বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজার নাগরিকের জন্য গড়ে ৫ দশমিক ৮ জন চিকিৎসক আছেন। দুর্বল অবকাঠামো ও সেবার কারণে দেশের নাগরিকেরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে ১৩ শতাংশের বেশি হারিয়ে ফেলছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি বা ইউএনডিপির ২০২০ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে এইসব তথ্য উঠে এসেছে।
মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনসংখ্যার তুলনায় চিকিৎসকের অনুপাতে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত এগিয়ে আছে। ভারতে প্রতি ১০ হাজার নাগরিকের জন্য গড়ে ৮ দশমিক ৬ সংখ্যায় চিকিৎসক আছেন। পাকিস্তানে এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ৮।
সামাজিক খাতে উন্নয়ন সত্ত্বেও বাংলাদেশে আয়বৈষম্য প্রকট। এ বছরের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সবচেয়ে গরিব ৪০ শতাংশের আয় মোট আয়ের মাত্র ২১ শতাংশ। আর সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশের আয় মোট আয়ের প্রায় ২৭ শতাংশ। বাংলাদেশের গিনি সূচকে পয়েন্ট দশমিক ৪৭৮। কোনো দেশের এই স্কোর দশমিক ৫০ এর ঘর পেরোলেই উচ্চ বৈষম্যের দেশ হিসেবে ধরা হয়।
বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন পরিস্থিতি মধ্যম সারির। এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ দুই ধাপ এগিয়েছে। এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩তম। গতবার বাংলাদেশ ১৩৫তম স্থানে ছিল। ভারত ও পাকিস্তান এবার দুই ধাপ করে পিছিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তান যথাক্রমে ১৩১ ও ১৫৪তম স্থানে।
আয়বৈষম্য সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতে ভালো করছে। যেমন গড় আয়ুর হিসাবে ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৬ বছর। ভারতের গড় আয়ু ৬৯ দশমিক ৭ বছর। বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ জীবিত শিশু জন্মগ্রহণকালে ১৭৩ জন মা মারা যান। বাংলাদেশের ২৫ বছর ও এর বেশি বয়সী নারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ কমপক্ষে মাধ্যমিক পাস। আর পুরুষদের মধ্যে এই হার সাড়ে ৪৭ শতাংশ। শ্রমশক্তিতেও নারীর অংশগ্রহণ বেড়ে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে।
অগ্রগতি সত্ত্বেও সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। গতবারের মতো আট দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম। দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে আছে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৭২তম। এ ছাড়া মালদ্বীপ ৯৫তম, ভুটান ১২৯তম, নেপাল ১৪২তম ও আফগানিস্তান ১৬৯তম স্থানে।
সারা বিশ্বের মানব উন্নয়ন পরিস্থিতি সবচেয়ে ভালো নরওয়েতে। গতবারের মতো এবার দেশটি শীর্ষ স্থান দখল করেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে আয়ারল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ড। ২০১৯ সালের মানব উন্নয়ন পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আয় ও সম্পদের উৎস, বৈষম্য, লিঙ্গসমতা, দরিদ্রতা, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, আর্থিক প্রবাহ, যোগাযোগ, পরিবেশের ভারসাম্য ও জনসংখ্যা তত্ত্বের তথ্য বিশ্লেষণ করে মানব উন্নয়ন সূচক রিপোর্ট তৈরি করে ইউএনডিপি। যে দেশ মানব উন্নয়ন সূচকে যত এগিয়ে সে দেশকে তত উন্নত বলে ধরা হয়
আপনার মতামত জানানঃ