বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ-সম্পর্কিত সহিংসতা এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছে ইইউ।
গতকাল ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক দিবস। দিবসটি উপলক্ষে একটি টুইট বার্তা পোস্ট করে ঢাকাস্থ ইইউ দূতাবাস। সেখানে বলা হয়, ‘ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ-সম্পর্কিত সহিংসতা এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ইইউ উদ্বেগ ব্যক্ত করেছে’।
গত কয়েক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুরসহ অন্যান্য অভিযোগে মামলা করা হয়েছে অন্তত ২০টি জেলায়।
এই সময়ে রাজধানী ঢাকার ভেতরে ও বাইরে বিএনপি ও পুলিশের অ্যাকশনে দেখা গেছে ব্যাপক পার্থক্য। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে পুলিশি অ্যাকশনে বিএনপির এক কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা দলটিকে আরও আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে।
রাজধানীতে বিএনপির অধিকাংশ জনসভা ও মিছিল শান্তিপূর্ণভাবেই পালিত হয়েছে। কিন্তু, দেশের অন্যান্য স্থানে এসব কেন্দ্র করে হয়েছে সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনা।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, সরকারের উপর মহলের নির্দেশেই পুলিশ এমন আচরণ করছে। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কারো নির্দেশ ছাড়া পুলিশ এভাবে গুলি করে না, কেউ অবশ্যই তাদের হুকুম দিয়েছে’।
নাম না প্রকাশের শর্তে পুলিশের অতিরিক্ত একজন ডেপুটি কমিশনার বলেছেন, ‘রাজধানীতে আমাদের সংযম প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে, কারণ এখানে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তা সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে’।
চূড়ান্ত অবদমনের শিকার বিএনপি
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং গত ৩১ জুলাই ভোলায় পুলিশের গুলিতে বিএনপির দুই নেতার মৃত্যুর প্রতিবাদে ২২ আগস্ট থেকে সারা দেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ধারাবাহিক বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করা হয়।
বিএনপির সূত্র মতে, ৩১ জুলাই ভোলার ঘটনা থেকে শুরু করে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় দলের ৩ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মী। এসব ঘটনায় ২০০ জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন। চার হাজারের বেশি নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার জনকে।
গত ২২ আগস্ট থেকে গতকাল ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ৪৮টি কর্মসূচিতে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ২৫টি স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর, গাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে। আর একই স্থানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমাবেশ থাকায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে ১৭টি স্থানে।
এসব ঘটনায় যে ৪৬টি মামলা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ২৯টির বাদী পুলিশ। বাকি ১৭টি মামলার বাদী আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় গত ২২ দিনে ৪৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ২১ হাজার ৭০৯। এর মধ্যে এজাহারে ২ হাজার ৭৭৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, বাকিরা অজ্ঞাতনামা। আসামিদের বেশির ভাগই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী। এর মধ্যে অসুস্থ, প্রবীণ ও প্রবাসে থাকা ব্যক্তিও রয়েছেন।
৪৬ মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আসামি হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই বিএনপির নেতা-কর্মী। তবে অসুস্থ, বয়সের কারণে চলাফেরা করতে পারেন না, দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে আছেন, ব্যবসায়িক কাজে অন্যত্র ছিলেন—এমন ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে।
এদিকে, ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষকালে গুলিতে যুবদলের কর্মী শাওন প্রধান নিহতের ঘটনায় দুই মামলায় জ্ঞাত-অজ্ঞাতসহ আসামি ৫ হাজার ৯৭১ জন। এরপর গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
এসডব্লিউ/এসএস/০৮৪৪
আপনার মতামত জানানঃ