২০২৩ সালে আমরা পৃথিবীকে যেমন দেখছি, আগামীর পৃথিবী এমন থাকবে না। বদলে যাবে তার অনেক কিছুই। কিন্তু কিভাবে এবং কি বদল আসছে এই পৃথিবীর তা নিয়ে গবেষণা করছে বিজ্ঞানীরা। ২০৫০ সালে কেমন হবে আমাদের পৃথিবী?
২০২৩ সাল থেকে ২০৫০ সাল, সময়ের ব্যবধান ২৭ বছর। সময়টা নিছক কম নয়। এই সময়ের মধ্যে পৃথিবী অনেক কিছুরই আমূল পরিবর্তন আসবে যেটা আমরা ভাবতেও পারছি না। যেমন ৯০ এর দশকের কম্পিউটারগুলোর কথা চিন্তা করি আমরা! আর এখন ২০২৩ সালে এসে আমরা কম্পিউটারকে কেমন দেখছি? তখন কি আমরা ভেবেছিলাম কম্পিউটারের এমন পরিবর্তন আসবে? ৯০ এর দশকে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের সাহায্যে বই পড়ার কথা আমরা ভাবতেই পারতাম না। আর এখন আমরা মোবাইল ফোনেই পড়তে পারি কত বই।
বিজ্ঞানী, গবেষকরা এখনই ভাবতে শুরু করেছেন কেমন হতে পারে আজ থেকে ২৭ বছর পরের পৃথিবী। কোনদিকে যাচ্ছি আমরা, পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কী? উত্তরগুলো যে তথ্য-উপাত্ত থেকে আসছে তাতে আশাবাদী হওয়ারই কথা। তবে সংকটও রয়েছে। প্রযুক্তির উন্নতির কারণে দৈনন্দিন জীবন হয়ে ওঠবে আরো নিরাপদ ও আরামদায়ক।
আবার উল্টোদিকে তাকালে আশঙ্কা জন্মায় ফুরিয়ে আসছে তেল, গ্যাস। ঘনিয়ে আসছে বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই দুর্যোগ ও অনাগত সাফল্য, সম্ভাবনাগুলো নিয়েই পৃথিবী এগিয়ে চলছে। সবমিলিয়ে আগামীর পৃথিবী নিয়ে আমরা একদিকে যেমন আশাবাদী তেমন চিন্তিতও বটে। তবে এবার একজন দাবি করলেন তিনি ঘুরে এসেছেন ২০৫০ সালের পৃথিবীতে। চলুন জানা যাক বিস্তারিত।
সময় এবং নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না—এ কথাটিকে প্রায় সবাই ধ্রুব সত্যের মতো মানেন। এ ক্ষেত্রে কেউ অবশ্য গোঁয়ার্তুমি করে নদীতে বাঁধ দিয়ে স্রোত থামিয়ে দেওয়া যায় এমন কথাও বলেন। এমনটি আমরা দেখিও অহরহ। কিন্তু কেউ যদি দাবি করে সময়কেই বশে আনা যায়!
সময়কে বশে এনে তার পিঠে চড়ে অর্থাৎ টাইম ট্রাভেল করে অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ থেকে বর্তমানে চলে আসার গাল-গল্প আমরা প্রায়ই শুনি। বিশেষ করে টিকটকে। এ মাধ্যমে নিজেকে টাইম ট্রাভেলার দাবি করে অসংখ্য ফলোয়ারও পেয়ে গেছেন বেশ কিছু মানুষ। তবে বাস্তবতার নিরিখে তাদের কারও দাবিই শেষ পর্যন্ত আর বিশ্বাসযোগ্য হয় না। অন্তত যতক্ষণ না কেউ পনোমারেঙ্কোর গল্পটি শুনছেন।
নিজেকে গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের যুবক দাবি করা এই পনোমারেঙ্কোকে ২০০৬ সালে যুবক বেশেই দেখা গিয়েছিল ইউক্রেনের কিয়েভ শহরে। সে সময় কর্তৃপক্ষের কাছে পনোমারেঙ্কো দাবি করেন, তার জন্ম ১৯৩২ সালে সোভিয়েত রাশিয়ায়।
কাঁধে অনেক পুরোনো মডেলের একটি ক্যামেরা বহন করা পনোমারেঙ্কোর বেশভূষাও ছিল অনেক পুরোনো আমলের। এমন বেশে তাকে ছবিতে কেউ দেখলে-যে কেউ শতাব্দী প্রাচীন মানুষ হিসেবেই ধরে নেবেন। কর্তৃপক্ষও তাকে কিছুটা ছিটগ্রস্ত হিসেবে সন্দেহ করেছিল। তারা ভেবেছিল, পনোমারেঙ্কো হয়তো কোনো বেখেয়াল পর্যটক যিনি পথ হারিয়ে আবোল-তাবোল বকছেন।
