সড়ক দুর্ঘটনা যেন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি দিন কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। ঝরছে তরতাজা প্রাণ, খালি হচ্ছে মায়ের বুক; মুহূর্তেই ভেঙে যাচ্ছে স্বপ্ন। এদেশে সড়ক দুর্ঘটনা অত্যন্ত উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়ে উঠেছে।
ঈদুল আজহায় ৩ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩১৯ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৯৮ জন। আহত হয়েছেন ৯৬০ জন। গত সাত বছরের ঈদুল আজহার তুলনায় এবার সড়কে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
তিনি জানান, ১১৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত হয়েছেন। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মানুষের ৩৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।
তিনি আরো জানান, গত সাত বছরের ঈদুল আজহার মধ্যে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে এবার। যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে অতীতের মতো আমরা একটিও যানবাহন সড়কে বাড়াতে পারিনি। এবারে সড়কে দীর্ঘ যানজটও দেখা গেছে। যানজটের কারণে হোটেলগুলো এ অফার লুফে নিয়েছে। এছাড়া যাত্রীদের ৩০০ টাকার ভাড়া ২০০০ টাকা পর্যন্ত গুণতে হয়েছে।
ঈদুল আজহায় ৩ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩১৯ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৯৮ জন। আহত হয়েছেন ৯৬০ জন। গত সাত বছরের ঈদুল আজহার তুলনায় এবার সড়কে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, করোনা না থাকার কারণে এবারের ঈদে বেশি মানুষের যাতায়াত হয়। রাজধানী থেকে ১ কোটি ২০ লাখ এবং ৪ কোটি মানুষ আন্তঃজেলায় যাতায়াত করেছে। এছাড়া এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি ভাড়া নৈরাজ্য হয়েছে এবং ৪ ঘণ্টার যাত্রা ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা সময় লেগেছে। বাসের পাশাপাশি ঈদযাত্রায় ২৫ লাখ মোটরসাইকেল ও ৪০ লাখ ইজিবাইক রাস্তায় নামে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ সংস্থার উল্লেখযোগ্য তৎপরতার কারণে ঈদযাত্রা কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়ক দুর্ঘটনা বরাবরের মতো বেড়েছে।
মোজাম্মেল হক জানান, এবার সড়ক রেল ও নৌকাতে মোট ৪৫৪ টি দুর্ঘটনায় ৪৪০ জন নিহত ও ৭৯১ জন আহত হয়েছে। এছাড়া ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেলে ৯ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঈদে ১১৩ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত ও ৬৮ জন আহত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ, যথাযথ ট্রেনিং, প্রয়োজনভেদে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সড়ক ও চৌরাস্তা মনিটরিংসহ নানান উদ্যোগ নেওয়া সময়ের দাবি। নিয়মিত নিরীক্ষণ করার পাশাপাশি প্রতি তিন মাস অন্তর প্রতিবেদন প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া যায় কি না ভেবে দেখার সময় এসেছে। মহাসড়কগুলো চার লাইনে উন্নীতকরণ এবং বিপজ্জনক বাঁকগুলোতে লেন্স স্থাপন করাও জরুরি। এছাড়া অপ্রোয়জনীয় হর্ন ড্রাইভারের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, অস্থির করে তোলে, যা দুর্ঘটনার পেছনে ভূমিকা রাখে। তাই ড্রাইভারদের কাউন্সিলিং দরকার। এক্ষেত্রে পরিবহন সমিতিগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে, তদারকির ওপর জোর দিতে হবে। লাইসেন্স বাণিজ্য রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মনে রাখা দরকার, যথাযথ উদ্যোগ ও যথা শিগ্গির তার শক্ত প্রয়োগ না করলে সড়ক দুর্ঘটনায় শীর্ষে থাকা জিম্বাবুয়েকেও পেছনে ফেলতে বাংলাদেশের খুব বেশি দিন সময় লাগবে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৪৮
আপনার মতামত জানানঃ