যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো মনে করছে, ইসরায়েলে বড় ধরনের ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলা অত্যাসন্ন। এ ক্ষেত্রে ইসরায়েলের সরকারি ও সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে ইরান। বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র ইসরায়েলি ও মার্কিন গোয়েন্দা মূল্যায়নের ভিত্তিতে জানিয়েছে, ইরান সম্ভাব্য হামলার ক্ষেত্রে উচ্চ নির্ভুল লক্ষ্যমাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। এবং আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই হামলা সংঘটিত হতে পারে।
সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলায় দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) দুই শীর্ষ জেনারেল নিহত হন। সেই ঘটনার পর ইরান ইসরায়েলের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। তারপর থেকেই অঞ্চলটিতে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা দেশটির সরকারকে জানিয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করলেও বেসামরিক স্থাপনায় ইরান হামলা চালাবে না বলেই মনে হয়। এ ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইসরায়েলকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ইসরায়েল তার মিত্র দেশগুলোকে জানিয়েছে, গাজায় আরও একটি বড় ধরনে অভিযান শুরুর আগে তারা ইরানি হামলার অপেক্ষা করছে। তবে ইরানি হামলা বা গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল অভিযান কবে শুরু হবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি।
ইসরায়েলের মিত্র দেশগুলোর গোয়েন্দারা জানিয়েছে, ইসরায়েলে সরাসরি ইরান থেকেই হামলা করা হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং লেবাননে থাকা ইরানের প্রক্সি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও এই হামলা চালাতে পারে। একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মিত্র দেশগুলোর গোয়েন্দা মূল্যায়নকে আমলে নিয়েছে।
এদিকে, ইরানি প্রতিশোধের ভয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ইসরায়েলি দূতাবাসগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এমনকি কয়েকটি দূতাবাসের কার্যক্রম স্থগিতও করা হয়েছে। তবে কোন কোন দেশের দূতাবাস বন্ধ করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি ব্লুমবার্গ।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারাও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিশ্লেষণের সাথে একমত। তারাও অচিরেই হামলার আশঙ্কা করছেন। তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলে হামলা হলে, জায়নবাদী রাষ্ট্র ইরানেও পাল্টা-হামলা চালাবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ইরানি হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তারা জরুরী অবস্থার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। সর্বাত্মক একটি যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে– ইসরায়েল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি জেনারেটর ও স্যাটেলাইট ফোনের মতো সরঞ্জামের জন্য তাঁরা তেল আবিবের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন। তবে পশ্চিমা কোনো দেশের কূটনৈতিক মিশন ইসরায়েল ছাড়ার পরিকল্পনা করছে না বলেই জানান ওই কর্মকর্তারা।
এদিকে ইসরায়েলকে রক্ষায় ‘ইস্পাতদৃঢ়’ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সম্পর্কে করা তাঁর সমালোচনা প্রকাশ্যে আসা সত্ত্বেও বাইডেন এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেছেন, “ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে। কিন্তু, ইরান বা তার প্রক্সি বাহিনীগুলোর যেকোনো হুমকি থেকে ইসরায়েলকে নিরাপদ রাখতে আমাদের যে ইস্পাতদৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে– সেটি আমি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বলেছি।”
“আমি আবারও বলছি, এটি ইস্পাতদৃঢ় (প্রতিশ্রুতি)। ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য আমরা যা যা করা যায়, তার সবই করব”- যোগ করেন তিনি।
আপনার মতামত জানানঃ