রমজানের পণ্য আমদানি করে আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলেও, রেমিট্যান্সের মাধ্যমে ডলারের যোগান বাড়ায় আমদানি বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি।
এ অবস্থায় চার মাসের স্থবিরতা কাটিয়ে চলতি বছরের মার্চে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা।
দেশের অর্থনীতি পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। আর উল্লেখযোগ্য রপ্তানি বলতে রয়েছে তৈরি পোশাক খাত। বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তৈরি পোশাক খাতেও কিছুটা ভাটা পড়েছে।
মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ডলার সংকেটর মুখে নানামুখী বিধিনিষেধ আরোপে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে মারাত্মক ধস নামে। অর্ধেকে নেমে আসে বন্দরের কন্টেইনার ওঠানামা।
তবে চেষ্টা চলছে মন্দাভাব কাটিয়ে ওঠার। বাড়ছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। অফডগগুলোর পাশাপাশি এর প্রভাব পড়েছে বন্দরেও। রমজানের পণ্য দেশে আসা শুরু হতেই চাঙা হতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দর।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর ৯৯ হাজার আমদানি ও ৫৫ হাজার রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। সেই সঙ্গে খালি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪৭ হাজারের বেশি।
এছাড়া চলতি বছরের মার্চে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১ লাখ ৭৭ হাজার আমদানি-রপ্তানি নথির বিপরীতে শুল্ক আদায় হয়েছে ৫ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। টানা তিন মাস ৪ হাজার কোটি টাকার ঘরে থাকার পর চতুর্থ মাসে এসে শুল্ক আদায়ের এই রেকর্ড অর্জিত হয়েছে। আর ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে ৩ লাখ টন পণ্য বেশি আমদানি হওয়ার পাশাপাশি ৭৫০ কোটি টাকার বেশি শুল্ক আদায় হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দ্রুততম সময়ের মধ্যে পণ্য হ্যান্ডলিং করে। এর ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দেশের রাজস্ব।
তবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ চলতি অর্থবছরে ৭৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও ৯ মাসে আদায় হয়েছে মাত্র ৪৪ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপকমিশনার ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, মার্চের ধারাবাহিকতা এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বজায় থাকলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।
এদিকে এক মাসের ব্যবধানে আমদানি কন্টেইনারের ক্ষেত্রে সামান্য অগ্রগতি হলেও রপ্তানি কন্টেইনারের ক্ষেত্রে ২৩ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে ১৯টি অফডকে। শুধু মার্চ মাসেই অফডকগুলোতে হ্যান্ডলিং হয়েছে ৫১ হাজার আমদানি ও ১৭ হাজার রপ্তানি কন্টেইনার।
ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বিপ্লব বলেন, আমদানি বাড়তে শুরু করায় রপ্তানি খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। এতে রপ্তানির পরিমাণ আগামীতে আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কী অবস্থা রপ্তানির?
চার মাস পর গত মার্চে পণ্য রপ্তানি আবারও নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে। গত মার্চে ৪৬৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, এই আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ কম। মার্চে রপ্তানি নেতিবাচক ধারায় চলে গেলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রপ্তানিতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে রপ্তানির বড় খাতের মধ্যে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা এবং প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তার বিপরীতে পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৪ হাজার ১৭২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময় পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৬১ কোটি ডলার।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৩ হাজার ৫২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চে রপ্তানি হয়েছে ৯২ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানিও বেড়েছে পৌনে ৬ শতাংশ। এ খাতের রপ্তানির পরিমাণ ৩৬ কোটি ডলার।
হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি কমেছে ২৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চে রপ্তানি হয়েছে ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল। অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে ২১ দশমিক ২৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৬৯ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। চলতি অর্থবছর রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।
এসডব্লিউএসএস /১৯৩০
আপনার মতামত জানানঃ