কুমিল্লা জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের প্রার্থীরা একেকজন হত্যা, মারামারি, বিস্ফোরক, প্রতারণাসহ নানা অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি। এ ছাড়া অতীতে মামলা ছিল এমন প্রার্থীরাও নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় হলফনামায় প্রার্থীরা নিজেরাই ওই তথ্য উপস্থাপন করেন বলে এক প্রতিবেদনে প্রথম আলো জানিয়েছে। ১৭ অক্টোবর এই নির্বাচন হবে।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণেই তারা মামলার আসামি হয়েও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছে।
হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৫৪ জন, সংরক্ষিত (মহিলা) সদস্য পদে ১৮ জনসহ মোট ৭৩ জন প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে ১০ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা আছে। সাধারণ সদস্য পদে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ ভূঁঞার বিরুদ্ধে জখম, হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনে তিনটি মামলা আছে।
একই ওয়ার্ডের প্রার্থী জি এম জাহিদ হোসেন ওরফে টিপুর বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির একটি ও এমরানুল হক কামালের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির একটি মামলা আছে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মোস্তাক আহম্মেদের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও দস্যুতার একটি মামলা আছে। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে লুটপাটের একটি মামলা রয়েছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আবদুল্লা আল মাহমুদের বিরুদ্ধে মারামারি, হত্যা ও জখমের তিনটি মামলা আছে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মারামারির একটি মামলা আছে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মো. জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা আছে।
১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মো. কাইয়ুম হোসাইনের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলা আছে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত (মহিলা) সদস্য ফাহমিদা জেবিনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও প্রতারণার অভিযোগে দুটি মামলা আছে।
এর নেপথ্যে রয়েছে মনোনয়ন-বাণিজ্য। নির্বাচিত হতে এখন আর ভোটারের সমর্থন লাগে না। টাকা আর সন্ত্রাসী বাহিনী থাকলেই দলীয় মনোনয়ন মেলে।
অতীতে ১ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী জেবন নেসা জীবন ওরফে স্বপ্নার বিরুদ্ধে জখমের দুটি মামলা ছিল। পারুল আক্তারের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৪ ধারায় মামলা ছিল। ৪ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য ফাহমিদা জেবিনের বিরুদ্ধে মারামারি ও ১০৭ ধারায় দুটি মামলা ছিল। ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য প্রার্থী মো. কাইয়ুম হোসাইনের বিরুদ্ধে মারামারির একটি মামলা ছিল।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মো. জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে অতীতে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা ছিল। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে চুরির দুটি মামলা ছিল। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সুলতান আহাম্মদের বিরুদ্ধে অতীতে জখমের অভিযোগে একটি মামলা ছিল।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মাহমুদের বিরুদ্ধে অতীতে বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ১০টি মামলা ছিল। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা ছিল।
বিশ্লেষকরা বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সৎ ও পরিচ্ছন্ন প্রার্থীর বদলে দুর্নীতিবাজ ও বিতর্কিতদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে মনোনয়ন-বাণিজ্য। নির্বাচিত হতে এখন আর ভোটারের সমর্থন লাগে না। টাকা আর সন্ত্রাসী বাহিনী থাকলেই দলীয় মনোনয়ন মেলে।
তারা বলেন, যাদের নামে মামলা রয়েছে, তাদের মনোনয়ন দানের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর এসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া উচিত। কারণ, মনোনয়ন দানের জন্য দলে নিশ্চয়ই মামলাহীন দলীয় লোকজনের অভাব নেই। তবে দলগুলো মনোনয়ন দিলেও মামলার আসামিদের নির্বাচনে ভোট দেবেন কী না, সে বিবেচনাটুকু ভোটারদের। এখানে ভোটারদেরও দায়িত্ব আছে বলে তারা মনে করেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮২৭
আপনার মতামত জানানঃ