উদ্ধার অভিযান বা খনন চালিয়ে আর ঢাকার খালগুলো টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। যেদিন দখলমুক্ত হয় সেই রাতেই আবার পুনর্দখল হয়ে যায়। এই সংকট সমাধানে পথ দেখিয়েছে হাতিরঝিল। স্থায়ী অবকাঠামো হলে খাল দখল ঠেকানো যাবে, এমন অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন স্থায়ী উন্নয়নের মাধ্যমে ঢাকার খাল রক্ষায় মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন এবং বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন দুই সিটি করপোরেশন।
এ বছরের জুনে কাওলায় খনন শেষে একটি খালের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা মাস্টার প্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) প্রণয়ন করেছি। ঢাকার ৩৯টি খালের অস্তিত্ব চিহ্নিত করা হয়েছে। সঠিক নেতৃত্ব যদি থাকে এ সমস্ত জায়গায় হাতিরঝিল হবে। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে ঢাকার সকল খাল সংস্কার করে হাতিরঝিলের আদলে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা গেছে, অবশেষে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে ঢাকার পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সিটি করপোরেসশনকে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকার দখল হয়ে যাওয়া খাল পুনরুদ্ধার করে তা নিয়ে মহাপরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম রাজধানীর খাল উদ্ধার করা এবং ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই মেয়রকে দিকনির্দেশনা দেন।
৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর এক হোটেলে এই বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়। ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা এবং ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসি এলাকায় খালগুলোর সীমানা চিহ্নিত করে খালের পাড় থেকে অবৈধ সব স্থাপনা উচ্ছেদ করে পাড় বাঁধাই, সবুজায়ন, ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। আগে বৃষ্টি হলেই খালের পানি নেমে যেত। কিন্তু এখন বৃষ্টির কয়েক ঘণ্টা পরও রাস্তা থেকে পানি নামে না। রাস্তাঘাট পাকা, ভবন নির্মাণ, পুকুর, লেক ও অন্যান্য জলাশয় ভরাট ইত্যাদি করে পানি নিষ্কাশনের জায়গা আমরা বিভিন্নভাবে বন্ধ করে ফেলেছি। সর্বত্র ইট-কংক্রিটের স্থাপনা করেছি। খোলা জায়গা থাকলে পানি দ্রুত শোষণ হয়ে যায়। তবে খাল যাতে কেউ দখল করতে না পারে সেজন্য সিটি জরিপ অনুসারে খালের সীমানা চিহ্নিত করে, খালের দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, খাল খনন-পুনর্খনন করে খালে পানির ধারণক্ষমতা বাড়ানো হবে। খালের দুই পাড় বাঁধাই, সবুজায়ন, ওয়াকওয়ে, সাইকেল লেন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া যেসব খালে জলযান চলাচল করতে পারে সেখানে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খালের পানি দূষণ রোধে তিনি বলেন, কোনোভাবেই পয়োনিষ্কাশন লাইনের সংযোগ খালের মধ্যে সরাসরি দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে বায়োলজিক্যাল সেফটিক ট্যাংকি নির্মাণের কথা ভাবা যেতে পারে। ডিএনসিসির নিজ উদ্যোগে কয়েকটি খাল ইতোমধ্যে পরিষ্কার করা হয়েছে। ঢাকার পূর্ব অংশের সব খালের দখলমুক্ত করতে হবে, খালের ওয়াটার ক্যারিং ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে, পাড় বাঁধাই করে সবুজায়ন করে হাঁটার ব্যবস্থা করতে হবে। সব খাল, জলাশয় ও নদীকে নিয়ে ব্লু নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরকে আধুনিক এবং দৃষ্টিনন্দন করতে হলে নগরীর বেদখল এবং হারিয়ে যাওয়া খালগুলোকে উদ্ধার, সংস্কার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে। যে যে জায়গায় খাল দখল হয়েছে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করা হবে।
এই সময় দুই সিটি মেয়রকে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় কঠোর মনিটরিংয়ের পরামর্শ দেন। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, নতুন বছরের প্রথম দিন শুক্রবার হওয়ায় তারপরের দিন, শনিবার থেকেই আমরা প্রাথমিকভাবে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। জিরানী খাল, মান্ডা খাল ও শ্যামপুর খাল এবং পান্থপথ বক্স কালভার্ট ও সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট থেকে বর্জ্য অপসারণের বিশাল কর্মযজ্ঞ আমরা হাতে নিয়েছি। আগামী মার্চের মধ্যে এ তিনটি খাল ও দুটি বক্স কালভার্ট থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা আমরা নির্ধারণ করেছি।
এ অপসারণ কার্যক্রমে ঢাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, এ তিনটি খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং বক্স কালভার্টগুলোর কী অবস্থা, কাজ শুরু না করলে আমরা বুঝতে পারব না। আগামী মার্চের মধ্যে এই তিন খাল ও দুটি বক্স কালভার্ট যদি আমরা পরিষ্কার করতে পারি, তাহলে আগামী জুন নাগাদ বাকিগুলো ধরব।
এসডাব্লিউ/বিবি/নাসি/আরা১২৫৫
আপনার মতামত জানানঃ