করোনা মহামারীর ঢেউয়ে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি যখন টালমাটাল অবস্থা, একইসময় সমাজে ধনী-গরিবের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতায় প্রকট হয়েছে ধনবৈষম্য। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় ইতোমধ্যে চাকুরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ। অন্যদিকে ধনকুবের ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির কথা বলে সরকারি সুযোগসুবিধা নিয়ে মহামারিকালেও উচ্চ মুনাফায় ব্যবসা করে উল্লেখযোগ্য ভাবে সম্পদ বৃদ্ধি করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অক্সফামের গবেষণা অনুযায়ী সারা বিশ্বে গত ৯০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ চাকুরি সংকট তৈরি হয়েছে। কয়েক কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারীরা।
গতকাল (২৫ জানুয়ারি) প্রকাশিত ‘দ্য ইনইকুয়ালিটি ভাইরাস’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ‘এই গ্রহের এক হাজার ধনী মানুষ মাত্র নয় মাসের মধ্যেই তাদের করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে। তবে বিশ্বের দরিদ্রতর জনগোষ্ঠীর করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে এক দশকেরও বেশি সময় লাগতে পারে।’
গত বছরের শেষ নয় মাসে এক হাজার ধনকুবেরের আয়-ব্যয় পর্যবেক্ষণ করে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে অক্সফাম। ৮৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আর্থিক বৈষম্য বাড়ার কারণে দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর মহামারী পূর্ব অবস্থায় ফিরতে সৌভাগ্যবান এক হাজার ধনকুবেরের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি সময় লাগতে পারে।
প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে, এশিয়ার ৭১১ জন বিলিয়নিয়ারের সম্পদ গত বছরের মার্চ থেকে দেড় লাখ কোটি ডলার বেড়েছে। যা এই অঞ্চলে করোনার কারণে দরিদ্রতায় ডুবতে বসা ১৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষের প্রত্যেককে নয় হাজার ডলার করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। দরিদ্রতম উপঅঞ্চল দক্ষিণ এশিয়ায় ১০১ জন বিলিয়নিয়ারের সম্পদ বেড়েছে ১৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। যা এই অঞ্চলের দরিদ্রতম নয় কোটি ৩০ লাখ মানুষের প্রত্যেককে এক হাজার ৮০০ ডলার করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
এছাড়াও, পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৬১০ জন বিলিয়নিয়ার মার্চ থেকে তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করতে পেরেছেন এক লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। যা এই অঞ্চলে করোনার কারণে দরিদ্রতায় ডুবতে বসা ছয় কোটি ৪০ লাখ মানুষের প্রত্যেককে ২০ হাজার ডলার করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ৩৫ শতাংশ সম্পদ বেড়েছে ভারতীয় ধনকুবেরদের। সেই সঙ্গে দেশটিতে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ধনবৈষম্য। এ সময়ে ভারতে ৮৪ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে বিভিন্নভাবে। গত বছর এপ্রিলেই দেশটিতে প্রতি ঘণ্টায় কাজ হারিয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। ভারতের এই ১০০ ধনকুবেরের যে পরিমাণ সম্পদ বেড়েছে, তাতে তারা দেশের ১৩ কোটি ৮০ লাখ দরিদ্রের প্রত্যেককে ৯৪ হাজার ৪৫ টাকা করে দান করতে পারতেন।
দারিদ্রতা মেটাতে ২০টি এনজিওর একটি আন্তর্জাতিক কনফেডারেশন অক্সফাম। বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশে তারা কাজ করছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক গ্যাব্রিয়েলা বুচার বলেন, মহামারী শুরুর পর আমরা মানুষের মধ্যে বৈষম্য ব্যাপকভাবে বাড়তে দেখেছি। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে দেখা দেওয়া এই গভীর বিভক্তি ভাইরাসের মতোই প্রাণঘাতী। এমন চাতুর্যের অর্থনীতিতে সম্পদ ধনীদের হাতে চলে যাচ্ছে, যারা মহামারীতেও বিলাসী জীবনযাপন করছেন। অথচ এই সংকটকালে সম্মুখসারিতে থাকা দোকানের সহকারী, স্বাস্থ্যকর্মী, ছোট ব্যবসায়ী টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০ জন ধনীর সম্মিলিত সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছে এক লাখ কোটি ডলার। যা দিয়ে পৃথিবীর সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত করা সম্ভব যেন কাউকে দরিদ্রতার মুখে পড়তে না হয়।
এসডব্লিউ/এমআর/১৯২০
আপনার মতামত জানানঃ