‘আমরা সব মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতির কথা বলে আসছিলাম। প্রতিবছর ৩০ হাজার শিশুর জন্ম হিসাবে গত ৪ বছরে আরও ১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বেড়েছে’। বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব। অর্থাৎ দেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১২ লাখ। কমে এসেছে বৈদেশিক সাহায্য। দেশে বাড়ছে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, যেখানে রোহিঙ্গাদের সংশ্লিষ্টতা বাড়ছে। এরকম অবস্থায় বিভিন্ন কাজে দক্ষ প্রায় অর্ধ শতাধিক রোহিঙ্গাকে স্থায়ীভাবে নিয়ে যেতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এটা চরম রসিকতা ছাড়া আর কি!
উল্লেখ্য, বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের ওই নাগরিকরা বর্তমানে কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বাংলাদেশের মানবিক আশ্রয়ে রয়েছেন। সুনির্দিষ্টভাবে নাম-পরিচয়ের বিস্তারিত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনে সম্মত অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গার একটি তালিকা সম্প্রতি ঢাকাকে দিয়েছে ওয়াশিংটন।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বাস্তুচ্যুতির ৫ বছরেও রাখাইনে প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়া কিছু রোহিঙ্গাকে স্থায়ীভাবে তাদের দেশে পুনর্বাসনের চিন্তা করছে। এ নিয়ে আমেরিকা, কানাডা এবং ইউরোপের অনেক দেশের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব এবং তালিকা রয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের এখনো তৃতীয় দেশে রোহিঙ্গাদের পাঠানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
সূত্রমতে, আজ ৪ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েস। তার সফরে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট নানামুখী সংকট বিশেষত: বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের কোর ইস্যুগুলো ছাড়াও রোহিঙ্গা সংকটের রাজনৈতিক সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে।
প্রাসঙ্গিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। সেগুনবাগিচা বলছে, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঢাকা সফরে আসছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েস।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার অফিসে রিপোর্টকারী ওই কর্মকর্তা আজ বাংলাদেশে পৌঁছাবেন। চারদিনের সফরে সরকার এবং সরকারের বাইরে বিভিন্ন পর্যায়ে সিরিজ বৈঠক হবে তার। রেওয়াজ অনুযায়ী পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার আলোচনা হবে। এনজিও, আইএনজিও এবং শরণার্থী নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের অধীন সংস্থাগুলোর আঞ্চলিক প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমের সঙ্গেও তার মতবিনিময় হবে।
বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয়ে থাকা ১০ লাখের অধিক মিয়ানমার নাগরিকের অবস্থা সরজমিন দেখতে তিনি আগামীকাল কক্সবাজার যাচ্ছেন। সেখান থেকে ফেরার পর আগামী ৬ই ডিসেম্বর তার ভাসানচরস্থ শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের কথা রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, স্টেট ডিপার্টমেন্টের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারির কাছে সরাসরি রিপোর্ট প্রদানকারী জনসংখ্যা, শরণার্থী এবং অভিবাসন বিষয়ক ব্যুরোর প্রধান (এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট) জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েস এমন এক সময় বাংলাদেশে আসছেন যখন ঘোষণা দিয়ে রাজপথে শক্তি প্রদর্শনে নেমেছে ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ এবং সর্ববৃহৎ বিরোধী দল বিএনপি। অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কোন ফর্মে হবে?
বন্ধু এবং উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে এটা স্পষ্ট করা হয়েছে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনটি অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু, সহিংসতা মুক্ত এবং দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। ভোটে জনরায়ের প্রতিফলন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বন্ধু রাষ্ট্রগুলো। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবারের ভোটের আগে এবং পরের রোমাঞ্চকর সময়গুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রাখবে বলে আগাম ঘোষণা দিয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে কাজটি করবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্যুরো এবং অফিসগুলো। যার অন্যতম হচ্ছে জনসংখ্যা, শরণার্থী এবং অভিবাসন বিষয়ক ব্যুরো।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের যেসব আইনি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা চলছে অনেকদিন ধরে। মার্কিন সহকারী মন্ত্রীর সফরে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কীভাবে পুনর্বাসন সহজে করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি এসিসটেন্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার বাংলাদেশ সফর করেন। সেই সফরে তিনি রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেন।
মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে অস্থায়ী আশ্রয়ে কাটানো প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশ থেকে কিছু শরনার্থীকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করে ওয়াশিংটন। রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে পুনর্বাসনের বিষয়টি সামনে আসে বলে জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়নমারের গণহত্যার পঞ্চম বছরপূর্তীতে দেয়া বিবৃতিতে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের ঘোষণা দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন।
মানবিক সাড়া দান কার্যক্রমের জরুরি অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং এ অঞ্চলের অন্যান্য স্থানে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন উল্লেখজনক সংখ্যায় বাড়াতে কাজ করছে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকটে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বছরের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৭ কোটি ডলার অতিরিক্ত মানবিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। ২০১৭ থেকে সাল এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকটে ১৯০ কোটি ডলারের বেশি সহযোগিতা করেছে।
এসডব্লিউএসএস/১৬০০
আপনার মতামত জানানঃ