সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে স্বামীকে বেঁধে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও এর ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠে দেশ। দাবির মুখে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সম্প্রতি অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর মধ্যেই সেই নোয়াখালীর চাটখিল ও সেনবাগ উপজেলায় দুই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চাটখিলের নোয়াখোলা ইউনিয়নে গতকাল বুধবার ভোর ৫টার দিকে এক প্রবাসীর বসতঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন এক যুবক। এরপর সেখানে প্রবাসীর স্ত্রীকে অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে ধর্ষণ করেন তিনি। ভুক্তভোগী নারীর দুই শিশুসন্তানের সামনে এই বর্বরতা চালানো হয়। এ সময় অভিযুক্ত যুবকের কয়েকজন সশস্ত্র ক্যাডার ঘরের চারপাশে পাহারা দেয়। তাদের ভয়ে ঘরের ভেতর যেতে সাহস পায়নি বাড়ির লোকজন। পরে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।
এমন অভিযোগ এনে চাটখিল থানায় সকালে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারী। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ৮ নম্বর নোয়াখোলা ইউনিয়ন (পশ্চিম) যুবলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান শরীফকে (৩০) দুপুরে স্থানীয় ইয়াছিন হাজির বাজারসংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ খবর পেয়ে উপজেলা যুবলীগ বিকেলে জরুরি সভা ডেকে শরীফকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। শরীফ নোয়াখোলা গ্রামের রফিক উল্যার ছেলে।
আরো চার জেলায় দুই শিশুকে ধর্ষণ ও বলাৎকার এবং দুই শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় গৃহবধূকে ধর্ষণে অভিযুক্ত আলমগীর হোসেন হৃদয়ের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানায়, চাটখিলে অভিযুক্ত শরীফের বিরুদ্ধে থানায় ও আদালতে ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অনেক মামলা থাকলেও রহস্যজনক কারণে তাঁকে এত দিন গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের অভিযোগ হলে উপজেলা যুবলীগের একাংশ তাঁর পক্ষ নিয়ে চাটখিলে মানববন্ধন করে এর প্রতিবাদ জানায়। শরীফ ও তাঁর ‘বাহিনীর’ সদস্যদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে নোয়াখোলা ইউনিয়নসহ চাটখিল দক্ষিণ অঞ্চলের এলাকাবাসী। তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। চাটখিল থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম জানান, শরীফকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় বিভিন্ন অপরাধে আটটি মামলা রয়েছে। তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।
জানতে চাইলে চাটখিল উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও চাটখিল পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ উল্লাহ অভিযুক্ত শরীফকে বহিষ্কারের কথা স্বীকার বলেন, ‘দলে কোনো অনৈতিক নেতার স্থান নেই। আমরাও এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’ চাটখিলের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম জানান, ধর্ষকের কোনো দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না। তিনি এই ভয়াবহ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অভিযুক্তদের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। সেনবাগের ছাতারপাইয়া ইউনিয়নে গত ৯ অক্টোবর এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে তিন যুবককে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন পূর্ব ছাতারপাইয়া এলাকার আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে শুভ (১৯), ছাতারপাইয়া বদর বাড়ির হাসান (১৯) ও আব্দুল হকের ছেলে রকি (২০)। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই ভুক্তভোগী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, ৯ অক্টোবর রাতে গৃহবধূর ঘরে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করেন তাঁর এক চাচাতো দেবর। এ সময় সহযোগীরা ধর্ষণে অভিযুক্তের পাশে গৃহবধূকে বসিয়ে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেন। পরে ইন্টারনেটে ভিডিওটি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে গৃহবধূ ও তাঁর স্বামীর কাছে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন অভিযুক্তরা।
দুই শিশুকে ধর্ষণ ও বলাৎকার : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নে গতকাল সকালে এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক তরুণের (১৬) বিরুদ্ধে। বিষয়টি কাউকে জানালে শিশুটিকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। অসুস্থ শিশুটিকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযুক্ত তরুণের বাড়ি ঝাউডাঙ্গার পাথরঘাটা গ্রামে।
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের মাদরাসায়ে আনোয়ারে মদিনা ফদ্রখলায় প্রতিষ্ঠানটির মুহতামিম (প্রধান শিক্ষক) মাওলানা নোমান কবীরের বিরুদ্ধে ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। জানা গেছে, গতকাল সকালে ফদ্রখলা গ্রামের মুরব্বি শওকত, ছোবান, মর্তুজ আলী চুনারুঘাট উপজেলায় নির্যাতিত ছাত্রের বাড়িতে গিয়ে রফাদফার চেষ্টা চালান। আগামী শুক্রবারের মধ্যে মাদরাসা থেকে মুহতামিমকে বহিষ্কার করা ও উপযুক্ত বিচার পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন। বিষয়টি র্যাব-পুলিশকে জানাতে নিষেধও করেন। নির্যাতিত ছাত্রের বাবা বলেন, শুক্রবারের মধ্যে সমাধান না হলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করবেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে মাদরাসার ছাত্রদের সঙ্গে এমন খারাপ আচরণ করে আসছেন মুহতামিম। কয়েকটি বিষয়ে সালিসে সমাধান করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর এমন আচরণের প্রতিবাদে চারজন শিক্ষক চাকরি ছেড়েছেন।
দুজনকে ধর্ষণচেষ্টা ও নিপীড়ন : নরসিংদীর মনোহরদীতে গত মঙ্গলবার চতুর্থ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার উপজেলার নামা গোতাশিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা দুজনের বিরুদ্ধে মনোহরদী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্তরা হলেন উপজেলার নামা গোতাশিয়া গ্রামের মৃত সোলাইমানের ছেলে শিপন ফরাজী (৪০) ও মজিদ মিয়ার ছেলে সবি (৩০)। তাঁরা পেশায় ডিস ব্যবসায়ী।
শিপন বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। নেত্রকোনার মদন উপজেলায় গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ওই দিন রাতে শিশুটির মা পৌর সদরের বাড়িভাদেরা গ্রামের হাইজুদ্দিনকে (৫৫) আসামি করে মদন থানায় মামলা করেন।
হাতীবান্ধায় শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন : লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নে ডাকালিবান্ধা বাজারে গতকাল দুপুরে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেয়। হাতীবান্ধা থানার ওসি এরশাদুল আলম বলেন, ধর্ষণ মামলাটি গতকাল নথিভুক্ত করা হয়েছে। পলাতক হৃদয়কে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী বলেন, ‘বিষয়টি স্থানীয়রা আপস-মীমাংসার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া বিভিন্নভাবে আমাকে ও পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ।
আপনার মতামত জানানঃ