বাংলাদেশে সাড়ে তিন কোটির বেশি শিশু ক্ষতিকারক সীসা শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে। বড়দের তুলনায় শিশুদের শরীরে সীসার প্রভাব বেশি।
সম্প্রতি এক গবেষণার বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, দেশের চারটি জেলার শিশুদের রক্তে সীসার উপস্থিতি এবং তার মধ্যে ৬৫ শতাংশের রক্তে সীসার পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধবিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) নির্ধারিত মাত্রা ৩ দশমিক ৫ মাইক্রো গ্রাম। এর চেয়ে কারও শরীরে সীসার উপস্থিতি বেশি থাকলে তা ক্ষতিকর বলে বিবেচিত।
ইউনিসেফের উদ্যোগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর, আন্তর্জাতিক উদারময় গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআর,বি সম্প্রতি এই গবেষণা পরিচালনা করে। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সেমিনারে আইইডিসিআর-এর গবেষক নওরোজ আফরিন গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, টাঙ্গাইল, খুলনা, সিলেট, পটুয়াখালী- এ চার জেলার শিশুদের ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। পরীক্ষার আওতায় আসা ৯৮০ শিশুর সবার রক্তে সীসার উপস্থিতি মিলেছে। এরমধ্যে ৬৫ শতাংশ শিশুরই রক্তে সিসার মাত্রা যুক্তরাষ্টের সিডিসি নির্ধারিত মাত্রা ৩ দশমিক ৫ মাইক্রো গ্রামের বেশি। দুই বছর থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের শতভাগের শরীরেই সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে আইসিডিডিআর,বির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় তারা ৫০০ শিশুর রক্ত পরীক্ষা করেছেন। তাদের সবার শরীরেই সীসার উপস্থিতি মিলেছে।
সীসার প্রভাবে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা কমে যায়। মনযোগের ঘাটতি তৈরি করে এবং লেখাপড়ায় তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। ছোটবেলা থেকে যাদের শরীরে সীসার উপস্থিতি, তাদের অনেকে ভবিষ্যতে আগ্রাসী হয়ে ওঠার শঙ্কা রয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, সীসার প্রভাবে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা কমে যায়। মনযোগের ঘাটতি তৈরি করে এবং লেখাপড়ায় তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। ছোটবেলা থেকে যাদের শরীরে সীসার উপস্থিতি, তাদের অনেকে ভবিষ্যতে আগ্রাসী হয়ে ওঠার শঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া বাজারের বিভিন্ন পণ্য পরীক্ষা করে ৩৬৭টি পণ্যের মধ্যে ৯৬টিতে সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। চারটি শহরে স্থানীয়ভাবে তৈরি খেলনা, রং, অ্যালুমিনিয়াম ও সিলভারের হাঁড়িপাতিল, সবজি, চাল ও মসলার নমুনায় সীসার উপস্থিতি পাওয়া যায়। চারটি শহরের মধ্যে আছে ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনা। এছাড়া মাটি, ছাই, পোড়া মাটি ও হলুদের গুঁড়ায় সীসার উপস্থিতি দেখা গেছে।
গবেষণার তথ্য বলছে, সীসা দ্বারা দূষিত হলুদের গুঁড়া গর্ভবতী নারীর শরীরে উচ্চ মাত্রার সীসার উপস্থিতির কারণ। পল্লী এলাকায় পরীক্ষা করা ৩০ শতাংশ গর্ভবতী নারীর শরীরে সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সীসাদূষণের বিষয়টি আমাদের অনেকের জানা নেই। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা হচ্ছে। সেটিও আমরা অনেকে জানি না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ বিষয়টি নিয়ে সরব। কিন্তু অনেক দেশই এটা নিয়ে খুব বেশি তৎপর নয়। সীসা একটি বিষাক্ত পদার্থ। যা খাবার, পানীয় ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে। এটা শরীরে রক্তের সঙ্গে মিশে যকৃৎ, কিডনি, হাড়সহ সবকিছুই আক্রান্ত করে। এটা দেহের কোমল পেশিতন্ত্রগুলো আক্রান্ত করে।
তারা বলেন, সীসাদূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। সীসাদূষণের ফলে শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এ জন্য কর্তৃপক্ষ আইন করেছে। আইনগুলো কার্যকর করতে হবে। সীসার বিষাক্ত প্রভাব থেকে একেবারে মুক্ত হওয়া যায়। তবে কিছু পদক্ষেপ নিলে শরীরে সীসার ক্ষতিকর পরিমাণ কমানো যাবে। ভিটামিন সি, আয়রন ও ক্যালসিয়াম–সমৃদ্ধ খাবারের প্রতি মনোযোগী হলে আমরা এ থেকে অনেকটা রক্ষা পাব। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯১২
আপনার মতামত জানানঃ