চীন, নেপাল ও ভুটান সীমান্তে উঁচু পাহাড়ঘেরা সিকিম রাজ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পর্যটক ছুটে এলেও বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর তুষারপাতের জন্য পর্যটনপ্রিয় সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত হয়। সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক পর্যন্ত সরাসরি যাত্রীবাহী বাস চালানোর সুবিধা চায় বাংলাদেশ। এতে করে লাভজনক রুট হবে বলে মনে করছে বিআরটিসি। কিন্তু প্রস্তাবটিতে এখনো রাজি নয় ভারত। ভারত চায় এখন এই বাস চলাচল শিলিগুড়ি পর্যন্ত করুক, পরে গ্যাংটক পর্যন্ত করা যাবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ মনে করে, গ্যাংটক পর্যন্ত রাস্তাটি যাতায়াতের জন্য এখনো পুরোপুরি উপযোগী না হলেও প্রয়োজনে রাস্তাটি সংস্কার করা সম্ভব। এতে করে এ রুট লাভজনক হবে। যাত্রী মিলবে প্রচুর। এসব যুক্তি তুলে ধরে আবার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে ভারতকে। তার আগে ঢাকা-শিলিগুড়ি রুটে সরাসরি বাস চলাচলের প্রটোকলের খসড়া নিয়ে আজ বুধবার সচিবালয়ে বৈঠক হবে। সেখানে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
তবে গত ৩ ডিসেম্বর ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠিতে জানিয়েছে, ভারতীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মতে, শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং, শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটকের রাস্তা বাস চলাচলের উপযোগী নয়। তাই আপাতত ঢাকা-শিলিগুড়ি বাস সার্ভিস চালু করা যেতে পারে। ভবিষ্যতে তা দার্জিলিং, গ্যাংটক পর্যন্ত বর্ধিত করা যেতে পারে।
তবে দূতাবাসের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বিআরটিসি কর্মকর্তারা। গত বছরের ১২ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা-শিলিগুড়ি-দার্জিলিং-গ্যাংটক রুটে পরীক্ষামূলক বাস পরিচালনা করে সংস্থাটি। তাতে যাত্রী হয়েছিলেন বিআরটিসির কর্মকর্তারা। তারা ফিরে এসে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছেন, শিলিগুড়ি থেকে ‘ওয়াই’ আকৃতির রাস্তা দুই ভাগে ভাগ দিয়ে দার্জিলিং ও গ্যাংটকের দিকে গিয়েছে। দার্জিলিং হয়ে গ্যাংটক যাওয়ার পথটির সরু এবং বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। কিন্তু শিলিগুড়ি থেকে নির্মাণাধীন ছয় লেনের ‘এনএইচ-১০’ মহাসড়ক ধরে ভিন্ন পথে গ্যাংটক যাওয়ার সুবিধা রয়েছে।
পরীক্ষামূলক যাত্রী ছিলেন বিআরটিসির মুখপাত্র আমজাদ হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিংয়ের রাস্তা সরু ও বিপজ্জনক। কিন্তু দার্জিলিং না গিয়েও শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যাওয়ার ভিন্ন পথ রয়েছে। সেই রাস্তা তুলনামূলক ভালো। বিআরটিসির পরীক্ষামূলক বড় বাস ওই পথে গ্যাংটক গিয়েছে। তাতে বাঁক ও বিপদ কম। তবে অবশ্যই দক্ষ চালক লাগবে।
বিআরটিসির একাধিক কর্মকর্তার দাবি, ‘নিরাপত্তার’ কারণে ভারত সরাসরি গ্যাংটক পর্যন্ত বাস রুট বর্ধিত করতে রাজি নয়।
ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধার দূরত্ব প্রায় ৫০০ কিলোমিটার, ঢাকা থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব ৫২০ কিলোমিটার। সেখান থেকে সিকিমের গ্যাংটকের দূরত্ব আরও ১২০ কিলোমিটার। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের দূরত্বও প্রায় একই। বর্তমানে ঢাকা-শিলিগুড়ি-ঢাকা রুটে যাত্রী চলাচল থাকলেও সরাসরি বাস চলে না। যাত্রীদের বাংলাবান্ধা বা চিরিরবন্দরে নেমে বাস বদল করতে হয়। এ রুটে বাস পরিচালনা করে বেসরকারি ‘শ্যামলী পরিবহন’। প্রতিষ্ঠাটির মালিক রমেশ ঘোষ বলেছেন, বর্তমান ব্যবস্থায় যাত্রীরা ঢাকা থেকে স্থলবন্দর পর্যন্ত গিয়ে ইমিগ্রেশন পার হয়ে ভারতে অপেক্ষমাণ বাসে শিলিগুড়ি যেতে পারেন। সরাসরি রুট চালু হলে যাত্রীদের নামতে হবে না। দার্জিলিং ও গ্যাংটক বাস চালানোর সুযোগ পেলে প্রচুর পর্যটক পাওয়া যাবে।
এসডব্লিউ/ডিএস/কেএইচ/১৩৩৮
আপনার মতামত জানানঃ