দেশে এখন বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত রয়েছে ১০ লাখ ৬৮ হাজার শিশু শ্রমিক। যার মধ্যে ৬ লাখ ৫২ হাজার শিশু কাজ করছেন বিভিন্ন শিল্প কারখানায়।
আর সেবামূলক কাজে যুক্ত রয়েছেন ৩ লাখ ৭৯ হাজার শিশু শ্রমিক। আর কৃষি কাজ করেন ৩৫ হাজার শিশু। তবে এক দশকে ঝুঁকিহীন পেশায় যুক্ত হয়েছে ৬৯ শতাংশ শিশু।
বুধবার (১৯ জুলাই) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০২২ প্রকাশ করেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহসান-ই এলাহি, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টমো পাউটিয়াইনেন। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিসংখ্যান ব্যুরো মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মতিয়ার রহমান।
বিবিএসের জরিপে দেখা গেছে, দেশে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিযুক্ত রয়েছে মোট শিশু শ্রমিকের ২ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু। যাদের মধ্যে ছেলেদের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। আর নারীদের হার শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগে ২০১৩ সালে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় যুক্ত ছিল ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু।
বিবিএসের তথ্যমতে, ২০১৩ সালে ঝুঁকিহীন পেশায় যুক্ত ছিল ৪ লাখ ১৮ হাজার শিশু। তবে ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭ হাজারে। অর্থাৎ এক দশকে বৃদ্ধির হার ৬৯ শতাংশ। দেশে এখন মোট শিশু শ্রমিক রয়েছে ১৭ লাখ ৮০ হাজার। যা ২০১৩ সালে ছিল ১৭ লাখ। অর্থাৎ এক দশকে শিশু শ্রমিক বেড়েছে ৮০ হাজার।
আর কর্মে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখ ৪০ হাজার। যা ২০১৩ সালে ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। আর ৭ থেকে ১৪ বয়সী মোট শিশুর সংখ্যা ৩৯ লাখ ৯৬ হাজার। এদের মধ্যে ১৭ লাখ ৬০ হাজার শিশু কাজ করলেও তারা শিশু শ্রমিক নয়।
জরিপ বলছে, মোট শিশু শ্রমিকের মধ্যে ছেলেদের হার ৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মেয়েদের হার ২ দশমিক ১ শতাংশ। ৪ লাখ ৪০ হাজার শিশু শ্রমিক কাজ করেন শহরে। আর গ্রামে কর্মরতদের সংখ্যা ১৩ লাখ ৪০ হাজার।
বয়স বিবেচনায় ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে কাজ করছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু। আর ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সীদের হার ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। আর ১৪ থেকে ১৭ বয়সীদের মধ্যে কাজ করছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ শিশু।
শিশুশ্রম জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং দারিদ্র্যের কারণেই শিশুদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা হয়। ধনী পরিবারের ছেলেরা তো শিশু শ্রমিক হয় না। সরকার দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে কাজ করছে। আমরা আর্থিকভাবে ভালো অবস্থানে যেতে পারলে এগুলো এমনিতেই কমে যাবে।
ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে শিশুদেরকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এহসান এ ইলাহি বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩ বছরে ১ লাখ ৯০ হাজার শিশুকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।
আমরা ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছি যার মাধ্যমে ১২ লাখ শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমরা এরই মধ্যে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করেছি। শিগগিরই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পাঠানো হবে।
অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড শাহনাজ আরেফিন বলেন, শিশুশ্রম সেভাবেই হোক নিরসন করতে হবে। কারণ তারাই আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ। তাই সুন্দর পৃথিবীর গড়তে হলে যেসব কারণে শিশু শ্রম তৈরি হয় সেগুলোকে বন্ধ করতে হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, স্কুলগুলোতে মিড ডে মিল চালু করলে শিশুদেরকে কাজ থেকে স্কুলে ফেরানো যাবে। আমাদের দেশের চার দেয়ালের ভেতরে যে শিশুশ্রম হয় তাদের আমাদের বের করে আনতে হবে। বাসা বাড়িতে অনেক বাচ্চারা শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। এগুলো বন্ধ করতে হবে।
এসডব্লিউএসএস/১৪৪০
আপনার মতামত জানানঃ