ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় বিএসএফের গুলিতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (৫ জুলাই) সকালে উপজেলার নাগরভিটা সীমান্ত পিলার ৩৭৬/৫এস স্থানে এ ঘটনাটি ঘটে।
নিহত রাজু মিয়া (২৭) উপজেলার গড়িয়ালী গ্রামের হবিবর আলীর ছেলে। বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
ওসি বলেন, বাংলাদেশের জগদল ও নাগরভিটা ক্যাম্পের মাঝামাঝি জায়গায় বিএসএফের গুলিতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে। বর্তমানে তার মরদেহ ভারতীয় বিএসএফ এর কাছে রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. তানজীর আহম্মদ বলেন, ‘আমরাও ঘটনাটা শুনেছি। তবে সে বাংলাদেশী নাকি ভারতীয় তা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা পতাকা বৈঠকের জন্য তাদেরকে আহবান করেছি। পতাকা বৈঠকের পরে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত শুধু বিএসএফের সরাসরি গুলিতে নিহত হয়েছে ২২ বাংলাদেশি। আহত হয়েছে ২০ জনের বেশি। গুলি ছাড়াও এ সময়ে সীমান্তে ঘটেছে আরও কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।
বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায়ও দেখা যায়, সীমান্তে হত্যা কখনোই থামেনি। বরং কোনো কোনো বছর এই সংখ্যা ছাড়িয়েছিল চল্লিশের ঘর। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, ২০২২ সালে বিএসএফের গুলি, নির্যাতন ও ধাওয়ায় ২৩ বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। ২০২১ সালে বিএসএফের হাতে গুলিসহ বিভিন্নভাবে হত্যার শিকার হয়েছিল ২০ জন। ২০২০ সালে গুলি ও নির্যাতনে হত্যার ঘটনা ঘটে ৪৮টি। ২০১৯ সালে বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে ৪৬ জন নিহত হয়। ২০১৮ সালে বিএসএফর গুলিতে নিহত হয় ৮ জন এবং নির্যাতনে নিহতের সংখ্যা ছিল ৬ জন। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৪ জন।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মতে, বিএসএফ আত্মরক্ষার জন্য হত্যা করে। কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ‘ট্রিগার হ্যাপি’ নামে এক প্রতিবেদনে সীমান্তে গুলি থেকে বেঁচে যাওয়া এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ ছিল, বিএসএফ তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা না করে বা সতর্ক না করেই নির্বিচারে গুলি চালায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী আত্মরক্ষার প্রয়োজনে প্রথমে সতর্ক করতে ফাঁকা গুলি ছুড়তে হবে। যদি এতে হামলাকারী নিবৃত না হয় এবং জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় সেক্ষেত্রে গুলি ছোড়া যাবে, তবে সেটা হতে হবে অবশ্যই হাঁটুর নিচের অংশে। কিন্তু এসবের কোনো তোয়াক্কাই যেন নেই বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর। ফেলানী হত্যার দৃশ্যই কি মনে করিয়ে দেয় না, বিএসএফ গুলি ছোড়ে স্রেফ হত্যার উদ্দেশ্যেই। বিএসএফ কোনো ক্ষেত্রেই প্রমাণ করতে পারেনি যে, হতাহতের শিকার মানুষগুলোর মাধ্যমে তাদের প্রাণ সংশয় বা গুরুতর আহত হওয়ার ঝুঁকি ছিল।
সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার অন্যতম প্রধান কারণ দেশটির সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ। এ ছাড়াও দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো ঘনবসতিপূর্ণ। এখানকার একশ্রেণির মানুষ কৃষি ও অন্যান্য পেশার পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত গবাদি পশু ও পণ্য পাচারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। এই হত্যার শিকার অধিকাংশই বিভিন্ন চোরাচালান কর্মের সঙ্গে জড়িত বলেই অভিযোগ বিএসএফের। কিন্তু দুই দেশের আইন অনুযায়ী, কেউ সীমান্তে অনুপ্রবেশ করলে, কাঁটাতার কাটলে বা পাচারের চেষ্টা করলে তাদের গ্রেপ্তার করে ওই দেশের আইনানুযায়ী বিচার করতে হবে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই গুলি ছোড়া বা নির্যাতন করা যাবে না।
আপনার মতামত জানানঃ