এবার সৌদি মাতাতে যাচ্ছে কোরিয়ান মেয়েদের জনপ্রিয় কে-পপ ব্যান্ড ব্ল্যাকপিঙ্ক। পপ, হিপ-হপ ও ট্র্যাপের মিশ্রণে নাচ ও গান গেয়ে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যান্ড ব্ল্যাকপিংক।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে দীর্ঘকালের রক্ষণশীলতার ঐতিহ্য থেকে ধূমধাম করেই বেরিয়ে আসছে সৌদি আরব।
কয়েক বছর আগেও পুরুষ অভিভাবক ছাড়া যে দেশে নারীরা বাড়ির বাইরে যেতে পারতেন না, সে দেশেই এখন গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে পার্টি-কনসার্টে নারীদের সরব উপস্থিতি।
এরই ধারাবাহিকতায় এবার সৌদি মাতাতে যাচ্ছে কোরিয়ান মেয়েদের জনপ্রিয় কে-পপ ব্যান্ড ব্ল্যাকপিঙ্ক। পপ, হিপ-হপ ও ট্র্যাপের মিশ্রণে নাচ ও গান গেয়ে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যান্ড ব্ল্যাকপিংক।
মঙ্গলবার এ খবর জানা গেছে আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে। ২০২৩-এর ২০ জানুয়ারি রিয়াদ সিজনের থার্ডের অংশ হিসেবে ব্ল্যাকপিঙ্কের কনসার্ট হবে রাজধানী রিয়াদে।
গত ২১ অক্টোবর শুরু হওয়া রিয়াদ সিজনের এবারের আসরে প্রায় ২০ লাখ দর্শক যোগ দিয়েছে। ১৫টি এলাকায় কনসার্ট, নাটক, উৎসব, ফুড ফেস্টিভ্যাল এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে রিয়াদকেন্দ্রিক এই উৎসবটি।
রিয়াদ সিজন জানিয়েছে, ব্ল্যাকপিঙ্কের ফ্যানক্লাবের সদস্যরা ৮ নভেম্বর থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন প্রিয় ব্যান্ড দলের কনসার্টের। বাকি দর্শকদের টিকিটের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত।
‘বর্ন পিঙ্ক’ শীর্ষক ওয়ার্ল্ড ট্যুরের অংশ হিসেবে রিয়াদ সিজনে যোগ দিতে যাচ্ছে ব্ল্যাকপিঙ্ক। এই ট্যুরে রিয়াদ ছাড়াও ম্যানিলা, আবুধাবি, কুয়ালালামপুর, জাকার্তাম ব্যাংকক ও হংকংয়েও তাদের কনসার্ট হবে।
ব্যান্ডের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, পুরো বিশ্ব থেকে তাদের ভক্তরা এই ওয়ার্ল্ড ট্যুরে যোগ দেবে।
এদিকে, কিছুদিন আগে প্রথমবার আরব বিশ্বের কোনো দেশ হিসেবে হ্যালোইন উৎসবে মেতে ওঠে সৌদি আরব। বেশ ধুমধাম করেই উৎসবটি পালন করা হয়। উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের অনেককেই সেজেছিলেন বিচিত্র সব সাজে।
উপসাগরীয় দেশগুলোতে হ্যালোইন উৎসব পালন করা হয় না। তবে ব্যতিক্রম দেখা গেছে সৌদি আরবে। উল্লেখ্য, যারা ব্যতিক্রমী সাজে ওই ইভেন্টে গিয়েছিলেন, সেখানে তাদের বিনামূল্যে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল—রোমাঞ্চ আর উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি করা। সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
আরব নিউজ জানায়, দুইদিন ব্যাপী হ্যালোইন উৎসব চলে। উৎসবে বিনামূল্যে প্রবেশ করেন ব্যতিক্রমী সাজে আগতরা। উৎসবে আগতরা সৌদি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ডিজাইন করা কস্টিউম পরেন। এ উৎসবে পরিবারসহ যোগ দেন অনেকে। এ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য ছিল মজা, রোমাঞ্চ ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা।
হ্যালোইন উৎসব উদযাপন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ ও তীব্র নিন্দা উগড়ে দেন তারা। বিশেষ করে উৎসবটি উদযাপনে রিয়াদে অদ্ভুত দর্শন যে ভাস্কর্য তৈরি করা হয়, তার ছবি ও ভিডিও ফেসবুক, টুইটারে আপলোড করে সৌদি নেটিজেনদের দাবি, এমন ভাস্কর্য ইসলামের আদর্শের পরিপন্থী।
মক্কা-মদিনার দেশে এই পাশ্চাত্য সংস্কৃতি কখনই মেনে নেয়ার মতো নয় বলে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন কেউ কেউ।
এর আগে সৌদি আরবের উপকূলীয় শহর জেদ্দায় একটি ফরাসি রেস্তোরাঁ নারীদের হিজাব বা ইসলামিক পোশাক পরে সেখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বিষয়টি নিয়ে ক্রেতাসাধারণ ও সৌদি নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
এখানেই শেষ নয়, ঐতিহ্যগতভাবে সৌদি পুরুষদের পরা লম্বা আলখেল্লাও নিষিদ্ধ করেছে রেস্তোরাঁটি। স্বল্প পরিচিত একটি সংবাদমাধ্যমে করা খবরটিতে গুগল ও ফেসবুক থেকে সৌদি নাগরিকদের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, সৌদি আরবকে আরও আধুনিক, উদার এবং ব্যবসা ও পর্যটনবান্ধব করতে ২০১৬ সালে ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছিলেন ক্রাউন প্রিন্স মোহামেদ বিন সালমান৷ এরপর বেশ কিছু আইনে পরিবর্তন করা হয়৷ ফলে সেদেশের নারীরা এখন গাড়ি চালানো, একা সিনেমা হলে যাওয়া, ঘুরতে যাওয়াসহ নানান কাজ করতে পারছেন৷
সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোও ভিশন ২০৩০ এর অংশ বলে বিবেচনা করা যেতে পারে৷ এমনও কথা শোনা যাচ্ছে, সেখানে অ্যালকোহল পান বিষয়ে সীমিত পরিসরে হলেও অনুমোদন দেয়া হতে পারে৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কট্টর রক্ষণশীল দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব দেরি হলেও নিজেদের বুঝতে পারার চেষ্টা করছে। উবার চালানো, সাইকেল চালানো সৌদি নারীদের জন্য যুগান্তকারী এক ব্যাপার বটে। বিশ্বের অন্যান্য স্বাধীন নারীদের মতো সৌদি আরবের নারীরাও নিজেদের স্বাধীনতা ফিরে পাবেন এমন প্রত্যাশা লক্ষণীয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯০০
আপনার মতামত জানানঃ