জেমিনি নর্থ টেলিস্কোপের মাধ্যমে বিশ্ববাসী জানতে পারলেন এক বিস্ময়কর ঘটনা। দেখতে পেলেন অভূতপূর্ব দৃশ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাওনাকিয়া পর্বতের ওপর থেকে টেলিস্কোপটি দেখিয়েছে—পৃথিবী থেকে প্রায় ৬ কোটি আলোকবর্ষ দূরে ২ প্যাঁচানো গ্যালাক্সির মুখোমুখি সংঘর্ষ হচ্ছে।
এ ঘটনা দেখে জোতির্বিদরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ভবিষ্যৎ সে দিকেই যেতে পারে।
গত বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাটারফ্লাই বা প্রজাপতি গ্যালাক্সি হিসেবে পরিচিত ‘এনজিসি ৪৫৬৭’ ও ‘এনজিসি ৪৫৬৮’ গ্যালাক্সি ২টি সংঘর্ষের প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তাদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি একে অপরকে কাছে টেনে নিচ্ছে।
সংঘর্ষের জেরে আগামী ৫০ কোটি বছরের মধ্যে গ্যালাক্সি ২টি একে অপরের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে একটি উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সির আকার ধারণ করবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সংঘর্ষের প্রাথমিক পর্যায়ে গ্যালাক্সি ২টি একে অপরের থেকে প্রায় ২০ হাজার আলোকবর্ষ দূরে আছে। মাধ্যার্কষণ শক্তির টানে সেগুলোর আকার বদলে যাচ্ছে।
আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি ও প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির মধ্যেও এমন সংঘর্ষ হতে পারে। ২০১২ সালে হাবল টেলিস্কোপের তথ্য বিশ্লেষণ করে নাসার জ্যোতির্বিদরা ধারণ করছেন যে, আজ থেকে প্রায় ৪০০ বা ৫০০ কোটি বছর পর মিল্কিওয়ে ও অ্যান্ড্রোমিডার মধ্যে এমন মুখোমুখি সংঘর্ষ হতে পারে।
২০২০ সালে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের তথ্য বিশ্লেষণ করে জ্যোতির্বিদরা বলেছেন, মিল্কিওয়ের বলয় ও অ্যান্ড্রোমিডার বলয় একে অপরকে ধাক্কা দিচ্ছে।
অ্যান্ড্রোমিডার চারপাশে যে গ্যাসের বলয় আছে তা আমাদের গ্যালাক্সি থেকে প্রায় ১৩ লাখ আলোকবর্ষ দূরে।
এর আগে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও আধুনিক এই স্পেস টেলিস্কোপ (মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র) জেমস ওয়েবের মাধ্যমে দুটি মৃত নক্ষত্রের সংঘর্ষের ছবি প্রথমবারের মতো তুলতে পেরেছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
এই ধরনের মৃত নক্ষত্রের (নিউট্রন স্টার) সংঘর্ষের ঘটনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে মহাবিশ্বকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সহায়তা করবে বিজ্ঞানীদের।
জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক জো লিম্যানের ধারণা এমন, সংঘর্ষের ফলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া বিভিন্ন রকমের কঠিন ধাতু হাজার হাজার বছর ধরে অন্য আরেকটি নক্ষত্র বা গ্রহ তৈরিতে মূল ভূমিকা রাখে।
ছায়াপথের জন্ম ও বিবর্তন এবং নক্ষত্র ও গ্রহের সৃষ্টির কারণ জানতে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর মহাকাশে পাড়ি জমায় জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। এই স্পেস টেলিস্কোপটির নকশা ও নির্মাণে লেগেছে প্রায় ৩০ বছর। খরচ হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলার।
গত ১১ জুলাই প্রথমবারের মতো হাবল টেলিস্কোপের চেয়ে আরও স্পষ্টভাবে ছায়াপথ গুচ্ছের ছবি প্রকাশ করে এই অত্যাধুনিক টেলিস্কোপটি। এমন সব দুর্লভ ও স্পষ্ট ছবি নক্ষত্র ও গ্রহের জন্ম, বিবর্তন এবং মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য উন্মোচন করতে বিজ্ঞানীদের আরও বেশি সহায়তা করবে।
এর আগে ২০১৭ সালে হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে এই ধরনের সংঘর্ষ সৌভাগ্যক্রমে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বিজ্ঞানীরা। সূত্র মতে, এরকম দুটো মৃত নক্ষত্র পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছিল। সেই মহাসংঘাতের দৃশ্য ১৩ কোটি বছর পর ওই বছর ১৭ আগস্ট দেখা গেছে পৃথিবী থেকে। আলোকের একাধিক রূপ এবং মহাকর্ষীয় তরঙ্গ উভয় বেশেই। মহাজাগাতিক মঞ্চে এমন ঘটনা ছিল ওই প্রথম।
এসডব্লিউ/এসএস/০৯১০
আপনার মতামত জানানঃ