ভারতে মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য আগের বছরের তুলনায় ৬২ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়া হেট ল্যাব। এ বিষয়ে গবেষণার জন্য তারা হিন্দুত্ববাদী গ্রুপগুলোর অনলাইন কার্যক্রম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভেরিফায়েড ভিডিও এবং ভারতের সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনগুলো আমলে নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে ওই গবেষণার ফলাফলের ব্যাপারে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ভারতের ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য দেওয়া হয়েছে ৬৬৮ বার। প্রথম ছয় মাসে ২৫৫ বার মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য আসলেও, পরের ছয় মাসে ওই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১৩ তে। হামাস-ইসরায়েল সংঘাত মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য উসকে দিতে পারে বলে মনে করছে ইন্ডিয়া হেট ল্যাব।
গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্যের ৭৫ শতাংশই ঘটেছে শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) অধ্যুষিত মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ এবং মধ্য প্রদেশে।
ইন্ডিয়া হেট ল্যাব জানিয়েছে, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশটিতে মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন বেড়েছে। অবৈধ দখলদারমুক্ত করার নামে মুসলিমদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া, ক্লাশরুমে হিজাব নিষিদ্ধ করা এবং নাগরিকত্ব আইনে মুসলিমদের ব্যাপারে নিবর্তনমূলক ধারা যোগ করাসহ নানান অভিযোগ রয়েছে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালে ভারতে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে মোদির দল বিজেপি’র ফের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে ভারতে মুসলিমদের অবস্থা আরও সঙ্গীন হতে পারে বলে সতর্ক করেছে গবেষণা সংস্থাটি।
প্রসঙ্গত, ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিভিন্ন হয়রানি ও নিপীড়নের খবর পুরনো। গরুর মাংস খাওয়ার অভিযোগ তুলে কিংবা গরু বিক্রির অভিযোগেও গত কয়েক বছর ধরে মুসলিমদের গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা খবর হয়ে আসছে। এবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য স্ক্রল-এর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, দেশটিতে মুসলিম সেজে বা মুসলিম নাম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করার প্রবণতা বেড়েছে।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু ব্যক্তির মধ্যে মুসলিম পরিচয়ে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করতে বা কর্মকাণ্ডে জড়াতে দেখা গেছে। তাদের কেউ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াতে, কেউ আবার জনপ্রিয়তার আশায়, কেউ বা নেহায়েত অর্থের প্রলোভনে এসব কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রদায়িকভাবে অস্থির একটি সমাজে এই ধরনের মামলায় অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তির মুসলিম পরিচয় অপরাধের মাত্রার চেয়ে তীব্রতা ব্যাপকতর হিসেবে হাজির হয়। আর এভাবেই ভারতে ইসলামবিদ্বেষ আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
আপনার মতামত জানানঃ