আস্ত সূর্য ভেঙে দুটোকরো হয়ে গেছে। হ্যাঁ, কল্পনা করাও অসম্ভব এই ঘটনাটিই সম্প্রতি ঘটেছে। যা নিয়ে বিজ্ঞানীরা চিন্তিত। সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।
জানা গিয়েছে, সূর্যের ভূপৃষ্ঠ থেকে একটি বিশাল অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। সেই অংশটি সূর্যের উত্তর মেরুর চারপাশে ঘূর্ণিঝড়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ঘটনায় বিস্মিত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কেন এমন হল, বিশ্লেষণ করতে শুরু করে দিয়েছেন তারা।
পৃথিবী সহ আরও ৭টি গ্রহ যে নক্ষত্রটিকে ঘিরে আবর্তন করছে, সেই সূর্য নিয়ে মহাকাশবিজ্ঞানীদের উৎসাহের শেষ নেই। কিন্তু সৌরমণ্ডলের প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত এই নক্ষত্রটির সাম্প্রতিক এই ঘটনা রীতিমতো হতবাক করে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের।
সূত্র মতে, সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে একটি বিশাল অংশ ভেঙে পড়ে নক্ষত্রটির উত্তর মেরুতে সরে এসে বিশাল এক ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি করেছে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণাকারী সংস্থা ‘নাসা’-র জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে সবে গত সপ্তাহে এই মহাজাগতিক দৃশ্যটি জানা গিয়েছে।
মহাকাশ সংক্রান্ত গবেষণার অংশ হিসেবে কয়েক বছর আগে এই টেলিস্কোপটি উৎক্ষেপণ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনেটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন(নাসা)।
সম্প্রতি এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে ট্যুইট করেছেন স্পেস ওয়েদার ফোরকাস্টার ট্যামিথা স্কোভ। মহাকাশের আবহাওয়া নিয়ে পূর্বাভাস দেওয়াই তার কাজ। কাজটি করতে গিয়েই তিনি ঘটনাটি আবিষ্কার করেছেন।
নাসার কর্মকর্তা ও স্পেস ওয়েদার ফোরকাস্টার ড. তামিথা সকোভ নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে সূর্যের সেই ছবিটি শেয়ার করেছেন। ছবিটির ক্যাপশনে তামিথা স্কোভ বলেন, ‘সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে সরে যাওয়া অংশটি নক্ষত্রের উত্তর মেরুতে বিশাল এক ঝড়ের সৃষ্টি করেছে।’
নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে তার কোনো অংশ ভেঙে পড়া বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। গত ৬-৭ দশকে কয়েক বার এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে নাসা।
তবে সূর্যের কোনো অংশ ভেঙে পড়ে বাতাসে ভেসে নক্ষত্রটির প্রান্তে ঝড়ের সৃষ্টি করার ঘটনা নাসার ইতিহাসে এই প্রথম। এই ব্যাপারটিই অবাক করেছে মার্কিন মহাকাশবিজ্ঞানীদের।
সৌরমণ্ডলের প্রাণকেন্দ্র সূর্যের পুরোটাই আসলে গ্যাসীয় তরল। পৃথক এক টুইটবার্তায় ড. তামিথা স্কোভ বলেন, সূর্যের যে অংশটি বিচ্ছিন্ন হয়ে উত্তরপ্রান্তে সরে এসেছে, সেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৮ ঘণ্টার মধ্যে। এ সময় সূর্যপৃষ্টের ওই অংশে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯৬ হাজার মাইল।
নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে এ সম্পর্কিত আরও বিশদ তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন তারা। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব আনুমানিক ১৪ কোটি ৯৬ লাখ। তবে পৃথিবীর সঙ্গে সূর্যের কিছু বিস্ময়কর সম্পর্ক রয়েছে।
উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, কয়েক বছর আগে সূর্যে বড় এক সৌরঝড় হয়েছিল। সেই ঝড়ের প্রভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল পৃথিবীর মোবাইল ও ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা।
২০২২ সালের এক গবেষণা থেকে জানা যায় সূর্য একটি বিশেষভাবে সক্রিয় সময়ের মধ্যে রয়ে গেছে, পর্যবেক্ষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, আগামী কয়েক দিন সৌর কার্যকলাপের ‘উচ্চ’ স্তর চলতে পারে। এর ফলে সূর্য থেকে আরও বেশি শিখা আসতে পারে।
সম্প্রতি গাইয়া মহাকাশযান সূর্যে একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে। তাতেই স্পষ্ট হয়েছে সূর্যের অতীত ও ভবিষ্যৎ। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই ধারণায় উপনীত হয়েছে যে, সূর্যের এখন মাঝবয়সী অবস্থা। সূর্যের আনুমানিক বয়স ৪.৫৭ বিলিয়ন বছর।
বিজ্ঞানীরা এখন খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে, এই পরিস্থিতি কী কারণে হল। নক্ষত্রের কত ভর রয়েছে, তার রাসায়নিক গঠন কী, তার মধ্যে দিয়েই খোঁজার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আর এই কাজে বিজ্ঞানীদের সহযোগী হয়ে উঠেছে গাইয়া মহাকাশ যানের প্রেরিত ডেটাসেট। ফ্রান্সের অবজারভেটারি দে লা সিটি ডি’আজুর এ ব্যাপারে সবথেকে সঠিক পর্যবেক্ষণ দিতে সক্ষম হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে আমাদের সূর্যের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে। গবেষকরা এ ব্যাপারে উপসংহারে পৌঁছেছে। সূর্য চার বিলিয়ন বছর বয়সে সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পৌঁছবে। তারপর এটি শীতল হবে। আকারেও বৃদ্ধি পাবে। এবং লাল দৈত্য নক্ষত্রে পরিণত হবে। ১০১১ বিলিয়ন বছর বয়সে সূর্য তার জীবনের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।
এসডব্লিউএসএস/১৫৫০
আপনার মতামত জানানঃ