একসময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বা ডেপুটি গভর্নর হয়েছেন। অবসরে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টসহ (বিআইবিএম) বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আবার কেউ কেউ নিয়োগ পেয়েছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও। অথচ এখনকার এমডিরা বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাড়ি জমান। সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। এদের অনেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে দুদক কর্তৃক মামলা। আজও চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের জনসংযোগ শাখা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
মামলার আসামিরা হলেন— (১) মিসেস জেসমিন রশিদ, নির্বাহী পরিচালক, সচেতন সাহায্য সংস্থা, (২) মিসেস হাসনা হেনা, সভাপতি, সচেতন সাহায্য সংস্থা, (৩) মিসেস নাছরিন আক্তার, সাধারণ সম্পাদক, সচেতন সাহায্য সংস্থা, (৪) শোয়াইব মাহমুদ তুহিন(৪৯), সাবেক ম্যানেজার, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লি., প্রগতি সরণী শাখা, ঢাকা; বর্তমানে ভিপি অ্যান্ড ম্যানেজার, প্রিমিয়ার ব্যাংক লি., নিকুঞ্জ শাখা, খিলক্ষেত, ঢাকা, (৫) শেখ মোহাম্মদ মুনসুরুল করিম, সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লি., প্রগতি সরণী শাখা; বর্তমানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লি., গুলশান-১ শাখা, ঢাকা, (৬) মামুন-উর-রশিদ, সাবেক ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লি., প্রধান কার্যালয়; বর্তমানে ম্যানেজিং ডিরেক্টর, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম; (৭) মো. তারিকুল আজম, এডিশনাল এমডি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লি., প্রধান কার্যালয়, ঢাকা, (৮) মো. আমিনুল ইসলাম, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড হেড অব এআরসিডি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লি., প্রধান কার্যালয়, ঢাকা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিগণ পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে কথিত ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী (এনজিও) প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এসওডি ঋণের নামে ৪ কোটি টাকা প্রদান করেন। পরে অত্র এনজিও কর্তৃক কোন ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ না করে ঋণের অর্থ ডাইভারশানসহ (diversion) ও স্থানান্তরপূর্বক মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে আত্মসাত করেন। যা দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯/৪৭৭ ধারা; ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা তৎসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ৬ জুন সময়ের মধ্যে এ ‘মানিলন্ডারিংয়ের’ ঘটনা ঘটে বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন কীভাবে বড় দান মারা যায়, তারপর বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে পালিয়ে যান বিদেশে। তারা বলেন, দেখা যাবে, প্রতিটা ব্যাংকেরই উচ্চপদস্থদের আর্থিক কেলেঙ্কারি রয়েছে। তবে তাদের সাথে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের যোগসাজশেও এমন আর্থিক কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা ঘটে থাকে। সমাজেও অর্থ আত্মসাৎকারীদের ভালো প্রভাব রয়েছে। তারা বিভিন্ন কৌশলে নিজেদের ইমেজ রক্ষা করে চলেন। বিপুল পরিমাণ টাকা চুরি করে তারা সাধু হয়ে আছেন রাষ্ট্রে। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ধরনটাই এমন হওয়া উচিত যে সমাজে যাতে তারা চোর হিসাবে স্বীকৃত থাকে। বড় দান মেরে টাকা আত্মসাৎ করেও সমাজে তাদের যে গ্রহণযোগ্যতা, এটা ভেঙ্গে ফেলতে হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এতে আত্মসম্মানের ভয়ে হলেও অন্যের টাকা হস্তগত করার বিষয়ে তারা ভাববে বলে মনে করেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬২৭
আপনার মতামত জানানঃ