বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের দাপট এখনও কমেনি। তারই মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ। এবার তার দোসর হিসেবে মাথাচাড়া দিলো আরও এক নতুন ভাইরাস। যা সর্বপ্রথম থাবা বসিয়েছে চীনে। এই ল্যাঙ্গিয়া হেনিপাভাইরাসে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন।
চীনের হেনান ও শানডং প্রদেশের বাসিন্দাদের শরীরে থাবা বসিয়েছে এই ভাইরাস। গবেষকরা জানিয়েছেন, পশুদেহ থেকে মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়।
তাইওয়ান সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল (সিডিসি) জানিয়েছে, চীনের দুই প্রদেশে মোট ৩৫ জন ল্যাঙ্গিয়া হেনিপাভাইরাসে আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে ২৬ জনই শুধুমাত্র ল্যাঙ্গিয়ায় সংক্রমিত। অর্থাৎ তাদের শরীরে এই ভাইরাসের উপসর্গও লক্ষ্য করা গেছে।
তাইওয়ানের বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই ভাইরাসটি সম্ভবত প্রাণী থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়েছে। এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
নতুন এই ভাইরাস সম্পর্কে চীন, সিঙ্গাপুর এবং অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীদের দেওয়া বিভিন্ন তথ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে (এনইজেএম) প্রকাশিত হয়েছে।
মানুষের শরীর থেকে প্রাণীদের মধ্য এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়। চীন, সিঙ্গাপুর এবং অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীদের এক গবেষণা এমনটাই বলা হয়েছে। এ গবেষণা প্রকাশ করা হয়েছে আমেরিকার ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ। তবে গবেষকেরা দেখেছেন মানুষ থেকে মানুষের মধ্য এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত কেউ সংক্রমিত হয়নি।
জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মূলত মানুষের গলায় এ ভাইরাস আক্রমণ করে বলে জানা গেছে।
তাইওয়ানের সেন্টার্স ফর ডিজেজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) উপ-মহাপরিচালক চুয়াং জেন-সিয়াং বলেছেন, নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত ২৬ জনের দেহে জ্বর, ক্লান্তি, কাশি, ক্ষুধা হ্রাস, পেশী ব্যথা, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথার মতো লক্ষণ দেখা গেছে।
এসব রোগীর শ্বেত রক্তকণিকা হ্রাস, প্লেটলেটের হার কমে যাওয়া, লিভারে সমস্যা এবং কিডনি অকার্যকরের মতো সমস্যাও দেখা দিয়েছে।
এসব রোগীর শ্বেত রক্তকণিকা হ্রাস, প্লেটলেটের হার কমে যাওয়া, লিভারে সমস্যা এবং কিডনি অকার্যকরের মতো সমস্যাও দেখা দিয়েছে।
তবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই ভাইরাসে এখনও কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। ডিউক-এনইউএস মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক ওয়াং লিনফা গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, এই ভাইরাসকে এখন পর্যন্ত মারাত্মক বা খুব বিপজ্জনক বলা যাচ্ছে না। তাই এখনই এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এর আগে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ল্যাঙ্গিয়া ভাইরাসটি ২০১৯ সালে মানুষের মধ্যে প্রথম দেখা গিয়েছিল। তবে এ বছর এ ভাইরাস সর্বোচ্চ ব্যক্তি আক্রান্ত হলেন।
এ ভাইরাস সংক্রামক কি না, একজনের থেকে অন্য জনের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন চীনা গবেষকেরা। বেজিং ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড এপিডেমিওলজির গবেষকরা বলছেন, এ ভাইরাসের ক্ষেত্রে মূল উপসর্গ জ্বর। তা ছাড়া কাশি, ক্ষুধামান্দ্য, পেশির ব্যথ্যা, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা এবং বমির মতো উপসর্গও লক্ষ করা গেছে আক্রান্তদের মধ্যে।
গবেষণায় জড়িত সিঙ্গাপুরের ডিউক-এনইউএস মেডিকেল স্কুলের ইমার্জিং ইনফেকসাস ডিজিজ প্রোগ্রামের অধ্যাপক ওয়াং লিনফা বলেন, এখন পর্যন্ত এ ভাইরাস মারাত্মক বা খুব গুরুতর কিছু নয়। তাই আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। নিপাহ ভাইরাসের পরিবারেরই সদস্য এ ল্যাঙ্গিয়া ভাইরাস।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৩৪
আপনার মতামত জানানঃ