নাসা-র পারসিভিয়ারেন্স মার্স রোভার লাল গ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর নানা স্থানের ফটো তুলে পাঠাচ্ছে। যে ফটো পরীক্ষা করে নাসার গবেষকেরা নতুন নতুন তথ্য জানতে পারছেন। চিনতে পারছেন মঙ্গলগ্রহকে। সেই পারসিভিয়ারেন্স এবার এমন এক ছবি পাঠিয়েছে যা বিজ্ঞানীদের শুধু নতুন তথ্যই দেয়নি, মঙ্গলগ্রহের জল সম্বন্ধে ধারনাও অনেকটা বদলে দিয়েছে।
পারসেভেরান্সের এসব ছবি মঙ্গল-গবেষণাকে এক কদম এগিয়ে দিল বলেই মনে করছেন সকলে। মঙ্গলে প্রাণের সঞ্চার নিয়ে যে রিসার্চ চলছে, তাতেও ইতিবাচক তথ্য যোগ করল এই ছবি।
অ্যামি উইলিয়ামস বলেন, “অরবাইটাল ইমেজ দেখে আমাদের আগেই মনে হয়েছিল, জল ছিল মঙ্গলে। কিন্তু এবার তা আরও স্পষ্ট হল। এতদিন যেন বইয়ের মলাট দেখছিলাম, এবার বইটা পড়ছি আমরা। মঙ্গলে প্রাণ আছে কি নেই তাই নিয়ে যে এত দিন ধরে গবেষণা চলছে, তাতে খানিক সাহায্য করল এই ছবি।”
মার্কিন মহাকাশযান পারসেভেরান্সের আয়তন একটি গাড়ির মতোই। ছ’চাকা বিশিষ্ট এই মহাকাশযান কয়েক বছরের মধ্যে মঙ্গলের পাথর নিয়ে ফিরবে পৃথিবীতে। সেই পাথর নিয়ে চলবে গবেষণা। জানা যাবে, কোটি কোটি বছর আগে কেমন ছিল মঙ্গল? তখন কি আদৌ কি প্রাণ ছিল এই লালগ্রহে? এসবেরই উত্তর খোঁজা হবে পাথর পেলে। তবে তার আগে তার পাঠানো ছবি যে মহাকাশ গবেষণায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক উপাদান হয়ে উঠল, তা বলাই বাহুল্য।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন মঙ্গলের বুকে এমন এক প্রাচীন নদীর তাঁরা খোঁজ পেয়েছেন যা যখন বইত তখন তার স্রোত ছিল মারাত্মক। প্রবল স্রোতে বয়ে যেত নদীটি। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন নদীটি শুধু খরস্রোতাই ছিলনা, ছিল অত্যন্ত গভীরও। এমন নদীর খোঁজ এই প্রথম পেলেন বিজ্ঞানীরা। সেদিক থেকে মঙ্গলগ্রহ সম্বন্ধে জ্ঞান আরও অনেকটা বাড়ল এই আবিষ্কারে।
বিজ্ঞানীরা এটাও জানিয়েছেন যে নদীটি এঁকে বেঁকে ছুটে চলত। যে পলি তাঁরা দেখতে পেয়েছেন তা প্রমাণ করে নদীটি এতটাই খরস্রোতা ছিল যে বড় বড় পাথরকেও সে ভাসিয়ে নিয়ে যেত। যে পলি পড়েছে সেগুলির উচ্চতাও বেশ চোখে পড়ার মতন।
জেজেরো ক্রেটারে এই নদীর দেখা পাওয়া মঙ্গলে নদীর রূপ সম্বন্ধে অনেকটাই ধারনা দিল। এর আগে এটা বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছিলেন যে পৃথিবীর চেয়ে মঙ্গলের নদীগুলি চওড়ায় অনেক বড় হত। কিন্তু সেখানে যে এমন খরস্রোতা প্রবল গতিতে বয়ে চলা নদীও ছিল তা এই প্রথম জানতে পারলেন নাসার
মঙ্গলগ্রহে শুধু নদীই ছিল না, হয়তো বেশ স্রোতও ছিল তাতে। সম্ভবত ছিল হ্রদও। লাল গ্রহ থেকে আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র যান (রোভার) ‘পার্সিভিয়ারেন্স’ আবার নতুন ছবি পাঠিয়েছে। তাতে সেই উচ্ছল নদীরই চিহ্ন মিলছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, মঙ্গলের নদীর গভীরতা ও স্রোত, দুই-ই প্রথমে যা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়েও বেশি ছিল বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মার্চের মধ্যে মঙ্গলের যে জায়গাটিতে নিজের মাস্টক্যাম-জ়েড ক্যামেরায় ‘পার্সিভিয়ারেন্স’ এই ছবিটি তুলেছে, বিজ্ঞানীরা তাকে বলেন, ‘স্ক্রিঙ্কল হ্যাভ্ন’।
তাদের অনুমান, এখানে খরস্রোতা ও গভীর এক নদী ছিল বলেই এই পাথরগুলি এমন স্তরে স্তরে বিন্যস্ত। মঙ্গল থেকে আসা ছবিতে এমন প্রমাণ এই প্রথম মিলল। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গলে নামার পরে সেখানকার জেজ়েরো গহ্বর অঞ্চলে অনুসন্ধান চালাচ্ছে নাসার যানটি। বিজ্ঞানীদের সন্দেহ, মঙ্গলের বিভিন্ন জলধারা এসে মিশত জেজোরো গহ্বরেই।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৫০
আপনার মতামত জানানঃ