রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনটা একতরফা। এখানে যারা প্রার্থী তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। বিদ্রোহী শব্দটা ওজনদার হলেও এখানে যারা বিদ্রোহী তাদের ক্ষেত্রে এ শব্দটি ব্যবহার করা যায় কিনা- তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
এ নির্বাচনে সবাই নৌকাকে রিপ্রেজেন্ট করছে। অন্যদিকে গত ১০-১৫ বছর ধরে আমাদের যে অবিজ্ঞতা তা নিয়ে বলা চলে- জাতীয় পার্টির ভূমিকার সঙ্গে আওয়ামী লীগের ভূমিকার পার্থক্য নেই। তারা সরকারের মন্ত্রিসভাতে ছিল, এবারের নির্বাচনে সিট নিয়েও ধরকষাকষি করেছে। কাজেই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গেলে, তাদের কাছে বিকল্প চয়েস বলতে কিছু নেই। চয়েস একটাই; এ-ও নামে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়া।
তিনি বলেন, এতকিছুর পরও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে দলীয় প্রার্থীদের সংঘাত হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। এতে বুঝা যাচ্ছে যতটা মেরূকরণ ছিল তা আরও তীব্র হবে। দেশের দু’টি ধারা আরও তীব্র আকার ধারণ করবে- যা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন অপরিহার্য এ জন্য যে তা রাজতন্ত্র নয়।
বছরের পর বছর একই ব্যক্তি দেশের প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট হবেন, তা গণতান্ত্রিক চিন্তা ভাবনার সঙ্গে যায় না। সে জন্যই ভোটের ব্যবস্থা করে জনমত যাচাই করতে হয়। এ ছাড়াও দেশ সংকটে থাকলে সরকার যদি তার সমাধান করতে না পারেন তখন সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। তাই নির্বাচন হচ্ছে জাতীয় সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার। কিন্তু এবারের জাতীয় সমস্যা সমাধানের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না। বরং ভবিষ্যতের সমস্যাকে প্রকট করে তুলবে।
তিনি বলেন, বিএনপি জনগণকে দিয়ে ভোট বর্জন করাতে পারলো কি পারলো না সেটা তাদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক শক্তির ব্যাপার। দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যেটা একজন মন্ত্রীও বলেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তারা যা করছে বা করতে পেরেছে সেটাও তাদের জন্য সর্বোচ্চ ক্যাপাসিটি। এর বাইরে যাওয়ার মানে হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে বল প্রয়োগের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা। একটা গণতান্ত্রিক দলতো সেই বল প্রয়োগের পথ অনুসরণ করতে পারে না।
প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে যা চলছে তা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। যার সমাধান একদিনে আসবে না। যদি আরেকটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাতেও সমাধান হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণ ও সরকারের মধ্যে যে ধরনের মেলবন্ধন থাকার কথা তার বাস্তবায়ন না হয়। সরকার জনগণের ইচ্ছের প্রতীক না হলে শুধু একটা নির্বাচনে সমস্যার সমাধান হয় না। তবে নির্বাচন সমস্যা সমাধানের ভালো হাতিয়ার।
সরকারের কাছে নির্বাচন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ প্রশ্নে তিনি বলেন, পরবর্তী সময় সুখজনক হবে না। কারণ আপনি তো একটা বিরাট অংশকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে রেখেছেন। তারা নিজেরা নিজেদের বঞ্চিত মনে করবে। তখন বিচ্ছিন্নতাবাদের জন্ম দেবে।
যেটা আমাদের মতো দেশে মানুষের মধ্যে যে সম্পর্ক সেটা আরও বিনষ্ট হবে। এ ছাড়াও শান্তি-শৃঙ্খলা, ন্যায়-নীতি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, জনগণের খাওয়া-পরা, মূল্যস্ফীতির সমস্যা সমাধান করা- এগুলো সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। এটা করতে না পারলে দেশে অশান্তি অসন্তোষ আরও দেখা দেবে।
আপনার মতামত জানানঃ