গত ২২ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কর্মসহৃচির অংশ হিসেবে সদর উপজেলা, মুন্সীগঞ্জ শহর ও মিরকাদিম পৌর বিএনপি শহরের মুক্তারপুর এলাকার পুরাতন ফেরীঘাট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে পুলিশের বাধাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত শাওনের পরিবারকে মামলা পাল্টানোর জন্য বেনামে নানা হুমকি দিয়ে আসছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
নিহত শহিদুল ইসলাম ওরফে শাওন ভূঁইয়ার মা লিপি আক্তার বলেন, আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যারা হুমকি দিচ্ছে, আমরা তাদের চিনি না। যারা হুমকি দিচ্ছে, তারা বলছে আমার ছেলে পুলিশের গুলিতে মরেনি। আমার ছেলে ইটের আঘাতে মারা গেছে। তারা পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার অভিযোগ পাল্টে ইটের আঘাতে মারা গেছে, এমন মামলা দিতে বলছে। আমাদের ভয় দেখানো হচ্ছে। আমার আরও তিনটা ছেলে আছে। আমার স্বামী আছে। আমি তাদের হারাতে চাই না। আমি নিরাপত্তা চাই।’
তিন আরও বলেন, ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে ফোনে কল করে তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে তারা ও তাদের স্বজনেরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। আতঙ্কে তার তিন ছেলে ও স্বামীও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে ফোনে কল করে তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে তারা ও তাদের স্বজনেরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। আতঙ্কে তার তিন ছেলে ও স্বামীও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
শাওন গুলিতেই মারা গেছেন উল্লেখ করে লিপি আক্তার বলেন, ‘যারা বলছে আমার ছেলে ইটের আঘাতে মারা গেছে, তারা ওই ভিডিও দেখুক, যেখানে গুলির শব্দ হলো, ধোঁয়াও বের হলো, তখন আমার ছেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। হাসপাতালের মৃত্যুর কারণ–সম্পর্কিত রিপোর্টে বলা হচ্ছে, গুলির আঘাতে শাওন মারা গেছে। অথচ তারা সেই রিপোর্টকে মিথ্যা বলছে।’
শাওনের দাদি হালিমা বেগম বলেন, ‘আমরা কার বিরুদ্ধে মামলা করব?’ পুলিশের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘যাদের বিচারে সহযোগিতা করার কথা ছিল, মামলা করলে তাদের বিরুদ্ধেই করতে হবে। মামলা করলে আমার নাতি ফেরত আসবে না। উল্টো আমাদের অনেক অসুবিধা হবে। আমরা আল্লাহর কাছে বিচার দেব। আল্লাহই বিচার করবে।’
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ওসি তারিকুজ্জামান বলেন, সামগ্রিক বিষয়ে লিখিতভাবে আদালতকে জানানো হয়েছে। এরপরও যেসব বিষয়ে প্রশ্ন থাকবে, সেগুলো আদালতকে জানানো হবে। পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না দেওয়ার জন্য শাওনের পরিবারকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বুধবার বিএনপির কর্মসূচিতে মিছিল নিয়ে আসছিলেন দলটির নেতা-কর্মীরা। সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম একটি মিছিলের ব্যানার ধরে টান দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৭০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩ জন সংবাদকর্মী ও ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। এসব মামলায় বিএনপির ১ হাজার ৩৬৫ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ২৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সংবিধানমতে, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ তথা কর্মসূচি পালন করার অধিকার প্রতিটি দল ও সংগঠনের আছে। অথচ আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো যখন যারা ক্ষমতায় থাকে, তখন তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে থাকে কথিত আইনশৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে।
আওয়ামী লীগের নেতারা এত দিন অভিযোগ করতেন যে বিএনপি জনজীবনের সমস্যা নিয়ে কথা বলে না, তারা আন্দোলন করে কেবল দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে। অথচ বিদ্যুৎ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনার দাবিতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠন যখন কর্মসূচি নিল, তখন হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটল।
গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত সবার সমানাধিকার। কিন্তু আমরা কী দেখছি? বিরোধী দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে গিয়ে বারবারই প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গণতন্ত্রের জন্য তা মোটেও কল্যাণকর নয়।
বিভিন্ন দল রাজনৈতিক কর্মসূচি দেবে, সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চা করবে- এটিই তো প্রত্যাশিত। কিন্তু আমরা যখন দেখি রাজনীতির নামে অপরাজনীতি কিংবা নানা রকম কদর্যতা সৃষ্টি হচ্ছে রাজনীতিকদেরই কারও কারও কারণে, তখন আশাহত না হয়ে পারি না। গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা প্রায় সর্বজনীন। গণতন্ত্র শুধু নির্দিষ্ট সময়ান্তে নির্বাচনের ব্যাপার নয়, গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতির ব্যাপার। প্রশ্ন হচ্ছে- রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক করবে কে এবং কীভাবে, সমাজে যদি গণতান্ত্রিক চেতনা ও মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা না ঘটে? প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য রাষ্ট্রের ওপর সমগ্র সমাজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫২৩
আপনার মতামত জানানঃ