বিএসএফের দাবি, নিহত ব্যক্তি চোরাকারবারী৷ একাধিক স্থানীয় ব্যক্তির দাবি, তিনি গরু খুঁজতে এসেছিলেন৷ তবে পুলিশ এমন দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দিহান৷
ঘটনাটি ঘটেছে ২৮ ফেব্রুয়ারি, সন্ধ্যা সাতটার কিছুটা পরে। পুটিয়াতে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। হঠাৎ গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে পুটিয়া সীমান্তের ৬ ও ৭ নম্বর গেট এলাকা। গ্রামবাসীরা আতঙ্কে বাড়ি থেকে বের হননি। কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর ছড়িয়ে পড়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক আহত হয়েছেন, তাকে বিশালগড় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একজন আহত বিএসএফ জওয়ানকেও ওই একই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে চিকিৎসা শুরু করা হলেও ওই বাংলাদেশি যুবককে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
কাঁটাতার থেকে ৫০ মিটার দূরেই বাস করেন এরশাদ মিয়াঁ৷ তার সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ তিনি মনে করেন, ”ওই বাংলাদেশি তার গরুকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে কাঁটাতারের কাছে চলে এসেছিল। সেই সময় বিএসএফ ওই ব্যক্তির ওপর গুলি চালায়।”
এরশাদ আরো বলেন, ‘‘বিএসএফ এমনই। ওদের যা মনে হয় ওরা করে। এমনকি তারা মাঝেমাঝে গ্রামবাসীদেরও মারধর করে। সেদিন কোনো চোরাচালান হয়নি বলেই আমরা জানি।”
ফতিমা বিবি ও আরেক গ্রামবাসীও একই কথা বলেন ডিডাব্লিউকে৷ তাদের ধারণা, গরু খুঁজতে গিয়ে নিহত বাংলাদেশি ভারতীয় সীমান্তের ভিতরে ঢুকে পড়েছিলেন।
পুটিয়া গ্রাম সংলগ্ন সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া আছে। বেড়ার ওপাশে দেড়শ মিটার দূরে ভারতীয় সীমান্তের পিলার রয়েছে। বাংলাদেশি যুবক সেই পিলার পার হয়ে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে চলে এসেছিলেন।
বিএসএফের দাবি, একদল চোরাচালানকারী বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। বিএসএফের ডিউটি কমান্ড্যান্ট সন্তোষ কুমার সিং ডিডব্লিউকে বলেন, “সেদিন রাতে চোরাচালান হচ্ছিল। প্রায় ১২-১৪ জন বাংলাদেশি চোরাচালানকারী সীমান্তের ১৫০ মিটারের মধ্যে ভারতীয় পিলার পেরিয়ে ঢুকে পড়ে। তাদের ফিরে যাওয়ার জন্য বারবার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। কিন্তু তারা সেই কথায় কর্ণপাত না করে আমাদের জওয়ানদের ওপর আক্রমণ করে।”
তার দাবি, ‘‘বড় বড় পাথর, লাঠি, দা দিয়ে আক্রমণ করা হয়, আহত হন আমাদের এক জওয়ান। তখন আত্মরক্ষার জন্য সেই জওয়ান গুলি চালান। এক বাংলাদেশি গুলিতে আহত হন। বাকিরা পালিয়ে যায়।”
তার দাবি সেদিন চোরাচালানকারীদের কাছ থেকে চাল, গাঁজা এবং কিছু অস্ত্রও উদ্ধার করেছে বিএসএফ, ”সেদিন প্রায় ৩০০ কেজি চাল, প্রায় ১৫ কিলো গাঁজা, একটি দা-সহ বেশ কিছু ধারালো অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে ওই চোরাচালানকারীদের কাছ থেকে। ইতিমধ্যেই তা তুলে দেয়া হয়েছে পুলিশের কাছে। আহত জওয়ানের মাথার সিটি স্ক্যান হয়েছে এবং বর্তমানে তিনি শালবাগানে বিএসএফের হেডকোয়ার্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে। কলমচূড়া থানার তদন্তকারী অফিসার অনিল দেববর্মা রোববার বলেন, ‘‘ওই সময় গরু খুঁজতে এত মানুষ আসবেন তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।” তদন্তের স্বার্থে তিনি এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।
বিএসএফের গুলি চালানো নিয়ে মুখ খুলেছেন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী পুরুষোত্তম রায় বর্মন। তাঁর কথায়, “বিএসএফের গুলি চালানো উচিত হয়নি। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। জেলাশাসকের নেতৃত্বে তদন্ত হওয়া উচিত।”
মাস দুয়েক আগে বিএসএফের রাবার বুলেটে আহত হয়েছিল সোনামুড়া বক্সনগরেরই এক নাবালক। বারবার এমন ঘটনার অভিযোগ ওঠে বিএসএফের বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগে দিল্লিতে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বৈঠকেও এই প্রসঙ্গ উঠেছিল। কিন্তু তারপরেও গুলি চললো।
বিএসএফ সূত্র জানিয়েছে, এই ঘটনার পর গুলি চালানো নিয়ে কড়া নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গুলি শুধুমাত্র হাতের বাইরে চলে যাওয়ার কিছু ঘটনার ক্ষেত্রেই চলতে পারে। তবে তার আগে শুধুমাত্র সতর্ক করেই অপরাধ রুখতে হবে।
ত্রিপুরার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চোরাচালান, অনুপ্রবেশ ও পাচার রুখতে গত ডিসেম্বর মাস থেকেই অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছিল বিএসএফ।। ধরপাকড়ও বেড়েছিল। বিএসএফের দাবি, এইসব কারবারের হটস্পট হলো সোনামুড়া, বক্সনগর এবং কৈলাসহরের মতো এলাকাগুলি। এবার সেখানেই বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু হলো।
আপনার মতামত জানানঃ