আসিফ মহিউদ্দীন লিখেছেন, আস্তিক মানুষদের একটি বহুল প্রচলিত যুক্তি হচ্ছে, ঈশ্বর না থাকলে আইনস্টাইনের মত প্রখ্যাত বিজ্ঞানী কেন ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন? অর্থাৎ, আইনস্টাইনের ঈশ্বর বিশ্বাসকে আস্তিকগণ ব্যবহার করতে চান ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ হিসেবে। যা একটি লজিক্যাল ফ্যালাসি, যাকে বলে প্রাধিকারের কুযুক্তি। মানে হচ্ছে, আইনস্টাইন ঈশ্বরে বিশ্বাসী হোক কিংবা না হোক, তাতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ হয় না। তারপরেও, এই লেখাটির উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র একটি মিথ্যাচারের জবাব দেয়া। যেই বহুল প্রচলিত মিথ্যাচারটি হচ্ছে, আইনস্টাইনকে ঈশ্বরে বিশ্বাসী বানাবার চেষ্টা বা ধার্মিক ধর্মপ্রাণ বানাবার মিথ্যা চেষ্টা।
সেই সময়ে এবং পরবর্তী সময়েও, পুরো পৃথিবীর সবচাইতে প্রভাবশালী পদার্থবিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে আরেকজন প্রখ্যাত জার্মান ইহুদী দার্শনিক এরিখ গুটকিন্ড নিজের লেখা একটি বই পাঠিয়েছিলেন পড়বার জন্য। বইটি পড়বার পরে মৃত্যুর বছরখানেক আগে আইনস্টাইন একটি চিঠি লেখেন এরিখ গুটকিন্ডকে। পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন; কথিত আছে, মৃত্যুর মাত্র এক বছর আগে ১৯৫৪ সালে একটি চিঠিতে ‘ঈশ্বর’ বিষয়ে লিখে গেছেন। যেখানে তিনি খুব পরিষ্কারভাবেই নিজের অবিশ্বাসের কথা বর্ণনা করেছেন। সেই চিঠিটি নিলামে উঠেছে, এবং নিউইয়র্কে সেই চিঠিটি ২৯ লক্ষ ডলারে বিক্রি হয়।
জার্মান ভাষায় লেখা ওই চিঠিতে আইনস্টাইন নিজের হাতেই অস্বীকার করেছিলেন ‘ঈশ্বরের হাত’! লিখেছিলেন, ‘‘ওই সব হাত-টাত বলে কিছু নেই। সবটাই মানুষের দুর্বলতা।“কোন ব্যাখ্যাই যে তার এ ধারণার পরিবর্তন করতে পারবেনা সেটিও তিনি সেখানে পরিষ্কার করেই লিখে দিয়েছিলেন। এমনকি তিনি যে ইহুদি সম্প্রদায় ও তাদের মানসিকতাকে ধারণ করেন সেই ইহুদিদের তিনি অন্য মানুষদের থেকে আলাদা কিছু নয় বলেই তার মতামত দিয়েছেন সেখানে।
জার্মান ভাষায় লেখা দেড় পাতার ওই চিঠিতে আইনস্টাইনের মূল বক্তব্য ছিল অনেকটা এরকম – তা সে যে ধর্মই হোক, আদতে তা আমাদের আদিম কুসংস্কারই। আমি মনে করি, ঈশ্বর শব্দটা মানুষের দুর্বলতার প্রকাশ আর সেই দুর্বলতা থেকেই তার জন্ম। আর কিছুই নয়।
শুধু তাই নয়, একাধারে বাইবেল এবং ইহুদী ধর্মকে মোটামুটি কঠিন ভাবেই সমালোচনা করেছেন আইনস্টাইন। দার্শনিক গুটকিন্ডকে তিনি লিখেছিলেন, বাইবেল হচ্ছে কিছু আদিম কিংবদন্তীগুলোকে অনর্থক মহান বানানো। কোনও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রেক্ষাপট পরিপ্রেক্ষিতের আলোচনাই, বা কোন কিছুই আমার এই ধারণা বদলাতে পারবে না। একই কথা খাটে ইহুদি ধর্মের ক্ষেত্রেও।
এই চিঠিটিই আইনস্টাইনের প্রখ্যাত ‘গড লেটার’ নামে বহুল পরিচিত। পাঠকদের জন্য নিয়ে আসলাম এই চিঠিটির কিয়দাংশের অনুবাদ।
Princeton, 3. 1. 1954
Dear Mr Gutkind,
Inspired by Brouwer’s repeated suggestion, I read a great deal in your book, and thank you very much for lending it to me. What struck me was this: with regard to the factual attitude to life and to the human community we have a great deal in common. Your personal ideal with its striving for freedom from ego-oriented desires, for making life beautiful and noble, with an emphasis on the purely human element. This unites us as having an “unAmerican attitude.”
