মাত্র ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচার হওয়া অর্থ (কালো টাকা) দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ দিয়েছে সরকার। এখন থেকে নগদ ১০০ টাকা আনলে এর বিনিময়ে মাত্র ৭ টাকা কর দিতে হবে সরকারকে। আর এ টাকা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না৷
সোমবার(০৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাইরে গচ্ছিত অপ্রদর্শিত অর্থ চলতি বছরের ১ জুলাই হতে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বৈধভাবে দেশে এনে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করা যাবে। আগামী বছরের (২০২৩ সালের) ৩০ জুন পর্যন্ত এ নিয়ম বলবৎ থাকবে। অর্থ আইন ২০২২ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা-১৯এফ অনুসারে এ অর্থ বৈধভাবে দেশে আনা যাবে।
চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রথমবারের মতো দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এ টাকা দেশে ফেরত আনা হবে কীভাবে, সেটি এতদিন অনেকের কাছে স্পষ্ট ছিল না। তাই বিভ্রান্তি দূর করতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হলো।
এদিকে, সুযোগ দেয়ার পরও কালো টাকা বৈধ করতে করদাতাদের অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মাত্র ২ হাজার ৩১১ জন করদাতা ঘোষণা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ করেছেন। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর অর্জিত হয়েছে ১১৬ কোটি টাকার কিছু বেশি।
২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রায় ২০ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ বা সাদা হয়, যেখানে ১১ হাজার ৮৫৯ জন করদাতা কালো টাকা বৈধ করেন। এটি দেশে স্বাধীনতার পর থেকে এক বছরের হিসাবে সর্বোচ্চ, যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি ব্যাংকে রাখা বিভিন্ন আমানত, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র বা নগদ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করেছেন।
পাচার করা অর্থ বৈধ করার সুযোগ দিয়ে প্রকারান্তরে অর্থ পাচারকারীদের পুরস্কৃত করল সরকার। এই সুবিধা দেয়ার ফলে দায়মুক্তিতে উৎসাহিত হবে অর্থ পাচারকারীরা। এ ধরনের দায়মুক্তিতে দুর্নীতি ও টাকা পাচার উৎসাহিত হবে।
এনবিআরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় সব সরকারই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছর ছাড়া সবচেয়ে বেশি অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগে এসেছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। তখন দেশের পরিস্থিতি ছিল একেবারেই ভিন্ন। ওই দুই বছরে ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ সুযোগ নিয়েছিল; বৈধ হয়েছিল ৯ হাজার কোটি টাকা। তা থেকে সরকার কর পেয়েছিল এক হাজার ২০০ কোটি টাকার কিছু বেশি। এর মধ্যে ২০০৭ সালে ৮০৩ কোটি টাকা এবং পরের বছর ৪০০ কোটি টাকা কর পেয়েছিল এনবিআর।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, কালো টাকা সাদা করার বিদ্যমান সুযোগ রহিত করা হলেও পাচার করা অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ভিন্ন উপায়ে কালো টাকা নতুন করে সাদা করার সুযোগ দিয়েছে সরকার।
পাচার করা অর্থ বৈধ করার সুযোগ দিয়ে প্রকারান্তরে অর্থ পাচারকারীদের পুরস্কৃত করল সরকার। এই সুবিধা দেয়ার ফলে দায়মুক্তিতে উৎসাহিত হবে অর্থ পাচারকারীরা। এ ধরনের দায়মুক্তিতে দুর্নীতি ও টাকা পাচার উৎসাহিত হবে।
এই সুযোগ দেয়ার অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশে বসে অর্থ চুরি করে সেই অর্থ চুরি করে বিদেশে নিয়ে যাওয়া। এখন সেই চুরির টাকা সোনার চামচ দিয়ে দেশে ফেরত আনার সুযোগ দেয়া হলো।
তারা বলেন, সরকার যদি প্রকৃত অর্থেই এ সুযোগ দেয় তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বন্ধ করে দেয়া দরকার। পাচারের দায়ে অভিযুক্ত পি কে হালদারকেও সব মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ফুলের মালা পরিয়ে দেশে নিয়ে আসা উচিত।’
তারা আরও বলেন, ‘এ ধরনের উদ্যোগ নেয়ার পরিবর্তে কে কোন সূত্রে বিদেশে টাকা পাচার করেছে তা চিহ্নিতকরণে উদ্যোগ নেয়া দরকার। এক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনসহ অন্যান্য আইন জোরালোভাবে বাস্তবায়ন করা দরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৪৫
আপনার মতামত জানানঃ