শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইনের মামলায় অস্বাভাবিক গতিতে বিচার করা হয়েছে। এ নিয়ে সারাবিশ্ব থেকে যে ব্যাপক নিন্দা জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রও তার সঙ্গে আছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শ্রম আইন ব্যবহার করে ড. ইউনূসকে হয়রান ও ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে উদ্বেগ জানায় যুক্তরাষ্ট্রও। এতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারির এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানিয়েছেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। মুশফিক তার কাছে জানতে চান, সোমবারের মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, অজ্ঞাত ২০ জনের একটি গ্রুপ নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের অফিস দখল করতে যায়। আপনি যেমনটা অবগত আছেন যে, বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী একপেশে জাতীয় সংসদ, বিচার বিভাগ, মিডিয়া, দুর্নীতি বিরোধিতাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এখন গ্রামীণের মতো প্রতিষ্ঠানে তাদের চোখ পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি?
মুশফিকের এ প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলার প্রেক্ষিতে আমি বলবো যে- আমরা দেখতে পেয়েছি তার বিরুদ্ধে শ্রম আইনের মামলার বিচার করা হয়েছে অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে। আরও মামলার চার্জশিট অনুমোদন করেছে দুর্নীতি বিরোধী কমিশন।
এসব ঘটনায় সারা বিশ্ব থেকে ব্যাপক নিন্দা জানানো হয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে অভিন্ন উদ্বেগ জানাচ্ছি যে, এসব মামলায় ড. ইউনূসকে হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশের শ্রম আইনের অপব্যবহার করা হতে পারে।
আমরা উদ্বিগ্ন যে, শ্রম আইন এবং দুর্নীতি বিরোধী আইনের অপব্যবহারের ফলে আইনের শাসন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে এবং ভবিষ্যত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ রোধ করতে পারে। যেহেতু আপিল প্রক্রিয়া চলমান তাই বাংলাদেশ সরকারকে আমরা ড. ইউনূসের জন্য সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে উৎসাহিত করি।
এদিকে, শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত দুটি প্রতিষ্ঠানে জোরপূর্বক প্রবেশ করে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন অজ্ঞাতপরিচয় অন্তত ৩০ ব্যক্তি।
সোমবার বিকেলে ঢাকার মিরপুরে টেলিকম ভবনে ড. ইউনূস কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বেরিয়ে যাওয়ার পরই তাঁরা জোর করে প্রবেশ করে গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণ অফিস দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালান।
এই ঘটনায় গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মইনুদ্দিন চৌধুরী মঙ্গলবার মিরপুর শাহ আলী থানায় এ একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগের অনুলিপি বেনারের হাতে এসেছে। এতে বলা হয়, সোমবার বিকেলে প্রথমে আনুমানিক ১১ জন এবং পরে আরো আনুমানিক ২৪ জন টেলিকম ভবনের অভ্যর্থনা কক্ষে প্রবেশ করেন।
“ভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী দর্শনার্থীদের রিসিপশনের ফ্রন্ট ডেস্কে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে ভিজিট করতে হয়। সে অনুযায়ী, কর্তব্যরত কর্মকর্তা তাঁদের তথ্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন। তাঁদের মধ্য থেকে একজন নিজেকে কর্নেল রাশেদ পরিচয় দিয়ে জানান যে, তারা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এসেছেন এবং গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ টেলিকমের অফিসে যাবেন,” বলা হয় অভিযোগে।
ওই ব্যক্তিরা সিকিউরিটি অ্যাকসেস কন্ট্রোল সিস্টেমের ওপর দিয়ে ডিঙিয়ে লিফট লবির সামনে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে গ্রামীণ টেলিকম ও তারপর গ্রামীণ কল্যাণের অফিসে প্রবেশ করেন উল্লেখ করে এতে বলা হয়, “তাঁরা তাঁদের যথাযথ পরিচয়পত্র দেখাননি, এমনকি উক্ত ভবনে প্রবেশের জন্য কোনো কর্তৃপক্ষের প্রদান করা অফিস অর্ডার না দেখিয়ে জবরদস্তিমূলকভাবে অফিসে প্রবেশ করেন।”
এতে বলা হয়, আগত ব্যক্তিরা ভবনে কর্মরত “কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইডি কার্ড দেখা শুরু করেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরেও অফিস ত্যাগে বাধা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে অনেককে তাঁরা বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখান।”
পরবর্তীতে গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে তারা পৃথকভাবে মিটিং করেন উল্লেখ করে অভিযোগে আরও বলা হয়, “তারা গ্রামীণ কল্যাণ এবং গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের জানান যে, উক্ত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তন হয়েছে, নতুন চেয়ারম্যান ও নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”
অভিযোগে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে মিটিং শেষে সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় তাঁরা তাঁদের দুইজন প্রতিনিধি অফিসে রেখে যান ও উপস্থিত সবাইকে অবগত করেন যে, তাঁদের আরেকজন প্রতিনিধি অফিস অর্ডার নিয়ে পথে আছেন। উক্ত অফিস অর্ডার আসার পর গ্রামীণ টেলিকমের অফিসে তালাবদ্ধ করবেন এবং পর দিন (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় অফিস খুলে তাঁরা পরবর্তী করণীয় গ্রহণ করবেন। সর্বশেষ রাত আনুমানিক ৯টায় অফিস তালাবদ্ধ করে তাঁরা টেলিকম ভবন ত্যাগ করেন।
এ রকম পরিস্থিতিতে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীরা “ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন” উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের “নিরাপত্তা সহায়তা”র অনুরোধ জানানো হয় অভিযোগে। গ্রামীণ কল্যাণের অভিযোগে আগত ব্যক্তিদের কারো নাম পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গ্রামীণ কল্যাণের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছেন এবং ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হয়েছে জানিয়ে শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বেনারকে বলেন, “আমরা তদন্ত করে দেখছি, কোনো জোর-জবরদস্তির ঘটনা ঘটেছে কি না।
আপনার মতামত জানানঃ