বিবর্তনের মাধ্যমে কি নতুন প্রজাতির মানুষের উদ্ভব ঘটবে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০৫০ সালনাগাদ ‘আলাদা’ প্রজাতির মানুষের উদ্ভব ঘটতে পারে।
গ্লোবাল ব্রেইন ইনস্টিটিউটের গবেষক ক্যাডেল লাস্ট দাবি করেছেন, ক্রমবর্ধমান নতুন প্রযুক্তির প্রভাবে মাত্র চার দশকের মধ্যে সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির মানুষ দেখা যাবে।
ক্যাডেল লাস্টের ‘হিউম্যান এভুলিউশন, লাইফ হিস্টোরি থিউরি, অ্যান্ড দ্য এন্ড অব বায়োলজিক্যাল রিপ্রোডাকশন’ নামের ধারণাপত্রটি সম্প্রতি ‘কারেন্ট এজিং সায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষক লাস্টের দাবি, বর্তমানে মানব প্রজাতি বিশাল ‘বিবর্তনজনিত রূপান্তরের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মাত্র চার দশকেরও কম সময়ে মানুষ আরও বেশি দিন বেঁচে থাকার সক্ষমতা অর্জন করবে, বুড়ো বয়সে সন্তান নিতে পারবে এবং নিজেদের কাজের সাহায্যের জন্য বুদ্ধিমান রোবট ব্যবহার করবে। এ ছাড়া মানুষ ওই সময় ভারচুয়াল রিয়েলিটির জগতে অনেক সময় পার করবে।
এই পরিবর্তন এতটাই অর্থপূর্ণ হবে, যাকে বানর থেকে মানুষের বিবর্তন প্রক্রিয়ার সঙ্গে তুলনা করা চলে বলে গবেষক ক্যাডেলের দাবি। তিনি বলেন, ‘আপনার দাদা-দাদির চেয়ে আপনার ৭০-৮০ বছর বয়সটার অনেক পার্থক্য দেখতে পাবেন।’
বিবর্তনবাদী অনেক গবেষক বলছেন, ২০৫০ সালনাগাদ মানুষের আয়ু হবে ১২০ বছরের বেশি।
ব্যবসা ও প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডারে ক্রিস্টিনা স্টারবেঞ্জের এক প্রতিবেদনে ক্যাডেল লাস্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালনাগাদ মানুষের যৌনজীবনের পূর্ণতা আরও দীর্ঘায়িত হবে। মানুষ তাদের জীবনের ব্যাপ্তিকে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং দীর্ঘদিন বাঁচতে চাইবে।
লাস্টের দাবি, ভবিষ্যতে মানুষ সর্বাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে দেহঘড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ইতিমধ্যে আমরা পরিবর্তন লক্ষ করতে পারছি। যেমন যুক্তরাজ্যের একজন নারী গড়ে ২৯.৮ বছর বয়সে প্রথম শিশুর জন্ম দিচ্ছে। সত্তরের দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নারীর ক্ষেত্রে মাত্র ১ শতাংশ নারীকে প্রথম সন্তান নিতে দেখা যেত, ২০১২ সালে তা ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
প্রসঙ্গত, এই সময়ের মধ্যে বদলে যাবে সমুদ্রও। ইতিমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরের জলে কিছু কিছু জীবাণু ও উদ্ভিদ মনের সুখে বংশবৃদ্ধি করছে, অন্যরা কোণঠাসা হচ্ছে৷ পানির অম্লত্ব বাড়ছে, পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমছে৷ বিজ্ঞানীরা ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছেন৷
জার্মান বিজ্ঞানীরা উত্তর সাগরে পরীক্ষা করে দেখছেন, সাগরের পানির নীচে জলবায়ু পরিবর্তনের কী ধরনের প্রভাব পড়ছে; বিশেষ করে কার্বন ডাইঅক্সাইডের নির্গমন বাড়ার ফলে সমুদ্রের প্রাণিজগতের সমস্যা দেখা দিচ্ছে কিনা৷ জলের নীচে এক্সপেরিমেন্টের জন্য প্লাস্টিকের চৌবাচ্চা নামানো হচ্ছে৷ এগুলো যেন সুবিশাল টেস্টটিউব বা রিএজেন্ট গ্লাস৷ জলের মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড প্রবেশ করালে প্রাণী আর উদ্ভিদদের কী প্রতিক্রিয়া হয়, তা দেখতে চান বিজ্ঞানীরা৷
