ইউক্রেনে রুশ হামলার সাড়ে সাড়ে মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে রুশ বাহিনীর যেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তেমনি পশ্চিমা অর্থ ও অস্ত্রসহায়তা পাওয়ার পরও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউক্রেন।
তবে এ সময় যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ কার্যকর হয়নি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যুদ্ধ প্রলম্বিত হতে যাচ্ছে। আর এ পরিস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে ইউক্রেন সরকারকে। তাদের আশঙ্কা, প্রলম্বিত যুদ্ধের অবসাদ মস্কোর আগ্রাসন রুখতে ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমাদের আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে। পশ্চিমারাও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর হামলা চালানোর পর থেকেই ইউক্রেনকে সহায়তা করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অর্থ, অস্ত্র, গোয়েন্দা তথ্য ইত্যাদি নিয়মিত কিয়েভকে সরবরাহ করছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এ দেশটি।
আর এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ অর্থ ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে খরচ করতে হয়েছে, তার পরিমাণ আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পাঁচ বছরের খরচকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।
২০০৬ সালের শেষ নাগাদ তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৭.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করে। ২০১১ সালে সর্বোচ্চ ১১.৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত খরচ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
গত শুক্রবার বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনকে সহায়তার অংশ হিসেবে আরও ৪০০ মিলিয়ন ডলারের আরেকটি সঙ্কুচিত সামরিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
সর্বশেষ এ প্যাকেজটি ইউক্রেনীয় সামরিক কর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী সাজানো হয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিজয় ঘোষণার দিন কয়েক পরেই এ সাহায্য প্যাকেজ ঘোষণা করলো যুক্তরাষ্ট্র।
রাশিয়ান কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারগুলো রণক্ষেত্রের পশ্চাৎভাগে অবস্থান করে৷ এগুলো ধ্বংস করার জন্য হাউটজারের মতো ভারী আর্টিলারি ও হাই মবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (এইচআইএমএআরএস) দরকার বলে জানিয়েছে ইউক্রেন।
শুক্রবার পেন্টাগন জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে নিরাপত্তা সহায়তা হিসেবে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে আট বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ওয়াশিংটন আরও বেশি খরচের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বছরের শুরুতে পুতিনকে ঠেকানোর জন্য মার্কিন কংগ্রেস গতানুগতিক বৈদেশিক সাহায্য ও সামরিক সহায়তা হিসেবে ইউক্রেনে ৫৪ বিলিয়ন ডলার খরচের সিদ্ধান্ত নেয়।
এ তহবিলগুলো স্বাভাবিক চ্যানেলের মাধ্যমে ইউক্রেনে পাঠানো হবে। এছাড়া ন্যাটোভুক্ত দেশ ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকা মার্কিন বাহিনীকেও এসব তহবিলের আওতায় রাখা হবে।
এ সাহায্য তহবিলের বড় অংশ দ্রুতগতিতে এ বছর শেষ হওয়ার আগেই অভীষ্ট গ্রহীতাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
তবে মে মাসে ঘোষণা করা ৪০ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজে এমন সব সাহায্য আছে যেগুলো কার্যকর করতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। যেমন প্যাট্রিয়ট মিসাইলের বাড়তি ব্যাটারি সাহায্য, যা কিনা পোল্যান্ডের মতো কোনো মিত্র দেশে স্থাপন করা হতে পারে।
২০২২ সালে ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কী পরিমাণ অর্থ খরচ করবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। বাইডেন ও অন্যান্য পশ্চিমা নেতারা শপথ করেছেন তারা ‘যতদিন দরকার ততদিন’ ইউক্রেনকে সমর্থন করে যাবেন।
এদিকে, মে মাসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের তৃতীয় মাসে এসে দৈনিক ৯০ কোটি ডলার খরচ পড়ছে রাশিয়ার। সামরিক সংবাদের সূত্র থেকে এই তথ্য উদঘাটন করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আগ্রাসন চালিয়ে যেতে থাকলে রাশিয়ার অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।
রাশিয়ার খরচের তালিকায় রয়েছে ইউক্রেনে যুদ্ধরত সৈন্যদের অর্থ প্রদান; তাদের অস্ত্র, বুলেট ও ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ; এবং ক্ষতিগ্রস্ত সামরিক সরঞ্জাম মেরামতের খরচ। এছাড়াও রাশিয়া যুদ্ধে সময় যেসব অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে তার প্রত্যেকটির মূল্য প্রায় ১৫ লাখ ডলারের বেশি।
যুদ্ধের শুরুতে ধারণা করা হচ্ছিল রাশিয়া ইউক্রেনকে খুব দ্রুত পরাজিত করবে। তবে এখন পর্যন্ত তেমন আশানুরূপ সাফল্য পায়নি মস্কো। তাই এই পরিসংখ্যান থেকে আরও ধারণা করা হচ্ছে যে, রাশিয়ার উপর আরোপিত পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আগামীতে দেশটিতে বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি জন কিরবি বলছেন, রুশ বাহিনীর প্রতিটি পদক্ষেপেই ইউক্রেনিয়ানদের কঠোর প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছে। রুশরা ডনবাস ও দক্ষিণে খুব একটা অগ্রগতি করেনি পারেনি বলে বিশ্বাস তার। তাই সামরিক ব্যর্থতার কারণে রাশিয়াকে আর্থিক ক্ষতি ও প্রাণহানির জন্য চড়া মূল্য দিতে হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন কিরবি।
পুতিনের যুদ্ধ ঘোষণার দুই সপ্তাহ পর প্রকাশিত আরেক সমীক্ষায় দেখা যায় যুদ্ধে রাশিয়ার সরাসরি ক্ষতি হতে পারে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার। সিএনবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, এই ক্ষতি রাশিয়ার অর্থনীতিকে ৩০ বছরের জন্য পিছিয়ে দিতে পারে।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৪০
আপনার মতামত জানানঃ