আর কোনও যন্ত্রের সাহায্য লাগবে না। হাওয়াকল দিয়ে তৈরি করতে হবে না বিদ্যুৎশক্তি। কখন হাওয়া দেয় না দেয়, তার অপেক্ষাও করতে হবে না আর। অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানীদের নয়া গবেষণায় এল যুগান্তকারী সাফল্য।
এবারে একটি তরল দিয়েই তৈরি করা যাবে বিদ্যুৎশক্তি। কোনও রকম বড় সড় ব্যবস্থা ছাড়াই, ওই তরল হালকা বাতাসের উপাদান বিদ্যুতে পাল্টে দেয়। কীভাবে সম্ভব হবে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন?
সম্প্রতি একটি ব্যাকটেরিয়ার শরীরে থাকা একটি এনজাইম বাতাসকে বিদ্যুতে পরিণত করছে বলে দেখতে পায় বিজ্ঞানীরা।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের একটি দল লক্ষ্য করে মাটিতে থাকা একটি ব্যাকটেরিয়ার মধ্যের এনজাইম বাতাসকে বিদ্যুতে পরিণত করে।
সম্প্রতি নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে একদল অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানী এমনই দাবি করেছেন। তাদের বক্তব্য, এই উৎসেচক বাতাসের হাইড্রোজেনকে খুব অল্প পরিমাণে ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ তৈরি করতে পারে।
এই আবিষ্কার সফলভাবে ব্যবহার করা গেলে এমন যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব হবে যা সামান্য পরিমাণ বাতাস থেকেই শক্তি উৎপাদন করতে পারবে।
মেলবোর্নের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডঃ রাইস গ্রিনটার-এর নেতৃত্বে এই গবেষক দলটি হাইড্রোজেন-খেকো এই উৎসেচকের সন্ধান পেয়েছেন মাটিতে বসবাসকারী একটি পরিচিত ব্যাকটেরিয়া থেকে।
মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিসিন ডিসকভারি ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ক্রিস বলেন, আমরা জানি অ্যান্টার্কটিকা ও আগ্নেয়গিরির কাছে থাকা প্রাণী ও কখনও কখনও কিছু ব্যাকটেরিয়া নিজেদের জীবন ও বৃদ্ধির প্রয়োজনে বাতাস থেকে হাইড্রোজেন সংগ্রহ করে।
‘তবে তারা কীভাবে সেটা করে তা আমরা জানতাম না। কিন্তু, একটি এনজাইম যাকে Huc বলা হচ্ছে সেটি বাতাস থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করতে সক্ষম। এই বিষয়ে প্রচণ্ড দক্ষ। আর অন্য এনজাইম বাতাস থেকে যা হাইড্রোজেন সংগ্রহ করে তার থেকে খুবই কম করে এটি।’
ইতোপূর্বে এই তথ্য জানা গেছিল যে কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া বাতাসের হাইড্রোজেনকে ব্যবহার করে নিজেদের পুষ্টি সাধন করে। কিন্তু কী পদ্ধতিতে তারা এটা করে সেই রহস্য এতদিন অজানা ছিল।
এবার এই নতুন আবিষ্কৃত উৎসেচক দিল সেই উত্তর। Mycobacterium smegmatis নামে এক বিশেষ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া থেকে তাঁরা নিষ্কাশিত করেছেন এই উৎসেচক।
এই উৎসেচক ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধি তাপ সহ্য করতে পারে, আবার রেফ্রিজারেটরের ঠাণ্ডাও সহ্য করতে পারে। ফলে গবেষকরা নিশ্চিত যে এই ‘Huc’-ই এই বিশেষ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়াদের চরম প্রতিকূল পরিস্থিতেও বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।
গবেষকদলের সদস্য অ্যাশলে ক্রপ একে প্রাকৃতিক ব্যাটারি বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ এর সাহায্যে যে-বিদ্যুৎটুকু উৎপন্ন হচ্ছে তার স্থায়িত্ব নেহাত কম না।
আজকাল স্থায়ী শক্তি নিয়ে নানাবিধ গবেষণা হচ্ছে। এই গবেষণাটি যদিও একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে সব ঠিকঠাক থাকলে চিরস্থায়ী বা অপ্রচলিত শক্তির ক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলতেই পারে।
এসডব্লিউএসএস/১৮২৫
আপনার মতামত জানানঃ