কেননা কার্বন ডাই-অক্সাইড যুক্ত হলে সাগরের জল অ্যাসিডিক হয়ে যায়৷ বাড়ির কাছেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন কিল-এর হেল্মহলৎস সেন্টার ফর ওশেন রিসার্চের বিজ্ঞানীরা৷
ঝিনুক, অ্যালজি অর্থাৎ সমুদ্রশৈবাল আর ব্যাকটেরিয়া মানে জীবাণুরা মিলেমিশে থাকে৷ পরিবেশের কোনো একটি উপাদান বদলালেই চেন রিয়্যাকশন শুরু হয়ে যায়৷
মেরিন বায়োলজিস্ট মার্টিন ভাল জানালেন, ‘‘এই নতুন সরঞ্জাম দিয়ে আমরা এই প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনের অনুরূপ অবস্থা সৃষ্টি করতে পারছি৷ আমরা তার সব ক’টি তাৎপর্যপূর্ণ উপাদান বদলাতে পারি ও তার স্বাভাবিক ওঠানামা অনুকরণ করতে পারি৷”
বিজ্ঞানীরা দেখতে চান, ২০৫০ সালে বালটিক সাগরের অবস্থা কী দাঁড়াবে৷ সেজন্য কখনো জলের তাপমাত্রা বাড়ানো হয়, কখনো তার অম্লত্ব৷
সাগরের প্রাণীরা মরতে শুরু করলে বিশ্বে খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে৷ ভাগ্যক্রমে সাগরের নিজেকে নিরাময় করার ক্ষমতা অসীম৷
জিওমার-এর মেরিন বায়োলজিস্ট মার্টিন ভাল বলেন, ‘‘সাগর যাতে একটা অক্সিজেনশূন্য, দুর্গন্ধ নোংরা জলের ডোবা না হয়ে ওঠে, তা নিশ্চিত করে বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের এই স্বনির্ভর, স্থিতিশীল সহাবস্থান৷ আশা করি এই ভারসাম্য আরো অনেকদিন টিকবে৷”
সাগরের নীচের উদ্ভিদরা যে অম্লত্বের ফলে কতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার প্রমাণ এই সি উইড৷ পানির অ্যালকালাইন ভ্যালু যত কম হবে, ততই অ্যান্টিবডির উৎপাদন কমবে৷ বালটিক আইসোপড-রা সি উইড খেতে খুব ভালোবাসে৷ সাগরের নীচের জীবজগত খুবই জটিল, যা বিজ্ঞানীদের মুগ্ধ করে৷
মার্টিন ভাল বলেন, ‘‘সাগরে ২০ ধরনের বেশি ফাইলা বা বর্গের জীব আছে, যা শুধু সাগরেই পাওয়া যায়৷ প্রত্যেক ফাইলাম বা বর্গকে বিবর্তনের একটা নতুন আবিষ্কার বলা চলে৷ শুধু এই কারণেই জলের নীচে যে জীববৈচিত্র্য আছে, তা ডাঙায় পাওয়া সম্ভব নয়৷”
সাগরের পরিবেশ প্রণালী পরিবর্তনের সঙ্গে কিছুদূর খাপ খাইয়ে নিতে পারে – তবুও মানুষ সাগরের প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের উপর প্রভাব ফেলছে৷ মাইক্রোঅরগ্যানিজম-এও পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়৷ বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছেন, কোন কোন অরগ্যানিজম প্রাণী বা উদ্ভিদ; কী ধরনের পরিস্থিতিতে ব্যাপকভাবে বংশবৃদ্ধি করে৷
পানি যত গরম হবে, তার মধ্যে তত বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকবে৷ অপরাপর দরকারি প্রাণিসত্তা হয়ত কোণঠাসা হবে৷ গবেষকরা এক ধরনের শীঘ্র সতর্কতা প্রণালী বার করার চেষ্টা করছেন; তাঁরা এমন সব ইন্ডিকেটর বা সূচকের খোঁজ করছেন, যেগুলো থেকে বোঝা যাবে, কোন পর্যায় থেকে প্রজাতির বিলোপ রোখা আর সম্ভব নয়৷
এসডব্লিউএসএস/১১৫৫
আপনার মতামত জানানঃ