দশ কোটি বছর আগের একটি দৈত্যকার সামুদ্রিক সরীসৃপ প্রাণির কঙ্কাল আবিষ্কার হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। চলতি বছরের আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে কঙ্কালটি খুঁজে পান একদল জীবাশ্ম গবেষক। ৬ মিটার লম্বা (১৯ ফুট) কঙ্কালটি প্লেসিওসর নামে এক প্রজাতির প্রাণীর।
কুইন্সল্যান্ড মিউজিয়ামের প্যালিওন্টোলজির সিনিয়র কিউরেটর এসপেন নুটসেন এই কঙ্কাল আবিষ্কারের বিষয়টিকে রোসেটা পাথর আবিষ্কারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ১৭৯৯ সালে গ্রানাইটের প্রাচীন মিশরীয় ব্লক (নুটসেন রোসেটা) পাওয়া যায়। যা বিশেষজ্ঞদের হায়ারোগ্লিফিক্সের রহস্যভেদ করতে সাহায্য করেছিল।
এক বিবৃতিতে এসপেন নুটসেন বলেন, ‘অতীতে আমরা এই প্রাণির দেহ ও মাথা একসঙ্গে পাইনি। তাই এই ক্ষেত্রে ভবিষতে গবেষণা অব্যাহত থাকতে পারে। এটি জীবাশ্মবিদদের এ অঞ্চলের ক্রিটেসিয়াস যুগের উৎস, বিবর্তন এবং বাস্তুবিদ্যা সম্পর্কে আরও বেশি অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারে।’
এছাড়া ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ১০ কোটি বছর আগের ‘অ্যালিগেটর গার’ প্রজাতির মাছ ধরা পড়েছিল বড়শিতে। যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস অঙ্গরাজ্যের নিওশো নদী থেকে মার্কিন মৎস্যশিকারি ড্যানি লি স্মিথ বড়শি দিয়ে মাছটি শিকার করনে। কানসাস নদীতে এ প্রজাতির মাছ আগে পাওয়া যায়নি বলেও জানা যায়।
অ্যালিগেটর গার প্রজাতির মাছকে ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ বলা হয়। পৃথিবীতে এমন অনেক প্রাণী আছে, যেগুলো সুদূর অতীতে জন্ম নিয়ে কোনো পরিবর্তন ছাড়াই এখনো টিকে রয়েছে। কিন্তু এর সমসাময়িক প্রাণীরা ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এমন প্রাণীকেই সাধারণত জীবন্ত জীবাশ্ম বলা হয়। ইতিমধ্যেই অ্যালিগেটর গারের যেসব ফসিল খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, সেগুলো প্রায় ১০ কোটি বছর আগের বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।
একটু খুঁজলেই হয়তো ১০ কোটি বছর আগের পৃথিবীর আরো অনেক নিদর্শনই খুঁজে পাবো আমরা। তবে এবার কোন নিদর্শন নয় আমরা জানতে পারবো কেমন ছিল পৃথিবী সেই ১০ কোটি বছর আগে। আর কিভাবে জানব সেটাই জানবো এখন।
জলবায়ু পরিবর্তন, টেকটোনিক পাতের চলাচল, নিজের অক্ষের চারিকে ঘূর্ণন—একাধিক কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত বদলেছে পৃথিবীর আকৃতি। এমনকি এখনও নিয়মিত একটু একটু করে বদলাচ্ছে পৃথিবীর আকার।
তবে এই বদল অত্যন্ত ধীর হওয়ায় তা সাধারণভাবে মানুষের চোখে দৃশ্যমান নয়। এবার এই পরিবর্তনের ধারাকে বুঝতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে বিশেষ মডেল তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা। যা মানুষের সামনে তুলে ধরবে বিগত ১০ কোটি বছর আগের পৃথিবীর ছবি।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফ্রান্সের ভূতাত্ত্বিকরা যৌথভাবে জন্ম দিয়েছেন এই বিশেষ মডেলটির। সম্প্রতি যা জায়গা করে নিয়েছে খ্যাতনামা বিজ্ঞান পত্রিকা ‘সায়েন্স’ জার্নালে।
অবশ্য শুধু ১০ কোটি বছর আগের ছবিই নয়, পৃথিবীর আকারের ধারাবাহিক বিবর্তন ধরা পড়বে এই মডেলে। আসলে ১০ কোটি বছরের সময়সীমা ১০ লক্ষ সময়ফ্রেমে ভাগ করেছেন গবেষকরা।
প্রতিটি সময়ফ্রেমের জন্যই পৃথক পৃথকভাবে ছবি তৈরি করেছে এই এআই। আর এই ছবিগুলিকে পর পর দেখলেই লক্ষ্য করা যাবে পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক গঠনের ধারাবাহিক পরিবর্তন।
প্রাথমিকভাবে টেকটোনিক পাতের চলাচলের জন্য ভূত্বকের গঠনগত বদল, পরবর্তীতে সেই বদলের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা হিমযুগের শুরুয়াত—সবটাই ধরা পড়েছে এই মডেলে। ধরা পড়েছে হিমবাহ থেকে সৃষ্ট নদী এবং সমুদ্রের তরঙ্গপ্রবাহে ভূমিক্ষয়ের কারণে পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক গঠনের পরিবর্তনও।
পাশাপাশি ক্রমাগত ঘূর্ণনের কারণে কমেছে পৃথিবীর দুই মেরুর দূরত্বও। উল্লেখ, এই মডেলে তৈরি প্রতিটি ছবিই হাইরেজোলিউশন হওয়ার কারণে প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক গঠন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ জিওসায়েন্সের গবেষক ও সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ডঃ ট্রিস্টান সেলেসের মতে, পৃথিবীর ভবিষ্যৎ বুঝতে অতীতের পর্যবেক্ষণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই কারণেই এই মডেল তৈরির প্রচেষ্টা। পৃথিবীর আকৃতি বদলের জন্য দায়ী প্রতিটি রাশিকেই বিবেচনা করা হয়েছে এই মডেলে।
ফলে, পরবর্তী গবেষণায় পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নির্ণয় করতে ও সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহদের ভূপ্রাকৃতিক পরিবর্তন বুঝতে এই মডেল বিশেষভাবে সাহায্য করবে গবেষকদের।
এসডব্লিউএসএস/১৭১০
আপনার মতামত জানানঃ