Still, without Brouwer’s suggestion I would never have gotten myself to engage intensively with your book because it is written in a language inaccessible to me. The word God is for me nothing more than the expression and product of human weakness, the Bible a collection of honorable, but still purely primitive, legends which are nevertheless pretty childish. No interpretation, no matter how subtle, can change this for me. For me the Jewish religion like all other religions is an incarnation of the most childish superstition. And the Jewish people to whom I gladly belong, and whose thinking I have a deep affinity for, have no different quality for me than all other people. As far as my experience goes, they are also no better than other human groups, although they are protected from the worst cancers by a lack of power. Otherwise I cannot see anything “chosen” about them.
In general I find it painful that you claim a privileged position and try to defend it by two walls of pride, an external one as a man and an internal one as a Jew. As a man you claim, so to speak, a dispensation from causality otherwise accepted, as a Jew the privilege of monotheism. But a limited causality is no longer a causality at all, as our wonderful Spinoza recognized with all incision, probably as the first one. And the animistic interpretations of the religions of nature are in principle not annulled by monopolization. With such walls we can only attain a certain self-deception, but our moral efforts are not furthered by them. On the contrary.
Now that I have quite openly stated our differences in intellectual convictions it is still clear to me that we are quite close to each other in essential things, i.e; in our evaluations of human behavior. What separates us are only intellectual “props” and “rationalization” in Freud’s language. Therefore I think that we would understand each other quite well if we talked about concrete things.
With friendly thanks and best wishes,
Yours,
A. Einstein
প্রিয় গুটকিন্ড,
… ঈশ্বর- এই শব্দটি মানুষের দুর্বলতা থেকে সৃষ্ট এবং ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত একটি শব্দ মাত্র। বাইবেল হচ্ছে কিছু মহান পৌরাণিক কাহিনীর সমাহার, তবে সত্যিকার অর্থে সেগুলো আদিম, সেকেলে, এবং খুবই শিশুতোষ কাহিনী সমুহের আখ্যান। সেই সব গল্পের যেই অর্থই তৈরি করা হোক না কেন, কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রেক্ষাপট পরিপ্রেক্ষিতের আলোচনাই আনা হোক না কেন, তা আমার ভাবনায় কোন পরিবর্তন আনবে না। অন্যান্য সব ধর্মের মত ইহুদী ধর্মও সেইসব অত্যন্ত শিশুতোষ কুসংস্কারের ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণ।
এবং ইহুদী জনগণ, আমি যাদের একজন বলতে নিজেকে গর্ববোধ করি, এবং যাদের মননের সাথে রয়েছে আমার গভীর মিল রয়েছে, তারা অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষের চাইতে কোন উন্নত গুণাবলী সম্পন্ন নয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, তারা অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় তারা খুব উন্নতও নয়। যদিও যথেষ্ট ক্ষমতার অভাবের আশির্বাদের কারণে তারা সবচেয়ে খারাপ ধরণের ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত। এছাড়া আমি তাদের মধ্যে ঈশ্বর কর্তৃক নির্বাচিত কোন গুণাবলী আছে বলে মনে করি না।
বিনীত
এ. আইনস্টাইন
আপনার মতামত জানানঃ