তবে গল্পটি জমে ওঠে যখন তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে ধরিয়ে দেন তাঁরই চেহারার এক যুবকের অন্তত ৬০ বছর আগের একটি রুশ পরিচয়পত্র। সে সময়টিতে ইউক্রেন ছিল রাশিয়ারই অংশ।
পনোমারেঙ্কো আরও দাবি করেন, পঞ্চাশের দশকে কিয়েভে তোলা বেশ কিছু ছবিও রয়েছে তাঁর ক্যামেরাটিতে। এমনকি ক্যামেরার ভেতরে থাকা নেগেটিভ ওয়াশ করে এর সত্যতাও পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি ছবিতে পনোমারেঙ্কোকে অচেনা এক নারীর সঙ্গেও দেখা যায়। একটি ছবিতে এলিয়েনদের ব্যবহৃত যান (ইউএফও) দেখা যাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
গল্পটি চূড়ান্ত উত্তেজনা নিয়ে আসে যখন, পনোমারেঙ্কোর হাতে থাকা পরিচয়পত্র ধরে অনুসন্ধান শুরু করে কর্তৃপক্ষ। তারা দেখতে পান, একই পরিচয়ে সত্যিই একজনের অস্তিত্ব ছিল যিনি কি-না ১৯৫৮ সালে একবার নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন।
বিস্ময়করভাবে নিখোঁজ হওয়া সেই যুবকের প্রেমিকারও খোঁজ পায় কর্তৃপক্ষ। তত দিনে তিনি সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা। এ ছাড়া পনোমারেঙ্কোর কাছে থাকা ছবিতে যাকে দেখা গিয়েছিল-বেরিয়ে আসে তিনিই সেই নারী।
বৃদ্ধা দাবি করেন, গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে পনোমারেঙ্কো অন্তত দুই বছরের জন্য নিখোঁজ ছিলেন। পরে অবশ্য তিনি ফিরে এসেছিলেন।
বৃদ্ধা জানান, ফিরে আসার পর পনোমারেঙ্কোর কাছে এমন একটি ছবি পাওয়া যায় যেখানে তাকে একজন বৃদ্ধের মতো দেখাচ্ছে। পনোমারেঙ্কো তখন দাবি করেন, ছবিটি ২০৫০ সালে তোলা কিয়েভে!
বহু বছর পর পনোমারেঙ্কোর অবিশ্বাস্য সেই গল্পটি ফিরিয়ে এনেছেন আমেরিকান ইউটিউবার জো স্কট। শুক্রবার এ বিষয়ে দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়—২০০৬ সালে পনোমারেঙ্কোর করা দাবিগুলোকে খণ্ডন করেছেন স্কট। শুধু তাই নয়, তিনি এমন দু-একটি প্রমাণ হাজির করেছেন যা পুরো গল্পটিকেই মিথ্যা করে দিতে পারে।
স্কট দাবি করেছেন, যে ছবিটি ২০৫০ সালে কিয়েভে তোলা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে তা আসলে ক্লোন করা। আর ছবিটিতে যেসব অট্টালিকা দেখা গেছে সেগুলোর মধ্যে খুব সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংও আছে।
এ ছাড়া যে ছবিটিতে এলিয়েনদের বাহন (ইউএফও) দেখা যাচ্ছে বলে পনোমারেঙ্কো দাবি করেছিলেন সেটি ইউক্রেনের একটি টিভি শোতে দেখানো কিছু জিনিসের আলোকচিত্র। এই শোতে মূলত এলিয়েনদের অস্তিত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হতো।
এ অবস্থায় অনেক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব না হলেও অনেকে মনে করছেন, কোনো একটি দাবি মিথ্যা হয়ে যাওয়া মানে পুরো গল্পটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা।
এসডব্লিউএসএস/১৪৩৩
আপনার মতামত জানানঃ