আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলোকে এক জায়গায় আনার চিন্তা করছে বিএনপি। আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিনটি সামনে রেখে এই চিন্তা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের এই পর্যায়ে এসে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, নির্বাচন বর্জনকারী সব রাজনৈতিক দল এক জায়গায় এসে ভূমিকা রাখলে আন্দোলনের গতি বাড়বে।
বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে দলের নীতিনির্ধারণী নেতারা সব রাজনৈতিক দলকে এক জায়গায় আনার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। তা ছাড়া বিষয়টি নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গেও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। শিগগিরই আলোচনা হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাসদের নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ আরও কিছু দল ও জোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। তারাও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে এই দলগুলোকে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত করতে নানাভাবে চেষ্টা করেছিল বিএনপি।
আন্দোলনরত সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন অন্যতম। দুটি দলই বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে নেই। তবে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপির যুগপৎ কর্মসূচিগুলো অনুসরণ করছে জামায়াত। দলটি পৃথক হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করে মাঠে থাকছে।
অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন জাতীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে স্বতন্ত্রভাবে কর্মসূচি পালন করছে। এই দাবিতে দলটি নির্বাচন বর্জন করে আলাদা কর্মসূচি করছে।
এর বাইরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাসদের নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ আরও কিছু দল ও জোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। তারাও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে এই দলগুলোকে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত করতে নানাভাবে চেষ্টা করেছিল বিএনপি। কিন্তু তাতে তারা রাজি হয়নি। অবশ্য আন্দোলনের এই পর্যায়ে এসে বিএনপি সরকারবিরোধী সব দলকে এক জায়গায় আনার যে চিন্তা করছে, তাতে কোন কোন দল তাদের লক্ষ্য, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় দিবস। আমরা ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করেছি, বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। কিন্তু আজ আমাদের নেতা-কর্মীরা ঘরে থাকতে পারছে না। বনজঙ্গলে ঘুরছে। জেলে মারা যাচ্ছে। দুটি দিবসে আমরা অবশ্যই কর্মসূচি পালন করব। তবে সে পর্যন্ত পরিস্থিতি কী হয়, সেটি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির এই প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন। দল দুটিকে তারা আন্দোলনে শক্ত ভূমিকায় আনতে চায়। কিন্তু সেটি কীভাবে, তার কৌশল ঠিক হয়নি। এ ক্ষেত্রে কর্মসূচি যুগপৎ, নাকি এক জায়গা থেকে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির কৌশল নেওয়া হবে, সেটিরও কোনো কর্মপরিকল্পনা হয়নি। আবার দল দুটির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হতে গেলে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত বাম ধারার দলগুলো বিষয়টি কীভাবে নেয়, সেটিও চিন্তা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক একটি দলের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে একমত নন।
বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন সন্নিকটে। এই মুহূর্তে দলের নীতিনির্ধারণী নেতাদের লক্ষ্য নির্বাচন বর্জনকারী সব নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দলকে এক জায়গায় এনে মাঠে কার্যকর ভূমিকায় সক্রিয় করা। এখন দলাদলি, মতপার্থক্যের সুযোগ নেই। তাঁরা মনে করছেন, শুধু নির্বাচন বর্জন করে বসে থাকলে চলবে না। এর প্রতিবাদে দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে শক্ত ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
দলটির নেতারা মনে করছেন, মাঠপর্যায়ের নেতা–কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। সরকার সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করেও বিএনপিতে ভাঙন ধরাতে পারেনি। এত চাপ, প্রলোভনের মধ্যেও নেতারা দল ত্যাগ করেননি। এটিই এখন বিএনপির নৈতিক শক্তির বড় জায়গা হয়ে উঠেছে। তাই নির্বাচন সামনে রেখে সব দল ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পারলে একটা পর্যায়ে এর ফল পাওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই পরিকল্পনা থেকে বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচির চিন্তা করছেন। তবে এখনই আন্দোলনের কর্মসূচি থেকে হরতাল-অবরোধ বাদ দিচ্ছে না বিএনপি। ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন পর্যন্তই তারা শক্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। তবে আপাতত হরতাল-অবরোধের ফাঁকে ফাঁকে বিক্ষোভ-সমাবেশজাতীয় কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চায় বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান গত রাতে বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় দিবস। আমরা ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করেছি, বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। কিন্তু আজ আমাদের নেতা-কর্মীরা ঘরে থাকতে পারছে না। বনজঙ্গলে ঘুরছে। জেলে মারা যাচ্ছে। দুটি দিবসে আমরা অবশ্যই কর্মসূচি পালন করব। তবে সে পর্যন্ত পরিস্থিতি কী হয়, সেটি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
আপনার মতামত জানানঃ