মড়ক লেগেছে মৌমাছির। প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যু হচ্ছে হাজার হাজার পতঙ্গের। এই অবস্থা চলতে থাকলে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে এই প্রাণী। তাই মৌমাছি বাঁচাতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন বৈজ্ঞানিকরা।
মড়ক ঠেকাতে টিকাকরণ কর্মসূচিও শুরু করে দিচ্ছেন তারা। বিশ্বের মধ্যে প্রথমবার এই ঘটনা ঘটতে চলেছে আমেরিকায়। সম্প্রতি মৌমাছিকে ভ্যাকসিন দেয়ার নীতিতে সিলমোহর দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। এর পরই শুরু হয়েছে তোড়জোড়।
ব্রিটিশ সংবাদসংস্থার দাবি, চলতি সপ্তাহেই মার্কিন কৃষি দফতরের তরফে এই ভ্যাকসিনেশনের জন্য লাইসেন্স দেয়া হবে। এর পরই মৌমাছি পালনের কলোনিগুলিতে গণহারে এই ভ্যাকসিনেশন চালু করবে আমেরিকার সরকার।
গত কয়েক বছর ধরেই একসঙ্গে হাজার হাজার মৌমাছির মৃত্যু হওয়ায় সমস্যার মুখে পড়েছেন আমেরিকার মধুচাষীরা। বিষয়টি নজরে আসার পরই এই নিয়ে গবেষণা শুরু করেন পতঙ্গবিদরা।
মৌমাছির এই মড়কের নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য মৌচাকে পরজীবীর আক্রমণ। এছাড়া রয়েছে জলবায়ুগত পরিবর্তনের সমস্যা।
মার্কিন কৃষি দফতরের কর্মকর্তাদের দাবি, চাকে পরজীবী চলে এলে অনেক সময়ই রানিকে ছেড়ে চলে যায় অন্য মৌমাছিরা। তখনই একসঙ্গে মৃত্যু হতে থাকে মৌমাছিগুলির। এছাড়া এই অবস্থায় অনেক সময় মরে যায় রানি মৌমাছিও।
পতঙ্গবিদদের দাবি, মৌমাছির মড়কের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল মৌমাছির ফাউলব্রুড রোগ। ব্যাকেটেরিয়া ঘটিত এই রোগে দ্রুত হারে মৌমাছির মধ্যে সংক্রমণ ছড়ায়। এই রোগের কোনও প্রতিকার জানা না থাকায় মৌমাছিদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় মড়ক।
রোগীটি অতিসংক্রামক হওয়ায় অধিকাংশ সময়তেই তা ধরা পড়লে গোটা চাক পুড়িয়ে দিতে হয়। এই সমস্যা দূর করতেই এবার ভ্যাকসিনেশনের রাস্তায় হাঁটতে চলেছে মার্কিন কৃষি দফতর।
মার্কিন পতঙ্গবিদদের দাবি, মৌমাছির ফাউলব্রুড রোগের মূল কারণ পেনিব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়ার লার্ভার একটি নিষ্ক্রিয়া সংস্করণ তৈরি করেছেন বৈজ্ঞানিকরা। সেটাই জেলির মাধ্যমে রানি মৌমাছিকে খাওয়ানো হবে।
একবার সেটা রানি মৌমাছির দেহে চলে গেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে তাদের। তখন ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগে মৃত্যুর পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে। আর এর সুফল পাবেন মধু চাষীরাও।
উল্লেখ্য, চাষাবাদের জন্য মৌমাছি অপরিহার্য৷ এরা একশটি ফসলের মধ্যে সত্তরেরও বেশি ফসলের পরাগায়ণ করে৷ তার ফলে যে পরিমাণ ফসল উৎপন্ন হয়, তা সারা বিশ্বের নব্বই শতাংশ খাবারের যোগান দেয়৷ ফলে বিশেষজ্ঞরা মৌমাছি কমে যাওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করছেন৷
একদিকে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৯ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়ার রেকর্ড ছুঁতে চলেছে৷ অন্যদিকে এই বেড়ে চলা জনসংখ্যা আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে মৌমাছির মতো প্রকৃতির ছোটখাটো কীট পতঙ্গের উপর, যারা শস্য উৎপাদনে সাহায্য করে৷
মৌমাছিরা ৭০ শতাংশেরও বেশি শস্যকে পরাগনিষিক্ত করে বিশ্বের ৯০ শতাংশ খাদ্য যোগান দিতে সাহায্য করে৷ কিন্তু ১৯৬০ সাল থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে মৌমাছিদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে৷ সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে নতুন করে আরও কতগুলো জায়গায় মৌমাছির বিলুপ্তি শুরু হয়েছে, যেখানে আগে এমনটি ঘটেনি৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌমাছি না থাকলে কিংবা এর সংখ্যা কমে গেলে, কমে যাবে ফসল ও ফলের উৎপাদনও। ফলে দেখা দেবে খাদ্য সংকট।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এমন পরিস্থিতির দিকেই এগিয়ে চলছে পৃথিবী। কেননা, এক দশক আগেও বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ মৌমাছি ছিল, বর্তমানে তার মাত্র দুই তৃতীয়াংশ টিকে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছে, পৃথিবী থেকে যদি মৌমাছি হারিয়ে যায় তবে মানব সভ্যতা টিকবে কেবল ৪ বছর! অর্থাৎ, ছোট্ট এই পতঙ্গ ছাড়া টিকে থাকার খুব বেশি সময় পাবে না মানুষ।
এসডব্লিউএসএস/১৭৫৫
আপনার মতামত জানানঃ