যুক্তরাষ্ট্রের হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। তাইওয়ানকে ঘিরে এরই মধ্যে চীন যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান সমন্বয়ে মহড়া শুরু করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে পেলোসির তাইওয়ান সফরের ইস্যু নিয়ে মুখ খুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি চীনের সঙ্গে এই উত্তেজনার জন্য পেলোসিকেই দায়ী করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে জানতে চান, ‘উন্মাদ ন্যান্সি পেলোসি কেন তাইওয়ানে।’ তিনি তার পোস্টে বলেছেন, পেলোসি সব সময় ঝামেলা সৃষ্টি করে। সে ভালো কোনো কিছুই করে না।
উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালে গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে যায় তাইওয়ান। চীন এই দ্বীপটিকে তার অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দিলেও সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে তা পুরোপুরি দখলে নেয়নি। তখন থেকেই তাইওয়ান স্বশাসিত দ্বীপ হিসেবে পরিচিতি পায়।
সাম্প্রতিক সময়ে চীন আরও বেশি কূটনৈতিক ও সামরিক চাপ বাড়িয়েছে তাইওয়ানের ওপর। তাইওয়ান চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একত্রিত হয়ে বৃহত্তম ও একক চীন গঠন করবে, বেইজিংয়ের এমন প্রস্তাব ২০১৬ সালে নাকচ করে দেন স্বশাসিত দ্বীপটির প্রেসিডেন্ট জাই ইং-ওয়েন। এর পরই তাইওয়ানের প্রতি ফের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া শুরু করে পারমাণবিক শক্তিধর ও বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি চীন।
স্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ানে গত ২৫ বছরের মধ্যে সফরকারী যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। এমন পরিস্থিতিতে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে তাইওয়ানকে নিজের অঞ্চল হিসেবে দাবি করা চীন।
বেইজিংয়ের কঠোর প্রতিক্রিয়া ও হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে স্বশাসিত দ্বীপটিতে মঙ্গলবার পূর্বঘোষিত সফর শুরু করে দিয়েছেন ন্যান্সি পেলোসি। এরই মধ্যে তিনি দেখা করেছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন ও দ্বীপটির পার্লামেন্টের স্পিকারের সঙ্গে।
পেলোসির সফর পরিকল্পনা ঘোষণার পরপরই কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে দেয় বেইজিং। স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ নয়, বরং তাইওয়ানকে নিজস্ব অঞ্চল হিসেবে দেখে চীন। তবে বিদেশি কোনো দেশের কর্মকর্তার তাইওয়ান সফরকে দ্বীপটির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতির অংশ মনে করে বেইজিং।
যদিও জো বাইডেন প্রশাসন ও ন্যান্সি পেলোসি জানিয়ে দিয়েছেন ‘এক-চীন নীতি’তে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। চীন মনে করছে, আমেরিকার রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিত্বের তাইওয়ান সফর উসকে দিতে পারে স্বশাসিত দ্বীপটির স্বাধীন হবার স্বপ্নকে। দীর্ঘদিনের অস্থায়ী ও কার্যত স্বাধীন সত্তাটি পরিবর্তিত হয়ে বেইজিংয়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন দেশের মর্যাদা।
এবার চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, পেলোসির সফরের প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ানের বিভিন্ন স্থানে সুনির্দিষ্ট সামরিক অভিযান পরিচালনা করবে বেইজিং।
মূলত পেলোসির এই তাইওয়ান সফরে নড়েচড়ে বসেছে চীন। দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক হুমকি। এরই মধ্যে সামরিক অভিযানের ঘোষণাও দিয়ে দিয়েছে চীন।
এদিকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের উদ্দেশ হচ্ছে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে থাকতে যুক্তরাষ্ট্রের আদর্শিক বাধ্যবাধকতার অংশ। গণতান্ত্রিক তাইওয়ানের পক্ষে সহযোগিতা ও সমর্থন দেখিয়ে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতীক চীনকে পরোক্ষভাবে হুঁশিয়ারি দেয়া।
তাইওয়ান সফরের আগে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত হয় পেলোসির একটি মতামত। ‘তাইওয়ানের পাশে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে’ শীর্ষক এই মতামতটিতে বলা হয়, ১৯৭৯ সালের আইন অনুযায়ী তাইওয়ানের পক্ষে থাকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ন্যান্সি পেলোসি কয়েক দশক ধরে গণতন্ত্র উদ্ধারে জড়িত আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছেন। তার এই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের অংশ হিসেবে ১৯৯১ সালে চীনের তিয়ানমেন স্কয়ারে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে পেলোসিসহ কয়েকজন আইনপ্রণেতা একটি ব্যানারে গণতন্ত্রের মুক্তির পক্ষে নিজেদের অবস্থান ঘোষণা দেন। সেই সময় চীনের নিরাপত্তা বাহিনীর রোষে পড়েছিলেন তারা।
দুই বছর আগে, ১৯৮৯ সালে সেই তিয়ানমেন স্কয়ারে একটি গণতান্ত্রিক মুক্তির আন্দোলন সামরিক বাহিনী দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় বেইজিং সরকার।
সাবেক এই আইনপ্রণেতা এমন একটি সময় তার সফর পরিকল্পনা করেছেন যখন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে হাজারো মানুষ গণতন্ত্র মুক্তি নাকি স্বৈরতন্ত্রের পতাকাতলে রয়ে যাবেন বলে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন।
তার নেতৃত্বে কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সফর করে। সফরে পরাশক্তি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধ যুদ্ধ ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনের প্রতি সমর্থনও জানান তারা।
পেলোসির তাইওয়ান সফরকে দেখা হচ্ছে গণতন্ত্র প্রসারের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানানোর প্রক্রিয়া হিসেবে। তাইওয়ান সফরের আগে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত হয় পেলোসির একটি মতামত। ‘তাইওয়ানের পাশে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে’ শীর্ষক এই মতামতটিতে বলা হয়, ১৯৭৯ সালের আইন অনুযায়ী তাইওয়ানের পক্ষে থাকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
‘আমেরিকা ও আমাদের মিত্রদের সুস্পষ্ট বার্তা দেয়া উচিত যেকোনো স্বৈরশাসকের পথ রুখে দেয়ার শক্তি রয়েছে আমাদের।’ তবে সেই মতামতে পেলোসি স্বৈরশাসক হিসেবে সরাসরি চীনের নাম উল্লেখ করেননি।
এসডব্লিউ/এসএস/২১৩০
আপনার মতামত জানানঃ