সাংবাদিকদের জন্য নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন বিষয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন গত বুধবার একটি নীতিমালা প্রকাশ করেছে। এই নীতিমালার কারণে ভোটকেন্দ্রে তাদের দায়িত্ব পালন প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সাংবাদিকরা।
কেউ কেউ বলছেন নির্বাচনে অনিয়ম যাতে প্রকাশ বা প্রচার না হয় সেজন্যই এমন নীতিমালা করেছে কমিশন। বেসরকারি ডিবিসি টেলিভিশনের সম্পাদক জায়েদুল আহসান এমন নীতিমালার জন্য নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো সাংবাদিকদের জন্য নির্বাচন অবাধে কাভার করার সুযোগ তৈরি করে দেয়া কিন্তু সেটি না করে কমিশন চেষ্টা করছে কিভাবে সাংবাদিকদের দূরে রাখা যায়।”
নীতিমালায় সাংবাদিকদের জন্য অতিমাত্রায় বিধিনিষেধের সমালোচনা করেছেন সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সোচ্চার থাকা সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানও।
যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, এ নীতিমালা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এ নিয়ে আসা মতামত বা সমালোচনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজন হলে ‘সময়মত’ তারা সিদ্ধান্ত নিবেন।
নীতিমালায় যা আছে
নির্বাচন কমিশনের প্রকাশ করা এই নীতিমালায় বলা হয়েছে নির্বাচনের দিন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন না।
সামাজিক মাধ্যমে সাংবাদিকদের অনেকে বলছেন বাংলাদেশে অসংখ্য ভোট কেন্দ্র হয় দুর্গম এলাকায় যেখানে মোটরসাইকেল ছাড়া দ্রুত যাওয়া আসা অসম্ভব।
নীতিমালায় বলা হয়েছে ভোট কক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা, এজেন্ট বা ভোটারের সাক্ষাতকার নেয়া যাবে না এবং ভোট কক্ষের ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। সাংবাদিকরা ভোট গণনা দেখতে ও ছবি নিতে পারবেন কিন্তু সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না।
ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিজাইডিং অফিসারকে অবহিত করে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ করা যাবে।
সাংবাদিক মুকিমুল আহসান গত এক দশকে অসংখ্য নির্বাচন কাভার করেছেন। তিনি বলছেন, “কোনো কেন্দ্রে ভোট চুরি বা কারচুপির খবর পেয়ে সাংবাদিকরা গেলে তথ্য সংগ্রহ বা ছবি তোলার অনুমতি নেয়ার জন্য তারা প্রিজাইডিং অফিসারকে কোথায় পাবে? তিনি তার কেন্দ্রের অনিয়মের খবর সংগ্রহের অনুমতি সাংবাদিকদের দেবেন?”
নীতিমালায় বলা হয়েছে ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে কিংবা ভোট গণনার সময় সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। আর একই সাথে দুইয়ের বেশি মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোট কক্ষে প্রবেশ করতে পারবে না এবং তারা দশ মিনিটের বেশি অবস্থান করতে পারবেন না।
কমিশন বলছে তাদের এ নীতিমালা সংসদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং সব উপনির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতামত
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে তখনকার নির্বাচন কমিশন সচিবের একটি বক্তব্য ব্যাপক সমালোচনা কুড়িয়েছিলো। পর্যবেক্ষকদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, “মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন”।
সেই বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে মুকিমুল আহসান বলছেন নতুন নীতিমালার কারণে এবার সাংবাদিকদেরও ‘মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে সব পর্যবেক্ষণ করতে হবে’।
ডিবিসি টেলিভিশনের সম্পাদক জায়েদুল আহসান নির্বাচন কমিশনের নীতিমালাকে ‘ছেলেমানুষী কার্যক্রম’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন কমিশনের বরং এখন নির্বাচন কিভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু করা যায় সেটি নিয়ে কাজ করা।
“সামনের সংসদ নির্বাচনের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। আর কমিশন ব্যস্ত কীভাবে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। অবিলম্বে এ নীতিমালা বাতিল করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি নীতিমালা করা উচিত কমিশনের।”
বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলছেন নীতিমালায় গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য অতিমাত্রায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
“সাংবাদিকরা দেখবে, শুনবে এবং কোথাও কোনো অনিয়ম হলে তুলে ধরবে যাতে কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারে। অনিয়ম বা কারচুপির ঘটনার তথ্য সংগ্রহে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার বিধান দু:খজনক। জনগণকে নির্বাচন বিষয়ে আস্থাবান করতে হলে গণমাধ্যমকে কাজের সুযোগ দিতে হবে।”
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা তৈরির জন্যও গণমাধ্যমকে তার কাজ সঠিকভাবে করার সুযোগ দেয়া উচিত।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪২৫
আপনার মতামত জানানঃ