দে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন। মাস্ক না পরলে এবং শারীরিক দূরত্ব না মানলে যে এই ঝুঁকির পরিমাণ বেশি, সে কথা বলাই বাহুল্য। সেক্ষেত্রে টিকা না পাওয়া মানুষের জন্য হবে চরম বিপদ।
নিউইয়র্কের বাফালো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ থমাস রুশো বলেন, ‘একজনের কাছ থেকে যেন অন্যজনের মাঝে ভাইরাসটি ছড়াতে না পারে, সেজন্য মাস্ক পরাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সর্বাধিক সুরক্ষার জন্য টিকার দুটি ডোজই নেওয়া উচিত। অনেকেই প্রথম ডোজ নেওয়ার পর দ্বিতীয়টি আর নেন না। অথচ ভ্যাকসিন গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই নয়; বরং দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর থেকেই মানবদেহে করোনা প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হয়,’ বলেন তিনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাস্ক পরা হয়তো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশে পরিণত হবে। আগের মতো আর কোনো দিন হয়তো আমরা মাস্ক না পরে বাইরে নিরাপদে চলাচল করতে পারব না। করোনাভাইরাস আমাদের জীবন থেকে যাচ্ছে না এবং আগামী দিনগুলো করোনাভাইরাস নিয়ে যাপন করতে হবে। তাই সবার মাস্ক পরা আবশ্যক।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮৫৫
আপনার মতামত জানানঃ