আমাদের জীবনে সূর্যের আলোর ভূমিকা যে কতটা হতে পারে, সে বিষয়ে অনেকেই সচেতন নন। কৃত্রিম আলোর থেরাপি বিকল্প হলেও সেক্ষেত্রে সঙ্গে চাই তাজা বাতাস।
আলো মানুষের মনে আনন্দ জাগায়। বিশেষ করে স্বাভাবিক সূর্যের আলো আমাদের মন-মেজাজ সত্যি ভালো রাখে। কিন্তু বছরের শীতল ও অন্ধকার সময়ে অনেক মানুষ এক সমস্যার মুখে পড়েন। তারা সূর্যের আলোর মুখ খুব কম দেখেন। তখন আমাদের হরমোন নিঃসরণ প্রক্রিয়া এলোমেলো হয়ে যায়, যার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।
শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বের সব জায়গাতেই বৃদ্ধি পাচ্ছে গড় তাপমাত্রা। তাপ বাড়ার বিরূপ প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনে, প্রকৃতিতে, জীব ও উদ্ভিদ জগতে।কিন্তু মানুষের শরীরের উপর সূর্যের আলোর সব রকম প্রভাব এখনো অজানা৷ বিজ্ঞানীরা সেই রহস্য উন্মোচন করতে বহুমুখী গবেষণা চালাচ্ছেন৷
সূর্যছাড়া পৃথিবীর বুকে প্রাণের স্পন্দন সম্ভব হতো না৷ মানুষের উপর সূর্যের আলোর নানা রকম প্রভাব আছে
ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চিকিৎসক ও মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান প্রোফেসর হ্যার্বার্ট প্লিশকে তার সহকর্মীদের সঙ্গে বাভেরিয়ার এক জলপ্রপাতে পরিমাপের কাজ চালাচ্ছেন৷ মানুষের স্বাস্থ্যের উপর পরিবেশের প্রভাব নিয়ে তারা গবেষণা করছেন৷ সেই লক্ষ্যে তারা অতি বেগুনি রশ্মি মাপছেন৷
প্লিশকে বলেন, ‘‘এখানে একদিকে দৃশ্যমান রশ্মি দেখা যাচ্ছে৷ অন্যদিকে ইউভি-এ এবং ইউভি-বি-র অংশও রয়েছে৷ স্বাস্থ্যের উপর এই দুই রশ্মির বিশেষ প্রভাব রয়েছে৷ তার কিছুটা ইতিবাচক, কিছুটা নেতিবাচক৷”
শক্তিতে ভরপুর আলট্রাভায়োলেট রশ্মি মানুষ দেখতে পায় না, অনুভবও করতে পারে না৷ তবে অতি বেগুনি রশ্মি ক্যানসারেরও কারণ হতে পারে৷ চোখে কনজেক্টিভাইটিস এবং কর্নিয়ার প্রদাহও ঘটাতে পারে৷ তবে সেটির কিছু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যও রয়েছে৷
হ্যার্বার্ট প্লিশকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘আল্ট্রাভায়োলেট-বি রশ্মির মাধ্যমে সূর্য ত্বকে ভিটামিন ডি সৃষ্টি করে৷ শরীরের ক্যালসিয়াম ভারসাম্যের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-র বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে৷ হাড়গোড়ের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ক্যালসিয়াম ভারসাম্য অত্যন্ত জরুরি৷ অর্থাৎ অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করতে শরীরে যথেষ্ট মাত্রায় ভিটামিন ডি প্রয়োজন৷ সূর্যের আলো পেলে তবেই সেটা সম্ভব৷”
