বিগত ২০২০ সালে প্রাণঘাতী করোনা মহামারি বিশ্বজুড়েই পণ্যবাজারে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি করে। এতে করে ব্যাপকহারে দরপতন ঘটে বিভিন্ন পণ্যের। চীনা ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। করোনা মহামারীর মধ্যে চাহিদা সংকুচিত হয়ে এলেও কেবল মজুদের উদ্দেশ্যে চীন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, তামা, আকরিক লোহা ও কয়লা আমদানি করেছে।
তবে বছরজুড়ে চীনের বাড়তি পণ্য আমদানি বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের উৎপাদককে যেমন টিকে থাকতে সাহায্য করেছে, তেমনি কিছু পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতেও ভূমিকা রেখেছে। এ তালিকায় যেমন রয়েছে সয়াবিনের মতো কৃষিপণ্য, তেমনি রয়েছে জ্বালানি তেল, কয়লা, তামার মতো জ্বালানি ও ধাতব পণ্য।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলা হয়েছে, এ সময় দেশটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে দৈনিক ১ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলে উন্নীত হয়েছে, যা বিশ্বের দৈনিক চাহিদার ১২ শতাংশ। ২০২০ সালে আগের বছরের তুলনায় ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৬৬ লাখ ৮০ হাজার টন তামা আমদানি হয়েছে চীনে।
একইভাবে গত বছর চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৩০ কোটি ৪০ লাখ টন কয়লা আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। এ সময় চীনে আকরিক লোহা আমদানি ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ১১৭ কোটি টনে উন্নীত হয়েছে। মূলত লকডাউনের শুরুর দিকেই আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে চীনারা আমদানি করা পণ্যের মজুদ গড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতি দুটো বিষয়ের ইঙ্গিত দেয়। প্রথমত, করোনার ধাক্কা সামলে চীনের পণ্যের চাহিদা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। দ্বিতীয়ত, এমন বাড়তি আমদানি ২০২০ সালের শেষের দিকে এসে আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষত বিদায়ী বছরের শেষের দিকে এসে জ্বালানি তেল ও তামার বাজার চাঙ্গা হতে দেখা গেছে।
তাছাড়া মহামারিকালে এই যে বাড়তি পণ্য আমদানি করেছে চীন, এর ফলে চলতি বছর দেশটি আমদানি কমিয়ে দিতে পারে। এমনটা হলে ২০২১ সালে নতুন ঝুঁকিতে পড়তে পারে বৈশ্বিক পণ্যবাজার। কমে যেতে পারে কিছু পণ্যের দাম। তবে এতে বিক্রেতাদের লোকসানে পড়তে হলেও ক্রেতারা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মানিছেন পণ্যবাজার সংশ্লিষ্টরা।
এসব হিসেব কষে বাজার বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, চীনের আমদানি অব্যাহত থাকবে, এমন প্রত্যাশার মধ্যে ঝুঁকি রয়েছে। তাদের ভাষ্য, করোনাকালে অনেক দেশ যেখানে আমদানি কমিয়েছে, চীন হেঁটেছে উল্টো পথে। এর জের ধরে চীনকে নিয়ে ব্যবসায়ীদের উচ্চাশা বেড়েছে। তারা ভাবছেন ২০২১ সালেও দেশটি পণ্য আমদানিতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখবে। বাস্তবে এমনটা নাও হতে পারে।
বিশ্ববাণিজ্যের সাধারণ প্রবণতা হলো, কোনো দেশ এক বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পণ্য আমদানি করলে পরের বছর সেই পণ্যের আমদানি সংকুচিত হয়ে আসে। বাড়তি মজুদ এক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। চলতি বছর চীনের ক্ষেত্রে এ ফ্যাক্টর কাজ করতে পারে। তখন বৈশ্বিক পণ্যবাজার নতুন করে দরপতনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
ইতিমধ্যেই কয়লা, জ্বালানি তেল, তামা, আকরিক লোহা, চীনের বাজারে চারটি পণ্যের আমদানি গত ডিসেম্বরে ১-১৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে এসেছে। এ তথ্য উল্লেখ করে ডাচ বহুজাতিক ব্যাংক আইএনজির পণ্য কৌশল বিভাগের প্রধান ওয়ারেন প্যাটারসন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ২০২০ সাল শেষ হওয়ার আগেই পণ্য আমদানিতে লাগাম টানতে শুরু করেছে চীন। এ প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে বজায় থাকলে বৈশ্বিক পণ্যবাজার নতুন সংকটের মুখোমুখি হতে পারে।
এসডাব্লিউ/এসএন/আরা/১৩১০
আপনার মতামত জানানঃ