বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতিতেও সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও গণহত্যা অব্যাহতর রাখায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। বিশেষ করে ইউরোপের যেসব দেশ সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছিল সেসব দেশের ওপর মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপ বজায় ছিল।
এরই মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ইতালি সরকার। দেশটির সরকার জানিয়েছে তারা সৌদি জোটের কাছে নতুন করে অস্ত্র বিক্রির অনুমতি দেবে না। ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ থেকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউরোপের দেশগুলো সৌদি আরব ও তার মিত্রদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে আসছিল। এ ছাড়া সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রেও ওই দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এমনকি করোনা পরিস্থিতিতেও যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় ইয়েমেনে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সেখানে খাদ্য নেই, ওষুধ নেই। এ কারণে ইউরোপের মানবাধিকার সংগঠনগুলো ওই আগ্রাসনে ইউরোপও শরীক হওয়ায় এর সমালোচনা করে আসছিল। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সমসাময়িক দশকে ইয়েমেনে সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে।
ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালি সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের যোগানদাতা। তবে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। ছয় বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও যুদ্ধ এখনো অব্যাহত রয়েছে। তারপরও ইউরোপীয় সরকারগুলো বিশ্বে শান্তি ও মানবাধিকার রক্ষার দাবিদার। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিমালা অনুযায়ী তারা যাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করবে তাদেরকে অবশ্যই মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। তাই আগ্রাসী সৌদি আরবের কাছে তাদের অস্ত্র বিক্রি দ্বিমুখী নীতির পরিচয় বহন করছে বলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীরা এতদিন বলে আসছিল। ব্রিটেনের সংসদ সদস্য যাহরা সুলতানে এ ব্যাপারে বলেছেন, ব্রিটিশ সরকার শান্তির কথা বলে অথচ তারাই ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।
অবশেষে আগ্রাসী সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ইতালি অস্ত্র বিক্রি করবে না বলে যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে ইয়েমেনের জনপ্রিয় হুথি আনসারুল্লাহ আন্দোলন। আনসারুল্লাহ আন্দোলনের মুখপাত্র মোহাম্মদ আব্দুস সালাম টুইটারে দেয়া এক পোস্টে বলেছেন, যেসব দেশ ইয়েমেনের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি না করার ব্যাপারে ইতালি যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে তা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং এটি শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন। এই পদক্ষেপ বেসামরিক জনগণকে রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে ইয়েমেনের রাজনৈতিক উচ্চ পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ আলী আল হুথি বলেছেন, আমিরাত ও সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রিই যথেষ্ট নয় বরং তিন আগ্রাসী দেশ অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও আমিরাতকে অবশ্যই ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার দায় নিতে হবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইতালির অস্ত্র বিক্রি বন্ধের এ সিদ্ধান্ত অবশ্যই ইতিবাচক এবং যুদ্ধ বন্ধে সৌদি আরবের ওপর আরো বেশি আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র : পার্স নিউজ
আপনার মতামত জানানঃ