সূর্যকে চিনতে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা নিজেদের লড়াই অব্যাহত রেখেছেন। এখন তো সূর্যকে আরও কাছ থেকে জানতে সূর্যের দিকে একটি মহাকাশযান পাঠিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
সেই যানের নাম সোলার অরবিটার। যা সূর্যকে আরও কাছ থেকে জানবে, তার অনেক অজানা তথ্য বিজ্ঞানীদের যোগান দেবে। যে তথ্য দিতে সবচেয়ে বড় এবং কার্যকরী যোগান হল সূর্যের খুব কাছ থেকে ছবি।
যে ছবি সূর্যকে অনেক ভাল করে জানতে সাহায্য করছে। আর তা করতে গিয়ে গত জানুয়ারি মাসে এই সোলার অরবিটার এক ছবি পাঠায় যা দেখে সকলেই অবাক হয়ে যান। সূর্যের নিচের দিকে একটি কালো বিন্দু দেখতে পাওয়া যায়।
বিজ্ঞানীরা দেখেন সেই কালো বিন্দু সূর্যের গনগনে হলুদ জ্বলন্ত ভাটায় এক কলঙ্কের মত দেখা যাচ্ছে। যা দেখার পর বিজ্ঞানীরা সেটি ভাল করে দেখে দেখেন সেটি ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি সেটি কি! সেটি আর কিছুই নয়, বুধ গ্রহ। সৌরমণ্ডলের গ্রহদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট গ্রহ এবং সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ। যেটি আদপে প্রায় চাঁদের আকারের। ফলে অনুমেয় যে গ্রহটি যথেষ্ট ছোট।
বুধ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতেও সবচেয়ে কম সময় নেয়। মাত্র ৮৮ দিন। সেই বুধকেই কালো বিন্দুর মত দেখাল ছবিতে। যা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। বুধের এই ছবি বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে।
এদিকে, এর কয়েক দিন আগে জানা গেছে, সূর্যের ভূপৃষ্ঠ থেকে একটি বিশাল অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। সেই অংশটি সূর্যের উত্তর মেরুর চারপাশে ঘূর্ণিঝড়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ঘটনায় বিস্মিত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কেন এমন হল, বিশ্লেষণ করতে শুরু করে দিয়েছেন তারা।
পৃথিবী সহ আরও ৭টি গ্রহ যে নক্ষত্রটিকে ঘিরে আবর্তন করছে, সেই সূর্য নিয়ে মহাকাশবিজ্ঞানীদের উৎসাহের শেষ নেই। কিন্তু সৌরমণ্ডলের প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত এই নক্ষত্রটির সাম্প্রতিক এই ঘটনা রীতিমতো হতবাক করে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের।
সূত্র মতে, সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে একটি বিশাল অংশ ভেঙে পড়ে নক্ষত্রটির উত্তর মেরুতে সরে এসে বিশাল এক ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি করেছে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণাকারী সংস্থা ‘নাসা’-র জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে সবে গত সপ্তাহে এই মহাজাগতিক দৃশ্যটি জানা গিয়েছে।
মহাকাশ সংক্রান্ত গবেষণার অংশ হিসেবে কয়েক বছর আগে এই টেলিস্কোপটি উৎক্ষেপণ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনেটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন(নাসা)।
সম্প্রতি এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে ট্যুইট করেছেন স্পেস ওয়েদার ফোরকাস্টার ট্যামিথা স্কোভ। মহাকাশের আবহাওয়া নিয়ে পূর্বাভাস দেওয়াই তার কাজ। কাজটি করতে গিয়েই তিনি ঘটনাটি আবিষ্কার করেছেন।
নাসার কর্মকর্তা ও স্পেস ওয়েদার ফোরকাস্টার ড. তামিথা সকোভ নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে সূর্যের সেই ছবিটি শেয়ার করেছেন। ছবিটির ক্যাপশনে তামিথা স্কোভ বলেন, ‘সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে সরে যাওয়া অংশটি নক্ষত্রের উত্তর মেরুতে বিশাল এক ঝড়ের সৃষ্টি করেছে।’
নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে তার কোনো অংশ ভেঙে পড়া বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। গত ৬-৭ দশকে কয়েক বার এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে নাসা।
তবে সূর্যের কোনো অংশ ভেঙে পড়ে বাতাসে ভেসে নক্ষত্রটির প্রান্তে ঝড়ের সৃষ্টি করার ঘটনা নাসার ইতিহাসে এই প্রথম। এই ব্যাপারটিই অবাক করেছে মার্কিন মহাকাশবিজ্ঞানীদের।
সৌরমণ্ডলের প্রাণকেন্দ্র সূর্যের পুরোটাই আসলে গ্যাসীয় তরল। পৃথক এক টুইটবার্তায় ড. তামিথা স্কোভ বলেন, সূর্যের যে অংশটি বিচ্ছিন্ন হয়ে উত্তরপ্রান্তে সরে এসেছে, সেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৮ ঘণ্টার মধ্যে। এ সময় সূর্যপৃষ্টের ওই অংশে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯৬ হাজার মাইল।
নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে এ সম্পর্কিত আরও বিশদ তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন তারা। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব আনুমানিক ১৪ কোটি ৯৬ লাখ। তবে পৃথিবীর সঙ্গে সূর্যের কিছু বিস্ময়কর সম্পর্ক রয়েছে।
এসডব্লিউএসএস/১৫১৫
আপনার মতামত জানানঃ