সমাজমাধ্যম থেকে শুরু করে গবেষণাগার, সর্বত্র এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) রমরমা। এআইয়ের মাধ্যমে যে কোনও কাজ করে ফেলা যায় চোখের নিমেষে।
অত্যাধুনিক এআই অ্যাপ এখন সকলের হাতে হাতে ঘুরছে। ছবি বা ভিডিয়ো তৈরি করা, তাতে কারুকাজ করা আর কঠিন নয়। তার জন্য প্রয়োজন হয় না বিশেষজ্ঞেরও।
এআই প্রযুক্তির মধ্যে ভবিষ্যৎ বেকারত্বের ছায়া দেখতে পান অনেকে। মানুষের কাজ সহজ করে দিয়ে নতুন বিপদ ডেকে এনেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বিভিন্ন সংস্থায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব। ফলে কর্মী ছাঁটাই অনিবার্য।
এআই-এর সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলছেই। এর মাঝে নতুন বিস্ময়ের খোঁজ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁরা তৈরি করে ফেলেছেন ‘মরণ ক্যালকুলেটর’।
কী এই ‘মরণ ক্যালকুলেটর’? এটি এমন এক যন্ত্র, যা মানুষের মৃত্যুর সময় নির্ধারণ করে থাকে। অর্থাৎ, কে কবে মারা যাবেন, তা এই যন্ত্রের মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব।
কথায় বলে, ‘জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে, তিন বিধাতা নিয়ে’। অর্থাৎ, মানুষের জীবনের এই তিন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উপর মানুষের কোনও হাত নেই। উপর থেকে বিধাতাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
এআই সে সব হিসাব গুলিয়ে দিচ্ছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, তাঁদের তৈরি ‘মরণ ক্যালকুলেটর’-এর মাধ্যমে জীবদ্দশাতেই মানুষ জানতে পারবেন, কবে কখন তাঁর মৃত্যু হবে।
ডেনমার্কের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী এআই নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তাঁরাই তৈরি করেছেন ‘ডেথ ক্যালকুলেটর’। বিজ্ঞানীরা এ-ও জানিয়েছেন, কী ভাবে এই যন্ত্র কাজ করবে।
চ্যাটজিপিটি-তে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তা ‘মরণ ক্যালকুলেটর’-এও ব্যবহার করেছেন বিজ্ঞানীরা। যে অ্যালগরিদমে এ ক্ষেত্রে কাজ হচ্ছে, তার নাম লাইফ২ভেক।
এই প্রযুক্তিতে কোনও ব্যক্তির উপার্জন, কাজের ধরন, বাসস্থান, শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একাধিক প্রশ্ন করা হয়। এই ধরনের তথ্যগুলি বিশ্লেষণ করে মৃত্যুর সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ করে প্রযুক্তি।
মৃত্যুদিন নির্ধারণের জন্য জীবনের ঘটনাবলি, ব্যক্তি কোন ভাষায় কথা বলেন ইত্যাদি যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করে এআই যন্ত্র। সব উত্তর ঠিকঠাক দিলেই উত্তর সঠিক আসার সম্ভাবনা থাকে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, এ ক্ষেত্রে ‘মরণ ক্যালকুলেটর’ গণনা করে যে উত্তর বার করে, তা ৭৮ শতাংশ সঠিক। পূর্বাভাস না মেলার সম্ভাবনা থাকে মাত্র ২২ শতাংশ।
‘মরণ ক্যালকুলেটর’ এক দিনে তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে এই যন্ত্র নিয়ে কাজ করেছেন বিজ্ঞানীরা। ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চলেছে যন্ত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
ডেনমার্কের গবেষকদলের দাবি, ওই ১২ বছরে অন্তত ৬০ লক্ষ ডেনমার্কবাসীর উপর যন্ত্রটি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। ফল হয়েছে আশানুরূপ। যা দেখে যন্ত্র নিয়ে উৎসাহ বেড়েছে বিজ্ঞানী মহলে।
কেন দরকারি ‘মরণ ক্যালকুলেটর’? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই যন্ত্র সফল ভাবে মানুষ ব্যবহার করতে পারলে তা অনেক কাজে লাগতে পারে। জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠতে পারে ‘মরণ ক্যালকুলেটর’?
এ প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসাবে জীবন বিমার কথা বলেছেন বিজ্ঞানীরা। ওই প্রকল্পের ক্ষেত্রে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময় আগে থেকে জানা থাকলে উভয় পক্ষেরই সুবিধা হবে বলে দাবি তাঁদের।
মৃত্যু নিশ্চিত। মৃত্যুর ও পারে কী আছে, তা কেউ জানে না। সেই কারণেই আতঙ্কের অন্য নাম মৃত্যু। ‘মরণ ক্যালকুলেটর’ যদি মানুষকে আগে থেকে মৃত্যুর সময় জানিয়ে দিতে পারে, তবে মৃত্যুভয় অনেকটা কম হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
আপনার মতামত জানানঃ