ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন বা এফবিআই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এটি মার্কিন আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। বিশ্বস্থতা, সাহস, বিশুদ্ধতা এই তিনটি লক্ষ নিয়ে কাজ করে এফবিআই। ওয়াশিংটন ডিসির জে ইজার হভার ভবনে এফবিআইয়ের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। সম্প্রতি এফবিআইয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আর এ অপরাধের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এড়াতে ছয় শতাধিক এফবিআই কর্মী চাকরি ছেড়েছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ থেকে ফাঁস হওয়া নথিতে এ তথ্য বেরিয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের (আইবিটি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইওয়ার সিনেটর চাক গ্রাসলি বিচার বিভাগ থেকে ফাঁস হওয়া নথির বরাত দিয়ে বলেছেন, ২০০৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে যৌন অসদাচরণের জন্য অভিযুক্ত কমপক্ষে ৬৬৫ জন এফবিআই কর্মচারী চাকরি ছেড়ে দিয়ে শাস্তি এড়াতে পেরেছেন।
বিচার বিভাগের অফিস অব ডিসিপ্লিনারি আপিলের ‘রিটায়ারমেন্টস অ্যান্ড রেজিগনেশনস ডিউরিং আন ওয়েলকাম সেক্সুয়াল কনডাক্ট অ্যাডজুডিকেশন’ শীর্ষক নথিতে দেখা গেছে, ৪৫ জন জ্যেষ্ঠ নির্বাহীসহ ৬৬৫ এফবিআই কর্মচারী অবসরে গেছেন অথবা অব্যাহতি নিয়েছেন। যৌন অসদাচরণের অভিযোগের বিষয়ে বিচার বিভাগ থেকে তদন্ত শেষ হওয়ার পরপরই এই কর্মকর্তারা চাকরি ছেড়েছেন।
অসংগতিপূর্ণ যৌন অসদাচরণের অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিচার’ শীর্ষক আরেকটি নথিতে এফবিআইয়ে ‘আপসমূলক শৃঙ্খলা ব্যবস্থা’ রয়েছে কি না সে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
সিনেটরের কার্যালয় বলছে, কীভাবে এফবিআই বিভিন্ন পদের কর্মচারীদের যৌন অসদাচরণকে গোপন করার জন্য সংস্থার বিধি-বিধানকে ব্যবহার করেছে সে সম্পর্কে নথিতে বিশদ বিবরণ রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ নথিগুলোতে ‘কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি এবং যৌন অসদাচরণ থেকে নারী কর্মীদের রক্ষা করতে বিচার বিভাগ এবং এফবিআইয়ের পদ্ধতিগত ব্যর্থতা এবং একই অসদাচরণের জন্য কর্মচারীদের যথেষ্ট শাস্তি দিতে ব্যর্থতার দৃষ্টান্ত স্পষ্ট’।
এই বিষয়টি উল্লেখ করে বিচার বিভাগের প্রধান অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ডকে চিঠি দিয়েছেন সিনেটর গ্রাসলি। সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটিতে রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতা হিসেবে আছেন গ্রাসলি।
এ নিয়ে টুইট করেছেন গ্রাসলি। তিনি লিখেছেন, ফাঁস হওয়া নথিতে দেখানো হয়েছে, জ্যেষ্ঠ কর্মচারীরা তাদের কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দিয়ে সুবিধা আদায় করতে পারেন। তিনি এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টোফার এ রে-কে তার সংস্থায় শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি কবে এই শুদ্ধি অভিযান চালাবেন তা জানতে চেয়েছেন সিনেটর।
এর আগে ২০২০ সালে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) একটি তদন্তে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এফবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ছয়টি যৌন অসদাচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সেই সময় এফবিআই বলেছিল, যৌন হয়রানির প্রতি সংস্থা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে। সংস্থার শৃঙ্খলা বিধি অনুসরণ করে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হবে বলেও জানায় এফবিআই।
২০০৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে যৌন অসদাচরণের জন্য অভিযুক্ত কমপক্ষে ৬৬৫ জন এফবিআই কর্মচারী চাকরি ছেড়ে দিয়ে শাস্তি এড়াতে পেরেছেন।
এদিকে মার্কিন সামরিক বাহিনীতে যৌন নিপীড়নের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। ২০২১ অর্থবছরে দেশটির এই বিভাগে যৌন নিপীড়নের সংখ্যা বেড়েছে ১৩ শতাংশ।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের সেক্সুয়াল অ্যাসাল্ট প্রিভেনশন অ্যান্ড রেসপন্স অফিস (এসএপিআর) জানিয়েছে, ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ হাজার ৮৬৬টি যৌন নিপীড়নের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে।
২০২০ সালের একই সময় পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৮১৩টি। অর্থাৎ ২০২১ সালে যৌন নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে ১৩ শতাংশ।
কিন্তু যৌন নিপীড়নের এসব ঘটনার শুধুমাত্র একটি অংশ কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগনের এই দপ্তর।
সৈন্যদের মাঝে সমীক্ষা চালিয়ে এসএপিআর আনুমানিক যে হিসাব সামনে এনেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৩৬ হাজার সক্রিয় কর্তব্যরত নারী এবং পুরুষ সেনা এই সময়ে অবাঞ্ছিত যৌন হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।
হয়রানির শিকার এসব সৈন্যদের ৮.৪ শতাংশ নারী এবং ১.৫ শতাংশ পুরুষ। পেন্টাগন বলছে, যৌন নিপীড়ন হয়েছে কিনা সেটি পরিমাপ করতে ব্যবহৃত সিস্টেম বা পরিমাপের মান পরিবর্তনের কারণে এটি ‘সত্যিকার অর্থেই বেড়েছে কিনা তা বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ধারণ করতে পারেনি’ তারা।
এএফপি বলছে, মার্কিন সামরিক বাহিনীর ভেতরে সবচেয়ে বেশি যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে সেনাবাহিনীতে। সেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ২৬ শতাংশ। এরপর নৌবাহিনীতে ১৯ শতাংশ, বিমান বাহিনীতে দুই শতাংশ এবং মেরিন বিভাগে ঘটেছে দুই শতাংশ।
গত বছরের জানুয়ারিতে সামরিক আইনে যৌন হয়রানিকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে একটি আদেশ জারি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই আদেশের অর্থ হলো- যৌন নিপীড়ন, ঘরোয়া সহিংসতা এবং নাবালকদের ওপর যৌন নিপীড়নের বিচার এখন সামরিক আদালতে করা হবে এবং আদালতে মামলা নেওয়ার সিদ্ধান্ত সামরিক চেইন অব কমান্ডের অফিসারদের পরিবর্তে বিশেষ প্রসিকিউটরদের ওপর ন্যস্ত করা হবে।
অবশ্য মার্কিন সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অতীতে অভ্যাসগতভাবে কোনো ঘটনা উপেক্ষা করা, ধামাচাপা দেওয়া বা যৌন নিপীড়নের অভিযোগকে হালকাভাবে দেখার অভিযোগ রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২৬
আপনার মতামত জানানঃ