শক্তিতে ভরপুর আলট্রাভায়োলেট রশ্মি মানুষ দেখতে পায় না, অনুভবও করতে পারে না৷ তবে অতি বেগুনি রশ্মি ক্যানসারেরও কারণ হতে পারে৷ চোখে কনজেক্টিভাইটিস এবং কর্নিয়ার প্রদাহও ঘটাতে পারে৷
চর্মরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অতিবেগুনি রশ্মি কাজে লাগানো হয়৷ যেমন ক্লাউস লাঙে ১৫ বছর ধরে সোরিয়াসিস রোগে ভুগছেন৷ ক্রনিক এই ত্বকের রোগের কারণে চুলকানি ও প্রদাহ দেখা যায়৷ ক্লাউস বলেন, ‘‘অস্বস্তি দূর করতে চুলকানোর প্রবল ইচ্ছা জাগে৷ অবশ্যই সেটা করা উচিত নয়৷”
চিকিৎসার শুরুর সময় ক্লাউস লাঙের শরীর এমন দেখতে ছিল৷ আজ সোরিয়াসিসের চিহ্ন প্রায় চোখেই পড়ে না৷ ‘সিঙ্ক্রোনাস বালনিওফোটোথেরাপি’-র সাহায্যে সেটা সম্ভব হয়েছে৷ এর আওতায় রোগীকে লবণাক্ত পানিভরা আধারে শুয়ে পড়তে হয়৷ সে সময়ে তাঁর উপর কৃত্রিম অতিবেগুনি রশ্মি নিক্ষেপ করা হয়৷ লবণের সাহায্যে সেই রশ্মি আরও ভালোভাবে ত্বকে প্রবেশ করে৷ সেই প্রভাব ‘অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি’, অর্থাৎ প্রদাহ মোকাবিলা করে৷ লবণ ত্বকের ক্ষত দূর করতেও সাহায্য করে৷
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টফ লিবলিশ বলেন, ‘‘সোরিয়াসিস নিরাময় করা সম্ভব নয়৷ অর্থাৎ রোগীরা সপ্তাহে তিন বার পর্যন্ত আমাদের কাছে চিকিৎসার জন্য আসেন৷ সাধারণত ২৫টি থেরাপির পর আমরা উন্নতি লক্ষ্য করি৷ কোনো কোনো রোগীর ৭০টি পর্যন্ত সেশনের প্রয়োজন হয়৷ সেটা রোগীর উপর নির্ভর করে৷ একবার স্থিতিশীল হলে তখন আর এত ঘনঘন রশ্মিনিক্ষেপের প্রয়োজন হয় না৷”
নিউরোডার্মাটাইটিস বা ভিটিলিগো রোগের ক্ষেত্রেও এই থেরাপি কাজে লাগতে পারে৷ ক্লাউস লাঙে আপাতত ছুটি পেয়েছেন৷ নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমার খুবই ভালো লাগছে৷ থেরাপি সম্পর্কে খুবই সন্তুষ্ট, বেশ কাজে লেগেছে৷ দেখছেন, ক্ষতগুলি প্রায় দূর হয়ে গেছে৷”
কয়েক মাস পর তাঁকে আবার এক থেরাপি সেশন করাতে হবে৷ এদিকে হ্যার্বার্ট প্লিশকে ও তাঁর সহকারী আরও পরিমাপ চালিয়েছেন৷ অতিবেগুনি রশ্মির আরেকটি প্রভাবও রয়েছে৷ প্লিশকে বলেন, ‘‘গ্রীষ্মকালে আমরা সবসময়ে ভাইরাল রোগের তেমন প্রকোপ দেখি না৷ সূর্যের রশ্মির সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে৷ অবশ্যই একাধিক প্রভাবের সম্ভাবনা রয়েছে বটে, তবে প্রাকৃতিক ইউভি-বি ও ইউভি-এ রশ্মি ভাইরাসও খতম করে৷”
অতিবেগুনি রশ্মির আরেকটি প্রভাবও রয়েছে৷ প্লিশকে বলেন, ‘‘গ্রীষ্মকালে আমরা সবসময়ে ভাইরাল রোগের তেমন প্রকোপ দেখি না৷ সূর্যের রশ্মির সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে৷ অবশ্যই একাধিক প্রভাবের সম্ভাবনা রয়েছে বটে, তবে প্রাকৃতিক ইউভি-বি ও ইউভি-এ রশ্মি ভাইরাসও খতম করে৷”
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪৮
আপনার মতামত জানানঃ