চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫২ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৪ হাজার ২৬৩ কোটি মার্কিন ডলার আয় এসেছে শুধু তৈরি পোশাক থেকে। বাকি ৭৮৯ কোটি ডলার রপ্তানি আয় এসেছে অন্যান্য পণ্য থেকে। চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে পোশাকনির্ভর রপ্তানি আয়ে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় তলানিতে নেমেছে। মূলস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের রপ্তানি আয়ের দুই প্রধান গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতেও আয় কমেছে। কোনো কারণে তৈরি পোশাক খাতের আয় ঝুঁকিতে পড়লে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি আয়ও ঝুঁকিতে পড়বে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজার রাজনৈতিক কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ ধরনের আশঙ্কা করছি না।
কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি। আর সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ নিয়ে। পর্যাপ্ত গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না শিল্পে, দামও বেড়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে শতাধিক পণ্য রপ্তানি হয়। অথচ পোশাক খাতের বাইরে অনেক পণ্যের সম্ভাবনা থাকলেও রপ্তানি আয়ে তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায় না।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে প্রান্তিকের আয় হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, কেবল পোশাক খাত (ওভেন ও নিট) থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় এলেও বাকি ৯৯ খাত থেকে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকারও কম। একটি পণ্যের ওপর রপ্তানি আয় নির্ভরশীল হওয়ার কারণে দেশের রপ্তানি আয় নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, গত ১১ মাসে তৈরি পোশাক খাতসহ ১৬ খাতে রপ্তানি আয় বাড়লেও ওষুধ, কাঁচাপাট, চাসহ ২৫ খাতে রপ্তানি কমে গেছে। এর মধ্যে প্লাস্টিক, কাগজ ও কাগজপণ্য, সিমেন্ট, ক্যাপ, তামাকপণ্য, ইলেকট্রিক পণ্য, জুতা (চামড়া ব্যতীত), সিরামিক, মানুষের চুল, জীবন্ত মাছ, জাহাজ, কেমিক্যাল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে।
অপরদিকে আয় কমেছে ওষুধ, শাক-সবজি, ফলমূল, স্পেশাল টেক্সটাইল, হ্যান্ডিক্রাফটস, ফার্নিচার, বাইসাইকেল, চা, শুকনো খাবার, প্রকৌশলী যন্ত্রাংশ, কাঁচাপাট, চামড়ার জুতা, রাবার, চিংড়ি, কার্পেট, টেরিটাওয়েলসহ ২৫ ধরনের পণ্যের।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি আয় বাড়লেও এবার টার্গেট পূরণ হবে না। তৈরি পোশাকের বাইরে ওষুধ, চামড়া, হালকা প্রকৌশলী, আইটির মতো সম্ভাবনাময় পণ্যের বাজার ধরতে পারলে রপ্তানি আয়ের ঝুঁকি অনেক কমে যাবে। উদ্যোক্তাদের উচিত নতুন বাজারে নতুন পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহসভাপতি শহিদুল আজিম বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমাদের অর্ডার কমছে। আমরা এখন নতুন বাজারে যাচ্ছি। অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও কোরিয়া, ভারত, জাপানে রপ্তানি বাড়ছে। তবে গ্যাস, বিদ্যুতের সমস্যা শঙ্কা বাড়াচ্ছে।
এর ওপর রয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে অনিশ্চয়তা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, মার্কিন নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাজার ধরে রাখা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। আমাদের যে সংকট তা হলো শিল্পে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সমস্যা এখনো বিরাজমান। লোডশেডিং এখনো হচ্ছে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সুতা ও কাপড়ের উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
এসডব্লিউএসএস০৯৫৫
আপনার মতামত জানানঃ