চীন জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ সপ্তাহান্তে ভারতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন না। পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং সম্মেলনে চীনের প্রতিনিধিত্ব করবেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, সম্মেলনে শির সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে না জেনে তিনি নিরাশ হয়েছেন।
গত বছর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে এই দুই নেতার দেখা হয়েছিল। চীনা প্রেসিডেন্ট কেন বিশ্ব নেতাদের এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে যাচ্ছেন না তা পরিষ্কার নয়। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্মেলনে তার এই অনুপস্থিতির বেশ গুরুত্ব আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্কে কিছু টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের সম্পর্কে উত্তেজনা কমাতে এ বছর ওয়াশিংটনের দিক থেকে কিছু কূটনৈতিক দৌড়-ঝাঁপ সত্ত্বেও খুব একটা ফল হয়নি।
চীন এবং ভারতের সম্পর্কেও তিক্ততা তৈরি হয়েছে সীমানা বিরোধকে ঘিরে। হিমালয় অঞ্চলে সীমানা বিরোধ নিয়ে এই দুই দেশ সেখানে মুখোমুখি অবস্থানে আছে।
গত সপ্তাহে বেইজিং একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছিল যেখানে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ এবং আকসাই-চিন মালভূমি চীনের সীমানা-ভুক্ত বলে দেখানো হয়েছে। এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল ভারত।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, চীনা নেতা আসবেন না শুনে তিনি নিরাশ হয়েছেন। তবে শি এবং বাইডেনের মধ্যে নভেম্বরে সান ফ্রান্সিসকোতে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন শীর্ষ সম্মেলনে দেখা হওয়ার সুযোগ আছে।
গত বছরের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে দুই নেতার মধ্যে সাক্ষাতের দু মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে কথিত চীনা গুপ্তচর বেলুন ওড়ানোর অভিযোগ নিয়ে দু দেশের সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয়। এই ঘটনায় সম্পর্ক উন্নয়নের আশা মুখ থুবড়ে পড়ে।
চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে অনেক কিছু নিয়ে – ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অভিযান, শিনজিয়াং প্রদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, হংকং, তাইওয়ানকে নিজের দেশের অংশ বলে চীনের দাবি, এবং দক্ষিণ চীন সাগর। অন্যদিকে উচ্চ প্রযুক্তির খাতে চীন যাতে ঢোকার সুযোগ না পায় সেজন্যে তাদের বিরুদ্ধে যেসব অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে – তা নিয়েও বেইজিং ক্ষুব্ধ।
সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা দফায় দফায় বেইজিং সফর করেছেন। এদের মধ্যে আছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিন্কেন, অর্থ মন্ত্রী জানেট ইয়েলেন, এবং যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি।
এদিকে শি তার দেশকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর নেতা হিসেবে তুলে ধরছেন এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যবস্থার বিপরীতে একটি বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলার পক্ষে সমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
গত মাসে তিনি যখন ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান, তখন তিনি সেখানে ‘পশ্চিমা আধিপত্যের’ সমালোচনা করেন। তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ‘ঔপনিবেশিক জোয়াল’ থেকে মুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
ব্রিকস বলতে শুরুতে বোঝানো হতো ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা- এই পাঁচটি দেশকে। তবে জানুয়ারি মাস হতে এই জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে আরও ছয়টি দেশ – আর্জেন্টিনা, মিশর, ইরান, ইথিওপিয়া, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। এটি বেইজিং এর জন্য এক কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আপনার মতামত জানানঃ