টাইমস ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টিফেন হকিং বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আধিপত্য বিস্তার রোধে উপায় মানবজাতিকে খুঁজে বের করতে হবে। প্রযুক্তি এত ভয়ংকর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে যে, আমরা পারমাণবিক যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যেতে পারি। আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যুক্তি এবং কারণ দর্শানোর মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে পারি।”
২০১৫ সালে স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কর্মদক্ষতাই হলো আমাদের জন্য আসল হুমকি। অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিটি কাজেই অতিরিক্ত দক্ষ। যদি আমরা তাদের দক্ষতাকে মোকাবেলা না করতে পারি; তাহলে আমাদের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে।”
শুধু স্টিফেন হকিং নয়। আমেরিকার প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টেসলা’র সিইও ইলন মাস্কও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মানবসভ্যতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন। ২০১৪ সালে এক সেমিনারে মাস্ক বলেছিলেন, “আমি মনে করি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আমাদের আরো সতর্ক হওয়া উচিত। যদি আমাকে অনুমান করতে হয় – আগামীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হুমকি কোনটি। আমি বলবো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।”
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দোরগোড়ায় আমরা। এই শিল্পবিপ্লবের সফল বাস্তবায়ন হলে কর্মক্ষেত্রে মানুষের পরিবর্তে রোবট ও মানুষবিহীন উন্নতমানের প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। এতে করে শিল্প বিপ্লবের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে কর্মবাজারে। অটোমেশন প্রযুক্তির ফলে ক্রমশ শিল্প কারখানা হয়ে পড়বে যন্ত্রনির্ভর। যার ফলে বিশ্বব্যাপী মানুষ কর্মহীনতার ঝুঁকিতে পড়বে।
গত কয়েকশত বছর ধরেই মেশিন মানুষের কাজের জায়গাগুলো দখল করে নিচ্ছে। ফরচুন ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্তত ৫০০টি নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছেড়ে দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাতে; অর্থাৎ যন্ত্র এখন মানুষকে নিয়োগ দিচ্ছে।
বর্তমানে বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি, হেলথ-কেয়ার, কাস্টমার-কেয়ারসহ প্রায় সবখানেই মেশিন, রোবট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোমেশনের জয়জয়কার। গার্মেন্টস শিল্পে বর্তমানে মেশিনের জয়জয়কার। অথচ উনিশ শতকের শেষের দিকেও রঙ করা, সুতা কাটা, বুননের কাজগুলো সাধারণ শ্রমিকদের দ্বারা পরিচালিত হতো। পূর্বে জাহাজ শিল্পে যে পরিমাণ শ্রমিক প্রয়োজন হতো, তার প্রায় অধিকাংশ কমে গেছে ভারি ভারি মেশিনের কল্যাণে। বর্তমানে বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কল্যাণে চালকবিহীন গাড়িও রপ্তানি হচ্ছে।
এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে অবিশ্বাস্যকে সম্ভবে পরিণত করেছে চীন। মোবাইল গেম প্রস্তুতকারী চীনা কোম্পানি নেটড্রাগন ওয়েবসফট সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন (এআই) একটি ভার্চুয়াল মানুষকে (রোবট) জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। বিশ্বে এই প্রথম কোনো রোবট মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদটি দখলে নিলো।
কোম্পানিটির সিইও পদে আসীন হিউম্যানয়েড ওই রোবটটির নাম ‘ট্যাং ইউ’। গত মাসে নিয়োগের পর মিস ট্যাং ইউ ফুজিয়ান নেটড্রাগন ওয়েবসফটে তার কাজ শুরু করেছেন। কোম্পানিটির বিবৃতিতে জানা গেছে, কোম্পানির দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে এই রোবট। এভাবে ঝুঁকি-ব্যবস্থাপনা সিস্টেমকে আরও বেশি কার্যকরী করতে কাজ করবে ট্যাং ইউ।
প্রতিষ্ঠানটিতে রোবটের নির্দেশে চলবে মানুষ। বিশ্বে এই প্রথম এমন কাণ্ড ঘটল। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিউম্যানয়েড ওই রোবটটির নাম ‘ট্যাং ইউ’। গত মাসে নিয়োগের পর মিস ট্যাং ইউ ফুজিয়ান নেটড্রাগন ওয়েবসফটে তার কাজ শুরু করেছে।
কোম্পানিটির বিবৃতিতে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে এই রোবট। এভাবে ঝুঁকি-ব্যবস্থাপনা সিস্টেমকে আরও বেশি কার্যকরী করতে কাজ করবে ট্যাং ইউ।
সংস্থাটি জানিয়েছে, আর পাঁচজন সিইওর মতোই কাজ করবেন ট্যাং ইউ। তিনি সংস্থার ‘সাংগঠনিক ও দক্ষতা উন্নয়নের’ বিষয়ে নেতৃত্ব দেবেন। অর্থাৎ এটি কোনো প্রযুক্তি সংস্থার প্রতীকী নিয়োগ ভাবার কোনো কারণ নেই।
কাজটা মোটেও হেলাফেলা করার মতো নয়। যে সংস্থার শীর্ষ পদে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তার মোট ভ্যালুয়েশন ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়েও বেশি।
সংস্থাটি জানিয়েছে, রিয়েল-টাইম ডেটা, যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত, বিশ্লেষণমূলক পদক্ষেপ ইত্যাদির মাধ্যমে সংস্থার দৈনন্দিন পরিচালনার অংশ হিসেবে কাজ করবেন এই হিউম্যানয়েড রোবট। অর্থাৎ, একজন মানুষ সিইও হলে যা যা করতেন, সেই সবই করবেন ট্যাং ইউ।
নেটড্রাগন ওয়েবসফটের প্রতিষ্ঠাতা ড. ডেজিয়ান লিউ বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এআই হচ্ছে কর্পোরেট ব্যবস্থাপনার ভবিষ্যৎ। কোম্পানির ভবিষ্যৎ কৌশলগত প্রবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
এছাড়া কোম্পানির বোর্ডের জন্য রিয়াল-টাইম ডেটা সেন্টার ও অ্যানালিটিক্স টুল হিসেবেও কাজ করবে এ রোবট। নেটড্রাগন ওয়েবসফটের প্রতিষ্ঠাতা ড. ডেজিয়ান লিউ বলেন, আমরা বিশ্বাস করি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে কর্পোরেট ব্যবস্থাপনার ভবিষ্যৎ। কোম্পানির ভবিষ্যৎ কৌশলগত প্রবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এসডব্লিউ/এসএস/২০১৫
আপনার মতামত জানানঃ