চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ফিলিস্তিনের অধিকৃত দুটি অঞ্চলে অন্তত ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয় ইসরায়েলি সেনাদের হাতে।
স্থানীয় সময় শনিবার পূর্ব জেরুজালেমে ১৮ বছরের এক তরুণকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি সৈন্যরা। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই নয় মাসে মৃতের সংখ্যা ১০০ জনে পৌঁছায়। খবর বিবিসির।
চলতি বছরে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি সৈন্যদের সশস্ত্র অভিযানের সংখ্যা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে প্রাণহানি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিম তীরে ২০১৫ সালের পর চলতি বছরেই সবচেয়ে বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগেরই মৃত্যু ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে হয়েছে।
এছাড়া অস্ত্রধারী বেসামরিক ইসরায়েলিদের গুলিতেও বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে পাঁচ ভাগের এক ভাগই শিশু এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট শিশুর বয়স ১৪ বছর।
গত মে মাসে অধিকৃত পশ্চিত তীরের জেনিন শহরে সামরিক অভিযানের সংবাদ সংগ্রহকালে আল-জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাসজুড়ে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের ওপর একের পর এক হামলা চালানো হয়েছে। এতে অসংখ্য ফিলিস্তিনি আহত হন।
শনিবার পূর্ব জেরুজালেমে ১৮ বছরের এক তরুণকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি সৈন্যরা। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই নয় মাসে মৃতের সংখ্যা ১০০ জনে পৌঁছায়।
প্রতিদিন গড়ে অন্তত দু’জন ফিলিস্তিনি শিশুকে ধরে নিয়ে যায় ইসরায়েলি সৈন্যরা৷ জেলে পুরে চালায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন৷ প্রায় ৭ হাজার শিশুর ওপর এমন অমানবিক নির্যাতনের তথ্য জানিয়েছিল জাতিসংঘ৷
সারা বিশ্বে শিশুরা যেখানে গড়ে ৬ দশমিক ৮ থেকে ১২ দশমিক ২ শতাংশ পিটিএসডিতে (পোস্ট ট্রমাটিক ডিজঅর্ডার) ভুগছে, সেখানে ফিলিস্তিনি শিশুদের মধ্যে এ হার ৩৪ দশমিক ১ থেকে ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ।
বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে ইসরায়েলি সেনাদের আগ্রাসনের ঘটনা ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতা ও ভীতির বোধ জন্ম নিচ্ছে। ঘর যেখানে তাদের নিশ্চয়তা আর আনন্দের উৎস হওয়ার কথা, তার বদলে ভীতি তাদের তাড়া করে ফিরছে। এর ফলাফল হচ্ছে, শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছে, তারা চুপচাপ, বিষণ্ন কিংবা খিটখিটে মেজাজের হয়ে যাচ্ছে।
এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে প্রতি সপ্তাহে ইসরায়েল একজনের বেশি শিশুকে হত্যা করেছে। এর আগের এক দুঃখজনক সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছিল, ২০০০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ১৪ বছর গড়ে প্রতি তিন দিনে একটি ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে অধিকৃত পশ্চিম তীরের ৭৯ শতাংশ স্থাপনা নিজেদের দখলে নিয়েছে ইসরায়েল। পূর্ব জেরুজালেমের ২০ শতাংশ স্থাপনা তাদের কবজায়। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়বিষয়ক কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ফিলিস্তিনি মালিকানাধীন অন্তত ৮ হাজার ৪১৩টি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। এতে সর্বস্ব খুইয়ে পথে বসেছেন প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ফিলিস্তিনি। বিপরীতে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে এ পর্যন্ত সাড়ে সাত লাখ ইহুদিকে বসতি গড়ে দিয়েছে ইসরায়েল সরকার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন হলোকাস্টের নির্মমতাও যেন ছাপিয়ে গেছে ইসরায়েলের বর্বর কর্মকাণ্ডে; নাৎসিদের থেকেও অধিক জিঘাংসু হয়ে উঠেছে জায়নবাদীরা। তাদের একপেশে নির্বিচার হামলা, সর্বাত্মক অবরোধ–আগ্রাসনে অকাল আর অপঘাত মৃত্যু যেন ফিলিস্তিনিদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে যে ‘নাকবা’ নেমে এসেছে ফিলিস্তিনি ভূমিতে, তার তাণ্ডবশক্তির নিচে মানবিকতার পদদলন আর কত দিন? আর কত দিনই বা তা ‘চুপচাপ’ চেয়ে চেয়ে দেখবে বাকি বিশ্ব? আর কত রক্তমূল্য পরিশোধে মানবমুক্তির পয়গাম পৌঁছাবে ফিলিস্তিনি ভূমিতে?
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪২
আপনার মতামত জানানঃ