বিশ্বব্যাপী বিদ্যুতের সংকট তীব্র হচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্বের বড় অর্থনীতি জাপান, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাবে প্রায় বন্ধের মুখে অর্থনীতির চাকা। এর মাঝেই অভিনব এক আবিষ্কার সামনে আসল।
ব্যক্তিগত স্তরে জ্বালানি সাশ্রয়ের ভাবনা অনেকের জন্যই অস্বস্তির বিষয়। স্কটল্যান্ডের এক ক্লাব গ্রাহকদের পরিবেশ সংরক্ষণে অবদান রাখার অভিনব সুযোগ করে দিচ্ছে। ক্লাবের জ্বালানির ব্যবহারও কমে চলেছে।
গ্লাসগো শহরের ‘এসডাব্লিউজিথ্রি’ ক্লাব পার্টির অতিথিদের শরীরের উত্তাপ সংরক্ষণ করে পুনর্ব্যবহার করে। ‘বডিহিট’ নামের প্রণালীর আওতায় ডান্স ফ্লোরকে ছোটখাটো জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়। প্রত্যেক মানুষের অবদান দেড়শো থেকে সাড়ে চারশো ওয়াট।
২০২২ সাল থেকে ক্লাবটি সারাদিন ধরে সেই জ্বালানি ব্যবহার করে। জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির মাত্রা শূন্যে নিয়ে আসাই ক্লাবের লক্ষ্যমাত্রা।
ক্লাবের অপারেশনস ম্যানেজার বব জাভাহেরি বলেন, ‘‘আমরা উত্তাপের ফলে সৃষ্টি হওয়া শক্তি ধারণ করে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। সেই শক্তি সংরক্ষণ করে সেটি দিয়ে সরাসরি বা পরে কোনো সময়ে হিটিং বা এয়ার-কন্ডিশনিং করার চেষ্টা করছি। এভাবে নিজেদের এনার্জি ফুটপ্রিন্ট এবং বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে চাই। সেইসঙ্গে গ্যাসের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে চাই।’’
সিলিংয়ে বসানো বিশেষ ফ্যান তিনটি ডান্সফ্লোর থেকে উষ্ণ বাতাস শুষে নেয়। তারপর হিট পাম্প সেই শক্তি এক ধরনের তরলের মাধ্যমে উঠানে পাঠিয়ে দেয়। দুটি একশো মিটার গভীর গর্তে সেই তরল সংরক্ষণ করা হয় এবং পরে সেটির উত্তাপ ব্যবহার করা হয়।
এমন উদ্ভাবন সত্যি অনবদ্য। জ্বালানি ক্ষেত্রের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ডেভিড টাউন্সএন্ড তিন বছর ধরে সেটি সৃষ্টি করেছেন। টাউনরক এনার্জি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি এই প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে বলেন, এক মিনিট বা তারও কম সময়ে সিলিংয়ের বাক্স থেকে উত্তাপ সরাসরি গর্তে চলে যায়। সেই উত্তাপ প্রয়োজনমতো সময়ে ধারণ করা যায়।
যেমন রাতে উত্তাপ ভরে দিনের বেলায় সেটা বার করতে পারি। অথবা গ্রীষ্মে আমরা অনেক পরিমাণ উত্তাপ সঞ্চয় করে শীতে তা ব্যবহার করতে পারি। অর্থাৎ সংরক্ষণের সময়কাল প্রয়োজন অনুযায়ী মানিয়ে নিতে পারি।
কিন্তু সেই প্রণালী কত পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড কমাতে পারে এবং আদৌ কতটা টেকসই? ডেভিড টাউন্সএন্ড বলেন, ‘‘হিট পাম্প সত্যি খুব দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে। তাছাড়া সামান্য পরিমাণ বৈদ্যুতিক শক্তি দিয়ে অনেক হিটিং বা কুলিং করা সম্ভব। অর্থাৎ, হিটিং সিস্টেম থেকে গ্যাস বয়লার সরিয়ে আমরা বছরে ৭০ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড সাশ্রয় করছি। বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে আসে।
কিন্তু এই ক্লাব ১০০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুতের ট্যারিফ বেছে নিয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ শুধু পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎস থেকেই আসছে। স্কটল্যান্ডে এমন বৃষ্টির দিনে সেই বিদ্যুৎ বায়ুশক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত হয়।’’
প্রায় সাত লাখ ইউরো মূল্যের ‘বডিহিট’ প্রণালী বসানোর খরচ মোটেই কম নয়। তা সত্ত্বেও অন্যান্য ক্লাবও সেই পথে অগ্রসর হতে চাইছে। অপারেশনস ম্যানেজার হিসেবে বব জাভাহেরি মনে করেন, বর্তমানে সবার কাছেই টেকসই প্রক্রিয়া সত্যি গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পক্ষেত্রে সাস্টেনেবিলিটির পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে টিকে থাকার উপায় ভাবতে হবে।
আমাদের জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে, সেই দিশায় আরও এগিয়ে যেতে হবে। ‘বডি হিট’-এর সুন্দর বিষয় হলো, গ্রাহকদের সেই কাজে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে এবং তাদের নতুন করে কিছুই করতে হচ্ছে না। তারা ক্লাবে এসে নেচে আনন্দ পেলেই চলবে। তারা সক্রিয়ভাবে এমন পরিবেশে জ্বালানির ব্যবহার কমাতে অবদান রাখছেন।
পরিবেশ সংরক্ষণ যে বেশ আমোদ দিতে পারে, স্কটল্যান্ডের এই ক্লাব পথপ্রদর্শক হিসেবে তা দেখিয়ে দিচ্ছে। যত উদ্দাম নৃত্য চলবে, পৃথিবীর ততই উপকার হবে।
এসডব্লিউএসএস/২২০০
আপনার মতামত জানানঃ