জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বগুড়ার সোনাতলা থানা পুলিশের এসআই আলমগীর হোসেনের (৪৩) বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুর্নীতির মামলা করেছে। তার বিরুদ্ধে ৩৯ লাখ ১৩ হাজার ৮৭৭ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরী বাদী হয়ে গতকাল রোববার(২৪ জানু) মামলা করেন।
অভিযুক্ত আলমগীর হোসেন সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার শৌলীসবলা এলাকার মৃত মবজেল হোসেনের ছেলে। তিনি বর্তমানে বগুড়া শহরের লতিফপুর এলাকায় বসবাস করছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আলমগীর ১৯৯৭ সালের ২৪ এপ্রিল ডিএমপির দাঙ্গা দমন বিভাগে কনস্টেবল পদে যোগ দেন। পদোন্নতির পর ২০১৩ সালের ২১ জুলাই তিনি বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় এসআই হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি সেখানেই কর্মরত ছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তিনি বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) এসআই পদে যোগ দেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডিবিতেই কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি সোনাতলা থানায় একই পদে কর্মরত।
জেলা দুদক কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসআই আলমগীর হোসেন ১৯৯৭ সালে কনস্টেবল পদে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন এমন তথ্যের ভিত্তিতে দুদক অনুসন্ধানে নামে। ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য তাকে দুদক থেকে নোটিশ পাঠানো হয়। ২৪ নভেম্বর তিনি নোটিশ গ্রহণ করেন। গত বছরের ১৩ জানুয়ারি তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। সেখানে স্থাবর ও অস্থাবর মিলে ৭২ লাখ ৫১ হাজার ৭৮ টাকার সম্পদ অর্জনের হিসাব দেন।
দুদকে দাখিল করা সম্পদ যাচাই ও অনুসন্ধানে নেমে দেখা যায় যে এসআই আলমগীর ১৯৯৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহে খরচ করেছেন ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা। এতে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৮৪ লাখ ১৬ হাজার ৫৭৮ টাকা। তার বৈধ আয় ৪৫ লাখ ২ হাজার ৭০১ টাকা। জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের পরিমাণ ৩৯ লাখ ১৩ হাজার ৮৭৭ টাকা। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে এসআই আলমগীর দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪–এর ৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
দুদক বগুড়া জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ- সহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরী জানান, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা অনুযায়ী এসআই আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঘুষ বাণিজ্যে পুলিশের ভূমিকা বিষয়ে দেশের প্রতিটা মানুষই জ্ঞাত আছেন। থানা পুলিশ জনগণের টাকায় আইন রক্ষার্থে ও অপরাধ দমনে প্রতিষ্ঠিত হলেও আদতে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়েই পুলিশের কাজ করতে দেখা যায়। মামলার নামে থানাগুলোতে যে ঘুষ বাণিজ্য ঘটে সাধারণ মানুষ এখন টাকার অভাবেও মামলা করতে থানায় যাচ্ছেন না। টাকার প্রসঙ্গ বাদ দিলেও পুলিশের যে হয়রানি ও অসদাচরণ এতে পুলিশের ওপর থেকে জনগণের একরকম বিশ্বাস উঠে গেছে। প্রায় প্রতিটা পুলিশই আয় বহির্ভুত উপার্জন করে থাকেন বলে মত প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, পুলিশের বিরুদ্ধে একেরপর এক বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ ওঠায় পুলিশের ভূমিকা এখন নেতিবাচক চরিত্রে রুপ পেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কিংবা মামলা হলেও যথাযথ ব্যবস্থার অভাবে পার পেয়ে যান বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪৮
আপনার মতামত জানানঃ