অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ব্যবসায়ীর ৪০ ভরি সোনা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে ভাঙ্গা থানার এক পুলিশ সদস্যসহ দুজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বাবুল হোসেন ও তার সহযোগী মেহেদী হাসান মৃদুল মুন্সীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
জানা যায়, গ্রেপ্তার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. বাবুল হোসেন (৩৫) ঢাকা জেলার ধামরাই থানার গাংগুটিয়া গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে। অপরজন ভাঙ্গা পৌরসভার হোগলাডাঙ্গী সদরদীর মিজানুর রহমান মুন্সির ছেলে মেহেদী হাসান মৃদুল মুন্সী (২৪)।
বুধবার সকালে পাপ্পু বিশ্বাস নামের ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ভাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করলে দুপুরে প্রধান আসামি সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বাবুল স্বীকারোক্তি দেন। পরে পৌরসভার কাপুড়িয়া সদরদীর গ্রামের একটি ভাড়া বাসা থেকে ছিনতাই হওয়া চারটি সোনার বারসহ মোট ৪০ ভরি সোনা উদ্ধার করে পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদী নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কামঠানা গ্রামের অসিত বিশ্বাসের ছেলে পাপ্পু বিশ্বাস (৩৭) একজন জুয়েলারি ব্যবসায়ী। যশোরে পিসি চন্দ্র নামে একটি বৈধ জুয়েলারি দোকান রয়েছে তার। পাপ্পু বিশ্বাস চলতি মাসের গত ৮ জুলাই ভাঙ্গা বাজারের সোনা ব্যবসায়ী পলাশ বণিকের নিকট থেকে ১১টি সোনার পিন্ডবার কিনেন। এরপর তিনি রাত ১টার দিকে দোকান থেকে বের হয়ে ভ্যানে করে ফিরছিলেন। এ সময় পাপ্পু জুয়েলারির দোকানের সামনে পৌঁছালে বাবুল হোসেন ভাঙ্গা থানার এএসআই হিসেবে কর্মরত আছেন বলে পরিচয় দেন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ভাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করলে দুপুরে প্রধান আসামি সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বাবুল স্বীকারোক্তি দেন। পরে পৌরসভার কাপুড়িয়া সদরদীর গ্রামের একটি ভাড়া বাসা থেকে ছিনতাই হওয়া চারটি সোনার বারসহ মোট ৪০ ভরি সোনা উদ্ধার করে পুলিশ।
তখন বাবুল হোসেন বাদী ও তার সঙ্গীর আসার কারণ ও নাম-ঠিকানা নেন। সব সঠিক বলার পরেও বাবুল হোসেন পাপ্পু বিশ্বাসের পকেট তল্লাশি করে দুই পকেট থেকে ১১টি পিন্ডবার হাতিয়ে নেন। তখন মৃদুল মুন্সী বাদীর হাতের মোবাইলটি নিয়ে নেন। বাদী ক্রয় করার কথা বললেও আসামিরা ৪টি পিন্ডবার রেখে ৭টি পিন্ডবার ফেরত দেয়। চারটি (৪০ তোলা) পিন্ডবারের মূল্য আনুমানিক ২৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা।
পরে মামলা ও আটকের ভয় দেখিয়ে আসামিরা মোবাইলটি হাতে দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে বলেন। বাদী ওই রাতে বাড়ি না গিয়ে তার আত্মীয় মহাদেব মৃধার বাড়িতে রাত কাটান।
পাপ্পু বিশ্বাস পরের দিন বাড়িতে পৌঁছে তার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করে মঙ্গলবার (১২ জুলাই) ভাঙ্গা থানায় এএসআই বাবুল হোসেন ও মেহেদী হাসান মৃদুল মুন্সীকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ পেয়ে তদন্তপূর্বক ঘটনার সত্যতা মিললে বুধবার (১৩ জুলাই) একটি মামলা রুজু করেন। সেই মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
আসামিদের তথ্য মতে, হুবহু চারটি ৯৯৯.৯ পিন্ডবার বাবুল হোসেনের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা বাজারের সোনা ব্যবসায়ী পলাশ বলেন, ছিনতাই হওয়া সোনার বারগুলোর ওজন প্রায় ৪০ ভরি, যার বাজার মূল্য ২৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক মিরুসহ ব্যবসায়ীরা এ চক্রের মূল হোতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
মামলার তদন্তকরী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মুন্তাছীর মারুফ জানান, তাদের ফরিদপুর আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা জানান, এ ঘটনায় ভাঙ্গা থানায় মামলা হয়েছে। এএসআই বাবুল হোসেন ও তার সোর্স মেহেদী হাসানকে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এএসআই বাবুল হোসেনের বাসা থেকে ৪০ ভরি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু আইন পরিপালন নিশ্চিত করা আর অপরাধ প্রতিরোধ বা দমনই নয়, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বলা হয়। এই বিভাগ যেকোনো দেশ ও জাতির একটি স্থায়ী সম্পদ। তারা আইন ও নীতি-নৈতিকতার ব্যাপারে উচ্চতর স্থানে থাকার কথা। অথচ সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে পুলিশের কিছু সদস্য বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এ প্রবণতা এতই বাড়ছে যে, সহকর্মীরাও যৌন হয়রানি, ধর্ষণ থেকে ছাড় পাচ্ছে না। কেউ কেউ হত্যা, ধর্ষণ ও ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে চাঁদাবাজি ও মাদকের সাথে সম্পৃক্ত থাকা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।
অপরাধবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ‘পুলিশে জবাবদিহিতার অভাবেই এ পরিস্থিতি। এটি কমাতে হলে দায়িত্বশীল অফিসারদেরও জবাবদিহিতা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ অন্যায় অনৈতিক কাজের কারণেই সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তারা বলেন, অপরাধী যেই হোক, অপতৎপরতা-অনৈতিক থেকে পুলিশ বিভাগকে মুক্ত করার জন্য শক্তিশালী জবাবদিহির ব্যবস্থা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়াও যুগোপযোগী আইনেরও প্রয়োজন। প্রয়োজন আইনের সংস্কার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা যদি অনৈতিক কাজ করে আর শাস্তি যদি ১০০ টাকা হয় অপরাধ দমন তো হবেই না, বরং উৎসাহিত হবে। আর অপরাধ দমনের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে যারা নিজেরাই অপরাধে লিপ্ত হয়, তাদের শাস্তি অধিকতর কঠোর হওয়া দরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭০৫
আপনার মতামত জানানঃ